নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দুর্দান্ত ছন্দে থাকা তাসকিন আহমেদ যেন এদিন যা চাইছেন তাই করছেন। সেঞ্চুরিয়নের অসমান বাউন্সি উইকেটে বল যেন তার পোষা বিড়াল ছানাটি। তার হাতের ইশারায় উঠছে আর বসছে। তেমনই এক বাড়তি বাউন্সে ভড়কে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ভরসা হয়ে থাকা ডেভিড মিলারকে। শেষ রক্ষা হলোনা। লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলটিতে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন মিলার। এক বল পরই পেতে পারতেন কাগিসো রাবাদার উইকেট। অল্পের জন্য স্লিপ ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ যায়নি। পরের বলেই মেলে উইকেট। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন রাবাদা। হয়ে গেল বহুল আরাধ্য পাঁচ উইকেট!
২০১৪ সালের ১৭ জুন, মিরপুরে অভিষেকেই ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তাসকিন। যদিও সে ম্যাচটা বাংলাদেশের ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল। ভারতকে ১০৫ রানে আটকে দেওয়ার পরও বাংলাদেশ হেরেছিল ৪৭ রানে! এরপর তাসকিন খেলেছেন আরও ৪৭ ম্যাচ। তবে গতকালের আগে একমাত্র ৫ উইকেট ছিল সেটিই। এর মাঝে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিন বার। মাঝে বেশ কিছু দিন দলের বাইরে ছিলেন এ ফাস্ট বোলার। গত বছর জাতীয় দলে ফেরা তাসকিনের এ সংস্করণকে ‘তাসকিন ২.০’ বলাই যায়। তাসকিন আলো ছড়াচ্ছেন, সেঞ্চুরিয়নে ঝলক দেখালেন আবার। তবে সেঞ্চুরিয়নে তাসকিনের কীর্তিটা কত বড়, সেটির একটা বড় প্রমাণ হতে পারে এটি যে, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোনো পেসারের সর্বশেষ পাঁচ উইকেট পাওয়ার কীর্তিটা এক-দুই নয়, পুরো দশ বছর আগের গল্প! ২০১২ সালের জানুয়ারিতে লাসিথ মালিঙ্গার পর প্রতিপক্ষ কোনো পেসারকে এত দাপট দেখাতে দেখল নিজেদের মাটিতে নিজেরাই দাপট দেখাতে অভ্যস্ত প্রোটিয়ারা। সর্বশেষ বাংলাদেশি পেসার হিসেবে দেশের বাইরে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, ২০১৯ বিশ্বকাপে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ইনিংস শেষে ৯ ওভারে ৩৫ রান দেয়া তাসকিন প্রথম দুই ওভারে দিলেন ৫ রান। কিপ্টে বোলিংই, কিন্তু বাংলাদেশের তো দরকার উইকেট। হলো প্রান্ত বদল। মাঝে সাকিবকে বোলিংয়ে এনে তাসকিনকে অন্য প্রান্ত থেকে নিয়ে এলেন তামিম। প্রথম বলে ভেরেইনার চারে যদি মনে হয়ে থাকে ‘কী দরকার ছিল প্রান্ত বদলের’, দুই বলই পরই দরকারটা চোখে পড়ল। দরকারটা যে ছিল উইকেটের। অনেকটা ভাগ্যের জোরেই পাওয়া, তাসকিনের শর্ট লেংথের বলটা অফ স্টাম্পের বাইরেই ছিল। কিন্তু মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেললেন ভেরেইনা, বল তার ব্যাটের নিচের কানায় লেগে স্টাম্পে! ভাগ্যই সই, ভাগ্যও তো আর সবাইকে সঙ্গ দেয় না।
পরের ওভারে আবার তাসকিনের উইকেট, এবার বড় শিকার। জানেমান মালান। এবার আর ভাগ্য-টাগ্য নয়, বাউন্স আর মুভমেন্টের বদলে উইকেট শিকার। ফুল লেংথে বল করতে করতে হঠাৎ শর্ট লেংথে পঞ্চম স্টাম্পে বলটা ফেললেন তাসকিন, দু পা এগিয়ে খেলতে গেলেন আগের ৫৫ বলে ৩৯ রান করে ফেলা মালান। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে। একটু আগে ১ উইকেটে ৬৫ রানে বড় স্কোরের দিকে ধীর পায়ে এগোতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার ১৫ ওভারের শেষেই ৬৯ রানে ৩ উইকেট নেই।
তাসকিনে শুরু ধংসযজ্ঞে ঘৃতাহুতি সাকিব-শরীফুলের। পরের ওভারে সাকিবের বলে রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লু থেকে বাঁচতে পারেননি বাভুমাকে, দুই ওভার বিরতির পর শরীফুলের বাড়তি বাউন্সের শিকার ফন ডার ডুসেন। ১৯ ওভারও শেষ না হতে ৮৩ রানেই ৫ উইকেট নেই দক্ষিণ আফ্রিকার! বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে কখনোই এতো কম রানে প্রথম ৫ উইকেট হারায়নি প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০০৭ সালে গায়ানার প্রভিডেন্সে ২৫১ রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা পঞ্চম উইকেট হারিয়েছিল ৮৭ রানে। সেটিই ছিল সর্বনিম্ন। সে ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেটি ছিল প্রথম জয়।
তবু বাংলাদেশের দ্রুতই দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস মুড়িয়ে দেওয়ার আশায় একটু বাধো বাধো লেগেছে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস আর ডেভিড মিলার ছিলেন বলে। ছয় ওভারের বেশি হয়ে গেল, জুটিটাতে রান হতে হতে ২৪ হয়ে গেল। এই বুঝি দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দাঁড়াল! শঙ্কাটা শেষ হলো কার বলে? তাসকিন! ২৫তম ওভারে প্রিটোরিয়াসকে ফেরালেন, এরপর ২৯তম ওভারে আবার জোড়া ধাক্কা, চার বলের ব্যবধানে!
প্রথমে ‘কিলার’ মিলারকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচ বানালেন। দুই বল পরই তাসকিনের পঞ্চম উইকেট হাতছাড়া হওয়ার আফসোস। দ্বিতীয় সিøপে ক্যাচ তুলেছিলেন রাবাদা, কিন্তু তাসকিন যে বল করছিলেন প্রথম স্লিপে ফিল্ডার রেখে। কিন্তু আফসোসটা এক বলও স্থায়ী হলো না। আবার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং তাসকিনের। ফুল লেংথে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে নতুন ব্যাটসম্যান রাবাদাকে স্ট্রোকে লোভ জাগালেন, কিন্তু ঝুঁকিতে প্রাপ্তিই হলো। বল ব্যাটের কানায় লেগে মুশফিকের হাতে। মুশফিক অবশ্য উদযাপনে হাত ছুঁড়তে গিয়ে ব্যথা পেলেন। তাসকিনের অবশ্য ওদিকে খেয়ালই নেই। দেখেনইনি সম্ভবত। একদিকে মুশফিকের দিকে ছুটে গেছেন কয়েকজন সতীর্থ, অন্যদিকে তাসকিনকে ঘিরে বাকিদের উদযাপন।
তাসকিনের কল্যাণে দলীয় মাত্র ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে কখনোই এতো কম রানে প্রথম ৫ উইকেট হারায়নি প্রোটিয়ারা। এর আগে ২০০৭ সালে গায়ানার প্রভিডেন্সে ২৫১ রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা পঞ্চম উইকেট হারিয়েছিল ৮৭ রানে। সেটিই ছিল সর্বনিম্ন। সে ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেটি ছিল প্রথম জয়। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৪ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দলটির সর্বনিম্ন স্কোর এটিই। ২০১৫ সালে মিরপুরে ১৬২ রান ছিল আগের সর্বনিম্ন।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বাধিক ৫ উইকেট
৫ মুস্তাফিজুর রহমান
৪ আবদুর রাজ্জাক
৩ সাকিব আল হাসান
২ তাসকিন আহমেদ
তাসকিন, তাসকিন
বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। আগের সেরা এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মেহেদী হাসান মিরাজের ৬১ রানে ৪ উইকেট।
২০১৪ সালের ১৭ জুন মিরপুরে ওয়ানডে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার পর কালই প্রথম ওয়ানডেতে তাসকিনের ৫ উইকেট। অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে ৫ উইকেট এখনো তার ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং।
২০১২ সালের পর প্রথম বোলার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। সর্বশেষ ২০১২ সালে পার্লে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা।
সংখ্যায় সংখ্যায়
১৫৪
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১৬২, ২০১৫ সালের ১৭ জুন মিরপুরে।
৯
ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে এ নিয়ে নবমবার ১৬০ রানের নিচে অলআউট হলো দক্ষিণ আফ্রিকার। সর্বশেষ তিনবারই সেঞ্চুরিয়নে।
৪
বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে একাধিকবার ৫ উইকেট পেলেন তাসকিন।
২১
ওয়ানডেতে ২১তম বার ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের কোনো বোলাররা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের ৫ উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ ৬টি কীর্তিই দেশের বাইরে। বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের জিম্বাবুয়ে সিরিজে ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের কোনো বোলার।
৮৩/৫
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ম্যাচেই সবচেয়ে কম রানে প্রথম ৫ উইকেট হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচের আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল প্রোটিয়ারা। সেই ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ।
৪
বাংলাদেশের প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৪টি ডিসমিসাল করেছেন মুশফিকুর রহিম।
২৫০
চতুর্থ ক্যাচটি নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০০ ক্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মুশফিক। ৫০টি স্টাম্পিং করা মুশফিকের মোট শিকার এখন ২৫০। ইতিহাসে এই কীর্তি আছে কেবল সাত জনের!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।