পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে ষ রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী, জয়দেবপুর থেকে রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে
‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী / আমার সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। কবির এই কবিতার নৌকার মতোই দশা হয়েছে রাজধানীর মহাখালীস্থ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) অবস্থা। ধান নয়, হাসপাতালটি ডায়রিয়া রোগীতে ভরে গেছে। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সিটের সংকুলান না হওয়ায় বাইরে তাঁবু টানিয়ে রোগীদের বিছানা পাতানো হয়েছে। সেখানেই চলছে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, প্রতি ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে রোগী আসছেন। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ডায়রিয়ার প্রকোপের খবর পাওয়া না গেলেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে এসেছে; এর মধ্যে হঠাৎ করে প্রকোপ বেড়ে গেছে ডায়রিয়া রোগের। গত এক সপ্তাহে পানি বাহিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৮ হাজারেরও বেশি রোগী রাজধানী ঢাকার মহাখালীস্থ আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩শ’ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা।
জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়ারিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে খোলা জায়গার বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়ারিয়ার বিস্তার এবার ব্যাপক। মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪ মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এতো রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি।
দেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চৈত্র মাসে হঠাৎ অতিরিক্ত গরম এবং রাজধানীতে সাপ্লাইয়ের দূষিত পানি খাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় পানিতে দুর্গন্ধ ও আয়রন অনেকেই ফুটিয়ে পান করেন না। বাইরে যেখান-সেখান খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করা এখন নিয়মিত হচ্ছে। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পান করতে হবে। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ডায়রিয়া এড়াতে পানি ফুটিয়ে বা বড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ করে খেতে হবে। হাত না ধুয়ে কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়। রাস্তার পাশের খাবার ও বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেই চিকিৎসার জন্য রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ছুটছেন রাজধানীর মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে। হঠাৎ করে রোগী এতো বেড়ে গেছে যে হাসপাতালে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। হাসপাতালের মূল ভবনে ঠাঁসা রোগী। নতুন রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। তাই রোগীর চাপ সামলাতে বাইরে তাঁবু টানিয়ে করা হয়েছে শয্যার ব্যবস্থা। প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রচÐ ভিড় দেখা গেছে। সিটের বাইরেও মেঝেতে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ডায়রিয়া পরিস্থিতি সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। দুপুরে মো: ফজল মিয়া নামক এক ডায়রিয়া রোগীকে আইসিডিডিআরবিতে আনা হয়। এ সময় তিনি তীব্র পানিশ‚ন্যতাসহ মারাত্মকভাবে ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। দুই মিনিটের মধ্যে তার পানিশ‚ন্যতা রোধে চিকিৎসা শুরু হয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই ফজল মিয়ার অবস্থার উন্নতি হয়। এ সময় তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার ভূঁয়সী প্রসংশা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে গত ৭ দিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা জানান, ২২ মার্চ রাতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭২ জন, এর পরের দিন ২৩ মার্চ ১ হাজার ৩৩ জন নতুন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। আবার গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত রোগী বাড়তেই থাকে। এর আগে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে ডায়রিয়ার এ রকম প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। মহামারির মতো রূপধারণ করে ওই বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
হঠাৎ ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, গরমে ডায়রিয়ার জীবাণুটি অনুক‚ল পরিবেশ পায়। এ সময়ে তারা মানুষের শরীরে বেশিক্ষণ ফাইট করে বাঁচতে পারে। তাছাড়া গরমের সময়ে জীবাণুটি বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, অনেক বেশি ছাড়িয়ে থাকে। মানুষ গরমের কারণে পিপাসার্ত হয় এবং পানি পানের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে না। এ দুটি কারণ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বছরে দুইবার শীত ও গরমের সময়ে বাড়ে। এ সময় দৈনিক গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী থাকলেও সর্বোচ্চ এক হাজারের মতো হয়। কিন্তু এবার এটা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীর কোনো এলাকা থেকে বেশি সংখ্যক রোগী আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে কোনো এলাকাকে আমরা স্পেসিফাই করতে পারব না। সব জায়গা থেকেই রোগী আসছে। তবে, প্রথমদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণখান এলাকার রোগীর সংখ্যা একটু বেশি ছিল। আবার ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী, জয়দেবপুর এসব এলাকা থেকেও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন।
আইসিডিডিআরবি’র স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, ডায়রিয়া এড়াতে করোনাকালের মতো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিশেষ করে বারবার হাত ধোয়া, পানি ফুটিয়ে পান করা এবং কোনোভাবেই রাস্তার বাসি খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। তাহলে মুক্তি মিলবে ডায়রিয়া থেকে। এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করা এক মেডিকেল অফিসার বলেন, ১২ বছর ধরে আইসিডিডিআরবিতে কাজ করছি। এখনকার মতো এত রোগী এর আগে দেখেননি। এই কেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর থেকে এত রোগী কখনো ভর্তি হননি। দিনে রোগী ভর্তি ১ হাজার ২০০ অতিক্রম করে যাচ্ছে।
আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। তবে বড়দের ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৩৬ শতাংশ রোগী কলেরায় আক্রান্ত। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ডায়রিয়া, কলেরাও হচ্ছে। কাউকেই বিনা চিকিৎসায় ফেরানো হচ্ছে না। আর এ কারণে মূল হাসপাতালের বাইরে তাঁবু করা হয়েছে।
চট্টগ্রামেও বাড়ছে প্রকোপ : এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গরমের শুরুতেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, ডায়রিয়া বৃদ্ধির এ হার স্বাভাবিক। সামনের দিনগুলোতে এ হার বাড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে তার একটি অংশ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। নগরীর লালখান বাজার, মতিঝর্ণা, আমবাগান, ঝাউতলা, কদমতলী, তুলাতলী, বাকলিয়া বৌবাজার, হালিশহর নয়াবাজারসহ বিভিন্ন বস্তি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এখনো সুপেয় পানির সঙ্কট রয়েছে। এসব এলাকায় ডায়রিয়ার হারও বাড়ছে।
তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগই বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। অবস্থার অবনতি হলেই হাসপাতালে যাচ্ছেন রোগীরা। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ডায়রিয়া রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও ডায়রিয়া আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ তেমন বাড়েনি। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির হার স্বাভাবিক রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৭৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। রোগী ভর্তির এ হারকে স্বাভাবিক বলে জানান ডা. শফিউর রহমান। উপজেলা পর্যায়ে সুপেয় পানির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় এবং এখনো চৈত্রের খরতাপ শুরু না হওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে না বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে এটা এখনো বলা যাবে না। স্বাভাবিক সময়ের মত হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগী আসছে। তবে সামনের দিনগুলোতে গরমের তীব্রতা বাড়লে এবং সুপেয় পানির সঙ্কট সৃষ্টি হলে ডায়রিয়া রোগী বাড়বে। ডায়রিয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ওরস্যালাইনসহ পর্যাপ্ত পানি পান করলে বাড়িতেই ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হওয়া যায়। ডায়রিয়া প্রতিরোধে যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন, জিঙ্ক ট্যাবলেটসহ ওষুধ সামগ্রী এবং হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।