Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবাশ্ম জ্বালানির পেছনে ছোটা পাগলামি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজতে বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির পেছনে ছোটা ‘পাগলামি’ এবং তা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। গত ২৪ ফেব্রæয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পরপরই তেলের দাম বাড়তে থাকে। রাশিয়ার জ্বালানি খাতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই দাম গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে যায়। শুধু তেল নয়, গ্যাস এবং কয়লার দামও বেড়েছে। ফলে বিশ্বের সব দেশেই জীবাশ্ম জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তেল এবং শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ। রাশিয়া থেকে তেলের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে আপাত ব্যবস্থা হিসেবে বিশেষ করে বিশ্বের ধনী দেশগুলো মরিয়া হয়ে তেল ও গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে। গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই আপাত ব্যবস্থা প্যারিস আবহাওয়া চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছানোর ‘জানালা বন্ধ করে দিতে পারে’। তিনি চীনসহ অন্যান্য দেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার আহŸানও জানান। কপ২৬ এর পর এই প্রথম আবহাওয়া ও জ্বালানি নিয়ে বড় ধরনের বক্তৃতা দিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। দ্বিধাহীন বাক্যে তিনি বলেন, ‘‘গøাসগোতে যে সামান্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা বিপজ্জনক আবহাওয়া পরিবর্তন রোধে অপর্যাপ্ত।’’ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যাওয়া রোধ করতে এই শতাব্দীতে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাকশিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ওই আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে এই দশকের শেষ নাগাদ কার্বন নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। অথচ, কার্বন নিঃসরণ ১৪ শতাংশ বেড়ে গেছে, যেটার কথা গুতেরেস তার বক্তৃতায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই সংকটের সমাধান গøাসগোতে হয়নি। সত্যি বলতে, সমস্যা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলার হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার নীতি নিচ্ছে।” বিবিসি জানায়, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশগুলো এবছর রাশিয়ার তেল, গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। অনেকেই বিকল্প উৎস হিসেবে কয়লা অথবা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির দিকে ঝুঁকছে। যা আবহাওয়ার জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে বলে সতর্ক করেছেন গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘‘জীবাশ্ম জ্বালানির যোগানে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তার ফলে বিভিন্ন দেশে এটির ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে এবং তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর যে কথা দিয়েছে, সেটা সম্প‚র্ণ অবজ্ঞা করতে পারে। এটা পাগলামি। জীবাশ্ম জ্বালানির আসক্তি নিশ্চিতভাবেই পরষ্পরের ধ্বংস ডেকে আনবে।”বিভিন্ন দেশকে অবশ্যই কয়লা এবং সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসার গতি বাড়াতে হবে এবং দ্রæত ও নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎসে স্থানান্তর বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘‘এটাই জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একমাত্র সঠিক পথ।” আবহাওয়া সংকট মোকাবেলায় যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তার বেশিরভাগই জি২০ ভুক্ত ধনী দেশগুলোর হাতে রয়েছে বলেও মত গুতেরেসের। ওই ২০ দেশ বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের জন্য দায়ী। কয়লার ব্যবহার অবশ্যই সম্প‚র্ণর‚পে বন্ধ করতে হবে। ধনী দেশগুলোর জন্য এটা ২০৩০ সালের মধ্যে এবং চীনসহ সব দেশের জন্য ২০৪০ সালের মধ্যে। গুতেরেস বলেন, ‘‘কয়লা একটি বোকার মত আবিষ্কার। যেটির ফলে শত শত কোটি ডলারের সম্পদ আটকে থাকে।” রয়টার্স।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ