Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ডায়রিয়া

চট্টগ্রামে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে গরমের তীব্রতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি পানের কারণে ঢাকায় এর প্রকপ সবচেয়ে বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআরবি’তে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪০১ জন ডায়রিয়া রোগী। আর গত ৭ দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার আইসিডিডিআরবি ও বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় গত কয়েকদিনে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালটির তথ্য মতে, শুক্রবার ২৫ মার্চ সকাল ৮টা থেকে শনিবার ২৬ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ৪০১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল শনিবার আইসিডিডিআর,বির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফ হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রতিটি ইউনিয়নে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে।

জানা যায়, গত শুক্রবার (২৫ মার্চ) সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও ১ হাজার ১৩৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরপর রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত নতুন ৪৮ জন, ২টা পর্যন্ত ৭৪ জন, ৩টা পর্যন্ত ৯৮ জন, ৪টা পর্যন্ত ১২০ জন, ভোর ৫টা পর্যন্ত ১৪০ জন, ৬টা পর্যন্ত ১৬১ জন, ৭টা পর্যন্ত ২০২ জন এবং সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, বাসাবো, কদমতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকার মানুষ বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, বাড্ডা, উত্তরখান, উত্তরা ও রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকেও রোগী আসছেন। হাসপাতালটিতে গত ১৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত ২১ হাজার ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

হাসপাতালটির মিডিয়া বিভাগ সূত্র জানায়, আগের দুই দিনে হাসপাতালটিতে ২ হাজার ৪০৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত এক হাজার ১৭৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি-তে এসে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দিনও এক হাজার ২৩৩ জন রোগী ভর্তি হন।

এর আগে গত ২৩ মার্চ হাসপাতালটির মিডিয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছিল, গত ৭ দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এরকমই একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, যা একেবারে মহামারির রূপ ধারণ করে। সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৈনিক ১২০০ থেকে ১৩০০ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছেন। যাদের অধিকাংশকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা। হাসপাতালে যায়গা না হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।

আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বছরে দুইবার বাড়ে। শীতের সময় আর গরমের সময়ে। সাধারণত প্রতিদিন সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ রোগী থাকলেও রোগী বাড়লে সর্বোচ্চ এক হাজারের মতো হয়। কিন্তু এবারই এটা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

হঠাৎ ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে ডা. বাহারুল আলম বলেন, গরমে ওই জীবাণুটি অনুকূল পরিবেশ পায়। এই সময়ে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া গরমের সময় অনেকে অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের পরামর্শ হলো, বাইরের কোনো খাবার খাবেন না। যেখান সেখান থেকে পানি খাবেন না। পানি যদি খেতে হয় তাহলে সেটি ফোটানো হতে হবে। অন্যথায় নিশ্চিত হতে হবে পানি জীবাণুমুক্ত। সেইসঙ্গে করোনাকালীন সময়ের দুই বছরে হাত ধোয়ার যে একটা ভালো অভ্যাস তৈরি হয়েছিল, এটা বজায় রাখতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আইসিডিডিআর,বি-র ঢাকা ও চাঁদপুরে অবস্থিত মতলব হাসপাতাল প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাবনায় প্রতিটি ইউনিয়নে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। গতকাল রোববার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল-মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। এ অবস্থায় প্রতি ইউনিয়নে ১টি এবং প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে মেডিক্যাল টিম পুনর্গঠন করে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

ডায়রিয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী মজুদ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয় ওই চিঠিতে।
জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এই সময়ে সাধারণত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে আমরা যাতে তা কাটিয়ে উঠতে পারি সেজন্যই এই প্রস্তুতি।

চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া অনেকেই অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বাইরের কোনো খাবারের পাশাপাশি যেখান সেখান থেকে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডায়রিয়া

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ