Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইমরান খানের ভাগ্য নির্ধারণী রায় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৩৭ পিএম | আপডেট : ৭:৪৭ পিএম, ৭ এপ্রিল, ২০২২

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত এখন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের হাতে। বুধবার চতুর্থ দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রায় ঘোষণা করা হবে।
আজকের শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বান্দিয়াল বলেছেন, গত ৩ এপ্রিল সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজে যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা ভ্রান্ত ছিল। এটি পরিষ্কার। এখন আসল প্রশ্ন হল এর পর কী হবে?
তবে এই মুহূর্তে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে সে বিষয়ে আদালতকে পরামর্শ দেবেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) কৌঁসুলি এবং পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে’।
প্রধান বিচারপতি বান্দিয়ালের নেতৃত্বে বিচারপতি ইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম মিয়াঁখেল, বিচারপতি মুনিব আখতার এবং বিচারপতি মান্দোখেলের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ডেপুটি স্পিকারের রায়ের বৈধতা এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্টের সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে মামলার শুনানির সময় এই মন্তব্য করেছেন সিজেপি।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, আদালত ভবনের বাইরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার শুনানির সময় সবার শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান। এ সময় তিনি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ উন্মুক্ত আদালত কক্ষে জানাতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে আদালত কারও আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন না করেই আদেশ জারি করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খালিদ জাভেদ যুক্তি দেন, প্রধানমন্ত্রী ‘সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার’ এবং যে কারণে এনএ ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে। ‘সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারণ প্রধানমন্ত্রীর বর্ণনা করার দরকার নেই’ বলে দাবি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে সংসদ ভেঙে যাবে। ‘অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া একজন আইনপ্রণেতার মৌলিক অধিকার নয়’ বলেও যুক্তি দেন পাক অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, ভোট দেওয়ার অধিকার সংবিধান এবং সংসদের নিয়ম সাপেক্ষ। ‘এনএ স্পিকার যদি কোনও সদস্যকে বরখাস্ত করেন তারা সেটি নিয়ে আদালতেও যেতে পারবেন না’ বলে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান।
‘আপনি কী বলতে চাইছেন যে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া নিয়ম সাপেক্ষ বিষয়,’ প্রধান বিচারপতির এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনাস্থা প্রস্তাবসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছিল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সংসদীয় কার্যক্রম কতটুকু পর্যালোচনা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন’। এজিপি বলেন, স্পিকার যদি কম ভোট পাওয়া একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তাহলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
এ সময় বিচারপতি মুনিব আখতার বলেন, ‘স্পিকার হচ্ছেন সংসদের তত্ত্বাবধায়ক। ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির জন্য তিনি সেখানে নেই। স্পিকার কেবলমাত্র তার মতামত প্রদান এবং সদস্যদের উপেক্ষা করতে পারেন না’।
জবাবে এজিপি বলেন, সরকারের সংসদীয় ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংসদের মেয়াদের একটি সীমা রয়েছে, আইনপ্রণেতাদের নয়। একক ব্যক্তিরও আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী জোটের অনাস্থা প্রস্তাব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পেশ করা মাত্র তা খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। তার যুক্তি ছিল, বিদেশি শক্তির প্ররোচনায় আনা এই অনাস্থা প্রস্তাব আসলে সংবিধান-বিরোধী এবং তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এ নিয়ে কোনও ভোটাভুটি হতে দিতে পারবেন না তিনি।
এর পরেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সুপারিশে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। তখন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন বিলাওয়াল জারদারি ভুট্টো-সহ বিরোধীরা। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে সুপ্রিম কোর্ট।
বিরোধীদের দাবি, ইমরান খান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে যা করেছেন তা গণতন্ত্রের নামে জরুরি ব্যবস্থা জারি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের দাবি, ভোটাভুটির আগে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল চরম অসাংবিধানিক পদক্ষেপ।
গত রবিবার অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অ্যাসেম্বলির স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটা পর্যায় পর্যন্ত পদক্ষেপ নিতে পারে শীর্ষ আদালত, তার থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা তাদের হাতেও নেই।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট যদি ইমরানপন্থীদের পক্ষে রায় দেয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ মতো ৯০ দিন পরে সাধারণ নির্বাচন হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট যদি ইমরানের বিরুদ্ধে মত দেয়, তা হলে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ