পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে ডায়রিয়া পরিস্থিতি। বিগত দুই সপ্তাহ থেকে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দিন দিন চরম অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। প্রথমদিকে রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিলেও এখন তা দেশজুড়েই। সারাদেশের জেলা-উপজেলায় বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে ঘরে ঘরেই রয়েছেন ডায়রিয়া রোগী। যার ফলে হাসপাতালের বিছানায়ও ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না রোগীদের। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) দুটি তাঁবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হলেও তাতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় গত শুক্রবার আরেকটি তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে রোগী আসতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছরই গরম মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তবে এবার তা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। এর জন্য দূষিত পানি পান করার পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তন, অত্যধিক উষ্ণতা, অপরিচ্ছন্ন খোলা খাবার খাওয়াকেই দায়ী করছেন তারা। বিশেষজ্ঞরাও এও বলছেন, রাজধানীতে ওয়াসার পানির ওপর বেশিরভাগ মানুষ নির্ভরশীল। মাটির নিচ দিয়ে টানা সেই লাইন এবং পয়ঃনিষ্কাশন লাইন কোথাও কোথাও এক হয়ে যেতে পারে। আর সেই দূষণের কারণেই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মহাখালীর হাসপাতালে গত ১৬ মার্চ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৫৭ জন। এর পর যথাক্রমে ১৭ মার্চে এক হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চে এক হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চে এক হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চে এক হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চে এক হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ এক হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ এক হাজার ১৭৬ জন, ২৫ মার্চ এক হাজার ১৩৮ জন, ২৬ মার্চ এক হাজার ২৪৫ জন, ২৭ মার্চে এক হাজার ২৩০ জন, ২৮ মার্চে এক হাজার ৩৩৪ জন, ২৯ মার্চ এক হাজার ৩১৭ জন, ৩০ মার্চ এক হাজার ৩৩১ জন, ৩১ মার্চে এক হাজার ২৮৫ জন, ১ এপ্রিল এক হাজার ২৭৪ জন, ২ এপ্রিলে এক হাজার ২৭৪ জন এবং সবশেষ গত রোববার ভর্তি হয়েছেন ৬৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী। এর আগে ২০০৭ ও ২০১৮ সালের পর এবারই দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হন।
আইসিসিডিডিআরবিতে আসা বেশিরভাগ রোগীর অভিযোগ, ওয়াসার সরবরাহ করা পানির কারণেই ডায়রিয়া এবং কলেরার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন-ওয়াসার লাইনে যে পানি আসছে তা অনেকটা সবুজভাব, বাদামি বা হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত ও দূষিত। দীর্ঘক্ষণ ফুটালেও তা পানযোগ্য হচ্ছে না। গন্ধ থেকে যাচ্ছে। আবার অনেকেই অভিযোগ করছেন-লাইনের পানির সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে নানারকম ময়লাও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শনিরআখড়া, মানিকনগর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কড়াইল, মোহাম্মদপুর, মিরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি। ঐ সব এলাকায় এখন খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে ঐ এলাকার বাসিন্দারা যে পানি পান করছেন সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূষিত। এখন ওয়াসাকে দ্রুত ঐ সব এলাকায় খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকাই নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, মাদারীপুরসহ সারাদেশের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের। নির্ধারিত চিকিৎসক, নার্সসহ সাপোর্ট স্টাফে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে হাসপাতাল, সিনিয়র চিকিৎসকসহ অন্যরা রাতের পালায়ও কাজ করছেন।
এমতাবস্থায় ডায়রিয়া থেকে বাঁচার জন্য বাইরের খাবার না খাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে খাওয়া অথবা পানিতে ফিটকিরি দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে রাখতে হবে। আর অবশ্যই হাত ধুঁয়ে খাবার খেতে হবে। মূলত এই তিনটিই হচ্ছে ডায়রিয়া থেকে বাঁচার প্রধান উপায়।
এখন গরমের দিন। আবার রোজার মাসও চলছে। এসময়ে বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালেও প্রায় সমান সংখ্যক রোগী ভর্তি হন। চৈত্র দিনে গরমের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকাল সোমবার সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, ১৫টি উপজেলায় ১১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন রোববার রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৯৪ জন। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ১২৬ জন। ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে ডায়রিয়া মোকাবেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে নগরীতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা জানাতে পারেনি সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে পুনরায় ডায়রিয়ার বিস্তৃতি ঘটছে। গতকাল দুপুরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের ৬ জেলা ও ৪৩টি উপজেলা হাসপাতালে ৩১৯ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। এনিয়ে গত ৩ মাসে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৩ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে বলে জানা গেছে। পটুয়াখালী ও ভোলাতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
সরকারি হাসপাতালে আগত এসব রোগীর দ্বিগুনেরও বেশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ চিকিৎসকদের চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছে বলে ওয়াকিবাহল মহলের দাবি। গতবছরও দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলাতেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। মূলত তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় ছাড়াও অনাবৃষ্টি এবং উজানে প্রবাহ সংকটে গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে সাগরের লবনাক্ত পানি উঠে আসায় প্রতি বছরই এসময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। গতবছরও মার্চ থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এরমধ্যে মৃত্যু হয় প্রায় ২৫ জনের।
চলতি বছরও ইতোমধ্যে পটুয়াখালীতে দুজন ডায়রিয়া আক্রান্তের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা নিশ্চিত করেনি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় পরিচালক জানিয়েছেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মহানগরীর জেনারেল হাসপাতালে ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সোমবারেও ১৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৩ শতাধিক মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। পাশাপাশি প্রায় পৌনে ২ লাখ ব্যাগ আইভি স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় অন্যসব ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীও মজুদের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।