পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফিটনেস নেই তবুও রাজপথে আছে। চলার যোগ্য নয় তারপরেও চলছে। রাজধানীতে ফিটনেসবিহীন ও লক্করঝক্কর গাড়ির সংখ্যা গত এক বছরে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। দফায় দফায় কর মওকুফের পরও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। অথচ এসব গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না বলে সংশোধিত নতুন সড়ক আইনে স্পষ্ট বলা আছে। আইনে বলা আছে, ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদÐ বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদÐ বা উভয়দÐে দÐিত হবে।
বিআরটিএ জানিয়েছে, দেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি পাঁচ লাখের বেশি। দফায় দফায় এসএমএসের মাধ্যমে ফিটনেস হালনাগাদের জন্য নিয়মিত তাগাদা দেয়া হলেও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। মাঝে মাঝে বিআরটিএর অভিযান চালালেও সড়কে এসব ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়িতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বারবার অভিযানে নেমেও কমছে না এ ধরণের গাড়ির সংখ্যা।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে চলেছে এসব গাড়িই। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির পরিবহন মালিক। সেবা তো দূরের কথা যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাথে ভোগান্তিতো আছেই। এরকমের ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা। যার ফলে গত দুই বছরে দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৭০ হাজার কোটির বেশি। ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচলের কারণেই প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর গড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। আহত হচ্ছে দ্বিগুণ।
সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চাঁদাবাজি বন্ধ করা। চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া, রুটপারমিট ও ফিটনেস কঠোরভাবে পরীক্ষা করা। সড়কের অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সড়ক আইন পুরোপুরি কার্যকরের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানোর পরও তা কার্যকর না হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করার দাবিও র্দীঘদিনের। কিন্তু এসবে চিন্তা নেই সংশ্লিষ্টদের।
বিগত দিনে বিআরটি এর উদ্যোগে রুট পারমিটবিহীন ও রুট পারমিটের মেয়াদহীন বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করলেও এই অভিযান কখনো জোরালো হতে দেখা যায়নি। অনেক নামিদামি পরিবহনের বাস-মিনিবাস রুট পারমিট না নিয়েই ঢাকা সিটিতে চলাচলের করছে। রাজধানীর গুলিস্তান, প্রগতি স্মরণী হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত চলে অনাবিল নামের পরিবহন। এই বাসের অবকাঠামো জরাজীর্ণ, এ অবস্থায় চলছে সড়কে। রাজধানীর অনেক রুটেই এখন এমন যানবাহনের ছড়াছড়ি। বাসের সামনে পেছনে জরাজীর্ণ, রং চটা। হেডলাইট বেধে রাখা হয়েছে, জানালার গøাসও ভাঙা, ভেতরের আসনের অবস্থা করুণ। ফিটনেস সনদ রয়েছে কিনা তার সদুত্তর নেই।
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী ৮ নম্বর বাসের অবস্থা সবারই জানা। গতকাল রাজধানীর মৌচাক মোড়ে যানজটে আটকে থাকা এরকম একাধিক বাস দেখা গেছে। এসব বাসের অগ্রভাগ ও পেছনের অংশ এবরোখেবড়ো, বাসের কোনটির দুই পাশের জানালার কাঁচ নেই। ফ্রেম বাঁকাচোরা, কোনটির লুকিংগøাস নেই, কোনটির সামনে ও পেছনের বাম্পার খোলা, কোনোটির জানালার কাঁচ অর্ধভাঙ্গা হয়ে ঝুলে আছে। আবার কোনটির বডি দুমড়ানো-মুচড়ানো।
প্রগতি সরণি রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী তুরাগ পরিবহন, আকাশ, রাইদা, অনাবিল, মক্কা, অছিম, আসমানিসহ বেশিরভাগ গণপরিবহনের কোনো বাসেরই অবস্থা ভালো নয়। যাত্রীঠাসা কোনো কোনো বাসের পেছনের সীটে বসা যাত্রীদের পা বাইরে থেকে দেখা যায়। ‘সুপ্রভাত পরিবহনের’ গাড়িচালক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ফিটনেস তো গাড়িতে নেই। মনে করেন হাওয়ার ওপর চলে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান আসলে কতোটা কার্যকর হচ্ছে ঢাকার রাস্তায় এসব গাড়ি দেখেই তা সহজে বোঝা যায়।
পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বিআরটিএ’র অভিযান শুরু হলে তখন এসব গাড়ি ঢাকার আশপাশে পাঠানো হয়। অভিযান শেষ হলে এগুলো ধীরে ধীরে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এজন্য ট্রাফিক পুলিশের সাথে মালিকপক্ষের ‘অলিখিত চুক্তি’র কথাও বলেছেন কেউ কেউ। তবে ট্রাফিক পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শুধু যাত্রাবাড়ী-গাজীপুর রুটের বাস নয়, রাজধানীর প্রায় সব রুটের বেশিরভাগ কোম্পানির গাড়িই লক্কর-ঝক্কর মার্কা। এতে ভোগান্তি, শঙ্কা আর বিড়ম্বনা নিয়েই পথ চলতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে তিন দফায় জরিমানা ছাড়াই কর দিয়ে ফিটনেস হালনাগাদের নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপরও গাড়ির মালিকদের একটি অংশ নিয়মিতভাবে কর দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ অভিযান জোরদারের পাশাপাশি অন্য তদারকি কার্যক্রমও হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সারোয়ার আলম বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র নির্বাহী হাকিমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি চলাচলের অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অর্থদÐ করা হচ্ছে, ডাম্পিংয়েও পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ভারী গাড়ির ফিটনেস তুলনামূলকভাবে কম। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী গাড়ি বাস ও ট্রাকের সংশ্লিষ্টতা ছিল ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
ফিটনেসহীন এমন গাড়ি বেড়ে যাওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূরকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, সারাদেশে পরিবহন সেক্টরে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। রাজধানীর অবস্থা আরও খারাপ। ঢাকার যানজটের প্রধান উৎস এ ধরণের সব গাড়িরই যে ফিটনেস নেই তা কিন্তু নয়। অভিযানে নামলে দেখা যাবে যে গাড়িকে আমরা আনফিট বলছি তারও ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে। তার অর্থ হলো, এগুলোকে না দেখেই ফিটনেস দেয়া হয়েছে। এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পরিবহন সেক্টরের এই বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য বাস রুট ফ্রাঞ্চাইস (বিআরএফ) পদ্ধতির বিকল্প নেই। এই পদ্ধতিতে সীমিত সংখ্যক বাস কোম্পানীর তত্ত¡াবধানে সীমিত সংখ্যক বাস রুট চালু করলে যাত্রী সেবার মানও বাড়বে, বিশৃঙ্খলাও দূর হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। গাড়ি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ফিটনেসবিহীন গাড়ি উচ্ছেদ করা সম্ভব। শুধু বাস নয়, লেগুনাসহ বহু অননুমোদিত গাড়ির ফিটনেস নেই। এদিকে সড়ক পরিবহন নতুন আইন অনুযায়ী ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন মোটরযান ধ্বংস বা চিরতরে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিআরটিএ।
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। ১০ বছর বা এর বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন গাড়ির তথ্য বিআরটিএ’র ভান্ডার থেকে ধাপে ধাপে মুছে ফেলা হচ্ছে। ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে বিআরটিএ’র অননুমোদিত গাড়ি রয়েছে কমপক্ষে ১০ লাখ। এর মধ্যে নছিমন, করিমন ও ভটভটির মতো যানবাহনও আছে। এগুলোর নিবন্ধন ও ফিটনেস নেই। দুর্ঘটনার সঙ্গে এসব বাহন জড়িত। কম গতিসম্পন্ন এসব বাহনের হিসাব বিআরটিএ সংরক্ষণ করছে না। এটি করলে ফিটনেসহীন গাড়ির সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যেত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।