Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অগ্নিদগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা পাবে উপজেলায়

‘মুজিব কর্নার’ ও ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’ উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:২৯ এএম

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও সতর্কতার সঙ্গে দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের ব্যাপারে সুপরিকল্পিতভাবে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার উপজেলা পর্যায়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

গতকাল শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি (এসএইচএনআইবিপিএস)-এ সিক্সথ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন প্লাস্টিক সার্জারি-২০২২ এবং ‘মুজিব কর্নার’ ও ‘বঙ্গবন্ধু গ্যালারি’ উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জন অব বাংলাদেশ (এসপিএসবি) অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উপজেলা পর্যায়ে দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। সব উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে এবং ওই কমপ্লেক্সগুলোতে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় এই বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার প্রতিটি বিভাগে পৃথক ও স্বনির্ভর বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ফরিদপুর জেলায় একটি ১০০ শয্যার প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিট স্থাপনের কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, প্রতিটি বড় জেলায় এ ধরনের ইউনিট প্রয়োজন। ২০১৩-২০১৪ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি জামায়াতের জোটের পেট্রোল বোমা হামলায় নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা কখনোই জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেনি।

সরকার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল (ডিএমসিএইচ)-এ ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিট স্থাপন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ওই সময়ে ওই সব অগ্নিদগ্ধ মানুষকে চিকিৎসা দেয়ার মতো কোনো আধুনিক চিকিৎসাসেবা ছিল না। পরে ডিএমসিএইচ-এ আরো একটি বার্ন ইউনিট স্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একটি পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট ইউনিট স্থাপন করেন।

তিনি আরো বলেন, এছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু থানা পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকার ২০১৮ সালে সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা সম্বলিত ৫০০ শয্যার শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণ করেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা ছিল না। সেজন্য আমরা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণ করে মানুষের জন্য আধুনিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করি। দেশে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতাল চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা এবং দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি সৃষ্টিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না। তাই, সরকার বিশেষত আধুনিক বিজ্ঞানের ওপর গবেষণা পরিচালনায় সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলতে সরকার দেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে এবং পরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে আরো তিনটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশে অনেকগুলো মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করে। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে; যাতে করে দেশের মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পেতে পারে।

এ সময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ও এসপিএসবি’র সাবেক সভাপতি ডা. সামন্ত লাল সেন এবং এসপিএসবি মহাসচিব ডা. হেদায়েত আলি খান। এসপিএসবি সভাপতি ও এসএইচএনআইবিপিএস এর পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন।

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সর্বদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। কিন্তু যদি কোনো বহিঃশত্রু হামলা করে তাহলে আমরা যথাযথভাবে মোকাবিলা করবো।

গতকাল শরিয়তপুরের জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূলনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী।’ কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, শিক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্য তাদের নিজ নিজ বুদ্ধি, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে তাদের সুনাম বৃদ্ধি করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এবং প্রায় ১৯ থেকে ২০ বার ক্যূ সংঘটিত হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও সৈন্য নিহত হয়। সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, সরকার ১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশনস ট্রেনিং অ্যান্ড আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়াও সরকার ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে প্রথম নারী অফিসারদের নিয়োগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে তার সরকার সেনাবাহিনীতে আধুনিক পদাতিক গেজেট অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনি মাওয়া ও জাজিরা সেনানিবাসের নামকরণ তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের নামে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ করার জন্য সেনা প্রধান এবং সেনা সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বড় হওয়ার পর তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের ইচ্ছা ছিল বড় হলে আর্মি অফিসার হওয়ার।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২০০১ সালে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও পরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে এটা বন্ধ করে তারা সেতুটি এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকার সেতু নির্মাণে এগিয়ে যায়, কিন্তু মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগে সেতুর কাজে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্ব ব্যাংক। আমি তাদের কঠোর জবাব দেয়ার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আজ আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ও সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের চৌকস কন্টিনজেন্টের রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদও বক্তব্য রাখেন।

নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এবং সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল শাহীনুল হক শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্টের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ রাসেল সেনানিবাসের ওপর একটি অডিও-ভিজুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।



 

Show all comments
  • চৌধুরী হারুন আর রশিদ ৩০ মার্চ, ২০২২, ২:৩৭ এএম says : 0
    জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ৩০ মার্চ, ২০২২, ২:৩৮ এএম says : 0
    এই মহতী উদ্যোগের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি
    Total Reply(0) Reply
  • মমতাজ আহমেদ ৩০ মার্চ, ২০২২, ১:২৩ এএম says : 0
    খুবই ভালো উদ্যোগ
    Total Reply(0) Reply
  • Alo Ashraf ৩০ মার্চ, ২০২২, ৩:০৪ এএম says : 0
    May Allah bless our honorable Prime Minister and her family.
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqur Rahaman ৩০ মার্চ, ২০২২, ৩:০৪ এএম says : 0
    গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়ান । এখন ধনীরাই সম্পদের মালিক হইতেছেন। গরীব আরও গরীব হইতেছে। দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত দান করুন আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম মোস্তফা ৩০ মার্চ, ২০২২, ১০:৫৯ এএম says : 0
    অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাতা কলমে ডাক্তার থাকলেও রোগীরা সেখানে গিয়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ ডাক্তাররা প্রাইভেট হসপিটাল নিয়ে ব্যস্ত থাকে
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ৩০ মার্চ, ২০২২, ১১:০৬ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অনেক ভালো ভালো প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, এখন শুধু দুর্নীতি বন্ধ হলেই দেশ অনেক এগিয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • কৌশিক সরকার ৩০ মার্চ, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
    সরকার শক্ত অবস্থানে গেলে আমাদের দেশেও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ৩০ মার্চ, ২০২২, ১১:০৭ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযাহ প্রদান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • সোলায়মান ৩০ মার্চ, ২০২২, ১১:০৮ এএম says : 0
    এভাবে আপনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Dr. Miah Muhammad Adel ৩০ মার্চ, ২০২২, ১০:২০ পিএম says : 0
    Congratulations Premier for this decision. It is past due.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ