Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইমরানকে সরাতে প্রস্তুত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সেনা ও বিরোধী জোট

পাক-সেনাপ্রধানের কোলে চড়ে আসছেন শাহবাজ

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ২:৪৪ পিএম | আপডেট : ৫:৪৯ পিএম, ২ এপ্রিল, ২০২২

পাকিস্তানের বর্তমান প্রধামন্ত্রী ইমরান খানের পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার গৌরবের সাথে শেষ হয়েছিল। কিন্তু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ইমরান, যিনি ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, ৩ এপ্রিল একটি অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। সে সম্ভবত ক্ষমতাচ্যুত হবেন। ইমরান একটি ‘বিদেশী-আমদানিকৃত ষড়যন্ত্র’কে দায়ী করেছেন। এবং তিনি দাবি করেছেন যে, রাশিয়া সফর করার জন্য পশ্চিমারা (যার দ্বারা সম্ভবত তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেছেন) তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতাকে উস্কে দিয়েছে। এর মধ্যে ইমরান খান পাকিস্তানের জেনারেলদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হারিয়েছেন। পাকিস্তানি সেনা প্রধান, এবং মার্কিন মদদপুষ্ট একটি ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবির সুযোগটি গ্রহণ করেছে, এবং এখন তারা ইমরান এবং তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। ইমরানের খানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পছন্দের তালিকার শীর্ষে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন শেহবাজ শরিফ। শেহবাজ নির্বাচনে জয়লাভ করলে, তা পাকিস্তানের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রাজনৈতিক বংশগুলিকে উচ্ছেদ করতে ইমরানের ব্যর্থতার নিদর্শন হবে। কিন্তু কে এই শেহবাজ শরিফ?
শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। ১৯৯০ সালে যখন নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার প্রথম নির্বাচনে জয়ী হন, শেহবাজ দেশটির সাধারণ পরিষদে নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে তার ভাইয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় মেয়াদে শেহবাজ পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল এবং শক্তিশালী প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু দু’বছর পর যখন নওয়াজ তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধানকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করেন, তখন পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী উভয় ভাইই সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। তাদের কারারুদ্ধ করা হয় এবং তারপর ২০০৭ সাল পর্যন্ত সউদী আরবে নির্বাসিত করা হয়।
২০০৭ সালে দেশে আসার পর শরীফ ভ্রাতৃদ্বয় তাদের পূর্বের পদে আসীন হন। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, শেহবাজ নতুন রাস্তা এবং মেট্রো সিস্টেম তৈরির ওছিলাতে অঢেল সম্পদের মালিক হন। এবং যখন নওয়াজকে আবারও ২০১৭ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয় (এইবার দুর্নীতির অভিযোগে), শেহবাজই তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেহবাজ ইমরানের কাছে হেরে যান। তারপর থেকে তিনি পাকিস্তানের বিরোধী দলের নেতা এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) দলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাইয়ের মতোই শেহবাজও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত। তার ছেলে হামজা শেহবাজ পাঞ্জাবের বিরোধী দলের নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন। ২০২০ সালে শেহবাজ এবং হামজা উভয়কেই অর্থ-পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, এবং ব্রিটেন পরিবারটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি জব্দ করেছিল। ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির শরীফদের বিরুদ্ধে প্রমাণ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হওয়ার হলে ব্রিটেন মামলাটি বাতিল করে। কিন্তু এটি এখন একটি খোলা তথ্য যে, অতি সম্প্রতি আসন্ন অনাস্থা ভোটকে সামনে রেখে পশ্চিমা মদদপুষ্ট শেহবাজ এবং হামজার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বারবার স্থগিত করা হয়েছে।
পাকিস্তানে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য দেশটির সামরিক বাহিনী, তথা জেনারেলদের সমর্থন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও শাহবাজ এর আগে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করায় তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনীর সাথে বিরোধ থেকে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন, এবং নেতা নির্বাচিত হলে জেনারেলদের সাথে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শোনা যায় যে, তিনি সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন এবং বাজওয়ার মেয়াদ বাড়াতে বিলম্ব করার জন্য ইমরানের তীব্র সমালোচনা করেন।
তবে, শাহবাজ যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তাকে সফল হতে সেনাবাহিনীর সমর্থনের চেয়ে আরো অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে। তাকে একটি কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার সাথে লড়াই করতে হবে। পাশাপাশি, পাকিস্তানের রাজনৈতিক বংশগুলির অন্যতম বংশধর, নিহত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পুত্র বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও এখন দেশটির শীর্ষ পদের জন্য আগ্রহী। যদিও আপাতত বিলওয়াল-জারদারি শেহবাজকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্ত তারাও ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একই অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন। পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এঁটা তাদের ভুলে গেলে চলবে না। ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হলে তাদেরও একই পরিণতি মুখোমুখি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।



 

Show all comments
  • করিম উদ্দীন ২ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৫৭ পিএম says : 0
    সকল ক্ষমতা আল্লাহর। তিনি চাইলেই কেবল ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হবেন। না চাইলে নয়। আর তিনি যদি চান সেটাও কল্যাণের জন্য হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুর রহিম ২ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৫৯ পিএম says : 0
    পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আপাদমস্তক দূর্নীতিবাজ। তারা কোনো সৎ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় থাকতে দিতে চায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Naimul Islam ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০২ পিএম says : 0
    To date, no Pakistani Prime Minister has completed his term. Corrupt armies have always wanted their obedient leadership in power. Whoever came to power has tried to maintain his identity. The army has ousted them from power.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Naimul Islam ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৭ পিএম says : 0
    Imran Khan spoke of world Muslim nationalism, Islamic phobia, Palestinians, Kashmiris. No other state leader has spoken like this on the world stage before. But he is a Clean Saved, Oxford graduate. Therefore, the West could not give him the label of militant, fundamentalist. This is the cause of their anger. So they have been trying to oust him for a long time.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৪৬ পিএম says : 0
    পাকিস্তানের জনগণ এই বেপারে রাস্তায় নেমে পতিবাদ করা জরুরি,অন্যথায় সব কিছু শেষ হবে এবং পাকিস্তান ধবংসের দিকে চলে যাবে,
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful Islam ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১০ পিএম says : 0
    In the world, Modi is dark to the bright light of Imran's education, personality and image. It is the cause of India's headaches. So now they want to cut off the head.
    Total Reply(0) Reply
  • আব্দুস সালাম গফফার ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১১ পিএম says : 0
    তাতে দোষের কি, ভাঙ্গেত ভাঙ্গুক। পাকিস্তান ত ১৯৭১ ভেঙ্গে গেছে। পরবর্তিতে ভেঙ্গেছে সম্মিলিত রাশিয়া। আজকে যেখানে ৭/৮ এর বেশী রাষ্ট্র। বর্তমানে বড় দেশ আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত আর চীন। দেখা যাক এদেরও ভবিষ্যত কি আছে ভাগ্যে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৪৭ পিএম says : 0
    পাকিস্তানের জনগণ এই বেপারে রাস্তায় নেমে পতিবাদ করা জরুরি,অন্যথায় সব কিছু শেষ হবে এবং পাকিস্তান ধবংসের দিকে চলে যাবে,
    Total Reply(0) Reply
  • ramiz uddin ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:১৪ পিএম says : 0
    The misfortune of Muslims is that they cannot retain the leadership they deserve. That is why a competent leader does not appear in the Muslim society. If it rarely happens. However, they removed it themselves. After the removal of Bangabandhu and Shaheed Zia, such a strong leadership has not been formed in Bangladesh. Pakistan is going to do so today. Pakistan will have to pay the price for this.
    Total Reply(0) Reply
  • Abir ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৫৫ পিএম says : 0
    Shameless Pakistan army and shameless Pakistani politicians. Bunch of looteras!
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৫৬ পিএম says : 0
    It's a matter of great sorrow and grief what Pakistani people are facing today. I am really speechless after seeing what army and these corrupt politicians are doing against honest leader like Imran Khan.
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Hosen ২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৫৬ পিএম says : 0
    Regardless of what happens to prime minister Imran Khan he will always remain and historical figure from Pakistan who try to salvage the fate of a sinking nation. He was a great spoke person of Muslim Ummah. May Allah strengthen him.
    Total Reply(0) Reply
  • মামুনুর রশিদ ২ এপ্রিল, ২০২২, ৭:০৯ পিএম says : 0
    পাকিস্তানের প্রত্যেকটি নাগরিকের উচিত অনাস্থা ভোটের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন করা তবেই দেশের জন্য মঙ্গল হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ