মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর নিদ্ধান্ত নিয়েছে সউদী আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সউদী আরামকো। বিশ্বের তেল বাজারের জন্য নিশ্চিতভাবেই যা দারুণ স্বস্তির খবর।
সউদী আরামকো জ্বালানিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের জন্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চাইছে। ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল এবং গ্যাসের বাজারে আগুন ধরে যায়। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য এখন গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সউদী আরবের পর রাশিয়াই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তেল উৎপাদনকারী দেশ।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরশীল ছিল। রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে সে সব দেশে তেলের দাম চড়তে থাকে, নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। তারা হন্যে হয়ে জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজছিল। সউদী আরমকোর এই ঘোষণাকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সউদী আরব সফরে গিয়ে তাদের তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাজি করার চেষ্টা করেন। যাতে রাশিয়ার তেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে যোগানের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে সেটা আপাতত সামাল দেয়া যায়।
ওপেকের শীর্ষ তেল রাপ্তানিকারক দেশ সউদী আরব। দেশটি এখন যদি তাদের তেল উৎপাদন আরো বাড়িয়ে দেয় তবে হয়তো বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে আসবে। যদিও তেলের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী জনসনের সউদী আরবকে পটানোর চেষ্টাকে ভালো চোখে দেখছে না দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। তারা বলছেন, সরকার জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে ‘এক স্বৈরাশাসকের মাথা থেকে টুপি খুলে আরেক স্বৈরাশাসকের মাথায় পরাচ্ছে’।
তবে প্রধানমন্ত্রী ‘একদম সঠিক’ কাজটি করেছেন বলে মনে করেন চ্যান্সেলর ঋষি শৌনক। তিনি বিবিসি-কে বলেন, ‘যদি আমরা এ দেশের জনগণের জন্য আরও কম দামে তেল আনতে এবং জ্বালানি পাওয়ার বিষয়টি আরো নিশ্চিত করতে আমাদের হাতে যে যে বিকল্প পথ আছে সেসব ধরে চেষ্টা না করি তবে সেটা ভুল হবে।’ ওদিকে, ছায়া চ্যান্সেলর র্যাচেল রীভাস বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের উচিত রাশিয়া এবং সউদী আরবের মত দেশের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে নতুন নতুন পরমাণু জ্বালানি ক্ষেত্র ও দেশে বা দেশের বাইরে উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে দেশীয় জ্বালানি উৎপাদনের দিকে অধিক মনযোগ দেয়া।’
করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে যখন মন্দার হাওয়া তখন সউদী আরামকোর মুনাফাও খাড়া নেমে গিয়েছিল। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়ায়। মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে অনেক দেশ নিজেদের অর্থনীতির চাকা সচল করলে তেলের চাহিদা বাড়ে। ফলে ২০২১ সালে তেলের দাম আবার এক লাফে অনেকটা বেড়ে যায়। সউদী আরামকোর মুনাফা দ্বিগুণ হয়।
সউদী আরামকো জানিয়েছে, তারা এ বছর তাদের মূলধন ব্যয় বাড়িয়ে ৪৫ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করার পরিকল্পনা করেছে। যেটা ভবিষ্যতে আরো বাড়ানো হবে। গত বছর তাদের মূলধন ব্যয় ছিল প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোম্পানির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ২০২৭ সাল পর্যন্ত তারা প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করবে। গত মাসেও কোম্পানিটি প্রতিদিন এক কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদনও ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আরামকো হলো সউদী আরবের সোনার ডিম দেয়া হাঁস। প্রতিষ্ঠানটি হুথি বিদ্রোহীদের হামলায় কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানায়নি। ‘আরামকোর নিট আয় ২০২০ সালে ৪৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২৪ শতাংশ বেড়ে ২০২১ সালে ১১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে’, প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সউদী আরব তার তেল-প্রধান অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারকদের মধ্যে আরামকো একটি। সউদী আরব ফেব্রæয়ারিতে আরামকোর শেয়ারের ৪ শতাংশ, যার মূল্যমান ৮০ বিলিয়ন ডলার, দেশটির সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে স্থানান্তর করেছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।