পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) প্রধান ফটকের সামনে রোগীর ভিড়টা চোখে পড়ে। তবে ভেতর থেকে রোগীরা যে সংখ্যায় বেরুচ্ছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ঢুকছে। প্রধান ফটক পার হবার পরেই কাউকে নেওয়া হচ্ছে হুইল চেয়ারে, কাউকে স্ট্রেচারে, কেউবা আবার সিএনজি নিয়েই ঢুকে যাচ্ছে ভেতরে। কেউ আসছেন ব্যক্তিগত গাড়িতে। আবার কেউ কেউ ঢুকছেন স্বজনের কাঁধে ভর করে।
তবে গত কয়েকদিনে এ চিত্র অনেকটাই নিয়মিত হয়ে গিয়েছে সামনের চা-দোকানিসহ উপস্থিত ব্যক্তিদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মার্চের শুরুতেই রোগী বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। এ অবস্থায় রাজধানীতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইসিডিডিআর’বির চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার খাবার, বাসি-পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়া হবার মূল কারণ দূষিত পানি। খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য পানিও হতে হবে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। কিন্তু কোনওভাবে যদি খাবার পানির লাইনের সঙ্গে সুয়ারেজ লাইনের সংযোগ ঘটে যায় তাহলে পানি হয়ে পড়ে দূষিত।
এদিকে, গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেছেন, ৫ থেকে ১০ শতাংশ জায়গায় ওয়াসার পাইপ ফাটা থাকে। তবে অভিযোগ পাবার সঙ্গে সঙ্গে সেটা ঠিক করে দেন দাবি করে তিনি বলেন, কিছু জায়গায় সমস্যা হয়। তিনি নগরবাসীকে পানি ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা শহরে বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ চলছে। রাস্তাঘাট খোড়া হচ্ছে। সেখানে ওয়াসার পানির পাইপ ফেটে গিয়ে সুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে মিলে পানি আর বিশুদ্ধ থাকছে না। যার কারণে ঢাকার ভেতরে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে।
আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে নির্ধারিত বেডের বাইরে স্থাপন করতে হয়েছে দুইটি তাঁবু। এ হাসপাতালে প্রতিবছর এ সময়ে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হলেও গত ১৬ মার্চ থেকে ডায়রিয়া রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। সেদিন রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৫৭ জন। এরপর থেকে প্রতিদিনই রোগী বেড়েছে, রোগী কমছেই না। গত বুধবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৯৬১ জন রোগী।
১৭ মার্চ এক হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ এক হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ এক হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন ভর্তি হয়। ২২ মার্চে একদিনের হিসাবে এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল রেকর্ড।
এরপর ২৫ মার্চে এক হাজার ১৩৪ জন, ২৬ মার্চে এক হাজার ২৪৫ জন, ২৭ মার্চে এক হাজার ২৩০ জন। ২২ মার্চের রোগী সংখ্যার রেকর্ড ভেঙ্গে যায় ২৮ মার্চে। সেদিন একদিনে ভর্তি হয় এক হাজার ৩৩৪ জন। এরপর ২৯ মার্চ ৩১৭ জন, ৩০ মার্চ এক হাজার ৩৩১ জন আর ৩১ মার্চে রোগী ভর্তি হয় এক হাজার ২৮৫ জন।
১ এপ্রিলে এক হাজার ২৭৪ জন, ২ এপ্রিলে এক হাজার ২৭৪ জন, ৩ এপ্রিল এক হাজার ১৭১ জন, ৪ এপ্রিল এক হাজার ৮৩ জন, ৫ এপ্রিল এক হাজার ৩৭৯ জন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, রোগী সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যার নতুন রেকর্ড হবে।
এদিকে, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মুখপাত্র প্রফেসর ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা সংবাদ পাচ্ছি-গ্রীষ্ম আসার আগেই পুরো দেশে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে রোগী বেড়েছে বেশি। তিনি বলেন, ডায়রিয়াজনিত রোগ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আমরা একে মোকাবিলা করতে চাই।
তিনি জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এ রোগে আক্রান্ত ঢাকা জেলায় রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছয় হাজার ৫৮৯ জন। ২০২১ সালের মার্চে রোগী ছিল ছয় হাজার ৫৮৭ জন আর চলতি বছরের মার্চে সাত হাজার একজন। আর সারাদেশে মার্চে ডায়রিয়াতে ভর্তি রোগী ছিল এক লাখ ৭০ হাজার ২৩৭ জন।
ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ভালো করে হয়নি, পানির লেয়ার নিচে রয়েছে, গেøাবাল ওয়ার্মিং, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উপক‚লীয় এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের নিত্যদিনের জীবন যাপনে যে পানি ব্যবহার করা হয় সেই পানি ততটা জীবাণুমুক্ত বা বিশুদ্ধ না।
ফুড পয়জনিং, খাবারের মান খারাপ হলে ডায়রিয়া হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়রিয়া হবার মূল কারণ দূষিত পানি। শতভাগ নিরাপদ পানি না দেওয়া গেলে ডায়রিয়ার হাত থেকে মুক্তি নেই। ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমণ ছাড়া ডায়রিয়া হওয়া কিছুটা অসম্ভব।
ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা যত দ্রæত সম্ভব দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে এ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। বরং কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হলেই রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাই ডায়রিয়া দেখা দিলে দ্রæততার সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
শুধু ঢাকাও এর আশেপাশের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই ডায়রিয়ার প্রকোপ। সারাদেশেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এতে হাসপাতালগুলোতে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার বাড়ছে লাফিয়ে। গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলার ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১০৪। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, জেলার সব উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আগ্রাবাদের চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালসহ নগরীর সরকারি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীর ভিড় বাড়ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনিই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি অনুক‚লে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৭১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ১০৬ জন সদর হসাপতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী রয়েছে। গত বুধবার ছিল ১১৭ জন। তবে আসন সংকটের কারণে অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে রোগীসহ রোগীর স্বজনরা দুর্ভোগে পড়েছে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক সপ্তাহে শিশু বয়স্ক সহ ১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে আবহাওয়ার কারণেই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলে মন্তব্য করছেন চিকিৎসকরা।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ঔষধ আছে। আর সময়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।
মধুখালী (ফরিদপুরর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের মধুখালীতে সারা দেশের ন্যায় ডায়রিয়া প্রকোপ আকারে ধারণ করে। সারা দেশের ন্যায় মধুখালীসহ আশপাশের উপজেলয়া ডায়রিয়া ছড়িয়ে পরছে। এ কারনে রোগীর চাপ পড়ছে মধুখালী হাসপাতালে। মধুখালী সদর হাসপাতালের দেয়া তথ্যনুযায়ী মার্চ মাসে ১৬২ জন এবং গত ৬ এপ্রিলের দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৪ জন ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
এব্যপারে মধুখালী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. কবির সরদার জানান, ডায়রিয়ার চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। এসময় যদি ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে আমরা সতর্ক আছি। জনসাধারণকে বলবো খোলা খাবার না খাওয়া এবং খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।