মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
উন্নয়ন উন্নতির জন্য বিদ্যুৎ এর পর্যাপ্ত সরবারহ দরকার। এটা অস্বীকার করা যাবে না। প্রশ্ন হলো রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন? এটা কি দেশের অন্য কোথাও হতে পারতো না? সুন্দরবনের কাছেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে কেন? তাও আবার কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ হবে। কী পরিমাণ বায়ু, পানি দুষণ হবে ভাবলে শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়? গ্যাসের জন্য বাংলাদেশ সম্ভবনাময়। নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হচ্ছে। রামপালে গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কি একবারেই অসম্ভব? ভারত সে দেশে সুন্দরবনের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়নি। অথচ সুন্দরবনের নিকটে মাত্র ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে আমরা কিভাবে কোন যুক্তিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করার কথা ভাবতে পারি? একটি দেশের মোট জমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। তথাকথিত উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। হচ্ছে না বৃক্ষ রোপণ। সে কারণে বনভূমি কমতে কমতে ৬ শতাংশে ঠেকেছে। বনভূমি কমার পরিণতি খুব ভয়াবহ হতে পারে। প্রকৃতির আচরণ বদলে যেতে পারে। গরমকালে শীত, শীতকালে গরম পড়ছে। হঠাৎ বন্যা হচ্ছে। প্রকৃতির অচরণ থেকে ঋতুু চেনার উপায় নেই। বিদ্যমান ৬ শতাংশ বনভূমির বেশিরভাগ সুন্দরবন এলাকায়। সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০ লাখ হেক্টর যার ৬০ শতাংশ মালিকানা বাংলাদেশের। বাকি ৪০ শতাংশ মালিকানা ভারতের। সুন্দরবনই পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন। বহ্মপুত্র, মেঘনা, গঙ্গা অববাহিকায় সুন্দর বন গড়ে উঠতে সময় লেগেছে প্রায় ১২ লাখ বছর। সুন্দরবনকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। ৬ লাখ মানুষের জীবিকার উৎস সুন্দরবনের গাছ, মাছ, পানি, মধু ইত্যাদি। সুন্দরবনের মতো প্রকৃতিক রক্ষাবাচক আর নেই।
সুন্দরবন দক্ষিণাঞ্চলের জন্য প্রকৃতিক চাদর। যেটা বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষদের রক্ষা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সন্মেলনে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন- রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সুন্দর বনের কিছু ক্ষতি হবে। ক্ষতি যে হবে সেটা সরকারি সমীক্ষায়ও প্রকাশ পেয়েছে। রামপাল প্রকল্পের জন্য প্রণীত পরিবেশ অভিঘাত সমীক্ষায় সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরই ৫৯টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। রামপালের জন্য বছরে ৪৭ লাখ টন কয়লা, চুনাপাথর পরিবহন করা হবে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে। ফলে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির ব্যাপাররটা তো রয়েছেই। গত বছর শ্যালা নদীতে তেলের ট্যাংকার ডুবে কী ভয়াবহ ক্ষতিই না হল। এত শুধু একটা তেলের ট্যাংকার, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে হাজার হাজার জাহাজ, ট্রলার যাতায়াত করবে। তখন এগুলো দুর্ঘটনা কবলিত হলে কী হবে। এগুলোর চলাচলে সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট হবে। নদীর পানি দুষিত হবে জ্বালানি তেলে।
রামপালে কয়লা পোড়ানো হবে সুপার ক্রিটিকাল পদ্ধতিতে। ফলে বিপুল পরিমাণ উষ্ণ ও দূষিত পানি সুন্দরবনে গিয়ে পড়বে। গ্যাস কিংবা বায়ু দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো। বর্তমানে প্রায় ৬৫ ভাগ বিদ্যুৎ গ্যাস দ্বারা উৎপাদিত হচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ সামগ্যীর দাম এখন মানুষের হাতের নাগালে। সরকার সৌর বিদ্যুৎতের প্রতি জনগণ আকৃষ্ট করতে পারে। প্রচার-প্রচারণা চালানো যেতে পারে। তরলকৃত প্রকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সহজেই আমদানি করা যায়। জাপান এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ তৈরি করে । দেশটি মোট বিদ্যুৎতের ৬০ শতাংশ এলএনজি দিয়ে তৈরি করে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, যেখানে বিশ্বের সিংহভাগ দেশ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উপাদন করছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন। সেখানে কার স্বার্থে সুন্দরবনের নিকটে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইউরোপের অনেক দেশের বিদ্যুৎতের সর্বমোট ৮০ ভাগ সৌরবিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তৈরি হচ্ছে। সেখানে কয়লা দিয়েই বিদ্যুৎ তৈরিতে আমাদের ঝুঁকতে হবে কেন? কয়লা পোড়ালে কার্বন ড্্রাই অক্সাইড বের হয় যা পরিবেশ ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। ভারত বিশ্বে অন্যতম প্রধান কয়লা উৎপাদক দেশ। অথচ সে দেশটি যখন কয়লা পুড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে না। তখন সমস্যাটা কোথায় তা না বুঝার কি আছে? শ্রীলংকার শ্যামপুরে ভারতের সাথে যৌথভাবে ৫০০ মেগওয়াট তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লার পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহারে শ্রীলংকার প্রস্তাব ভারতে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশ ও তো এমন প্রস্তাব দিতে পারে। যদি না রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতেই হয়। পদ্মা সেতু হচ্ছে। তাই গ্যাসের লাইন দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হবে দেশের জন্য ক্ষতিকর। কিছু সংখ্যাক ভাড়াটিয়া লোক ছাড়া কেউই রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণের পক্ষে কথা বলছেন না। বিরোধী দল যাই বলুক না কেন। সত্যি যেটা সেটা হলো রামপালে বিদ্যুৎ স্থাপন ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনবে। ধ্বংস হয়ে যাবে বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সুন্দরবন। তাই রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধীতাকে রাজনীতিক কালার দেয়া সমীচীন নয়। এখানে দেশের স্বার্থ জড়িত। যেহেতু ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। যে বা যিদি সরকারি দলকে ভোট দিয়েছেন। অথবা ভোট দেয়নি। সরকার কিন্তু তাদের সবার। সে কারণে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দ্রত রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন থেকে সরে আসতে হবে। এছাড়া বিকল্প কোন পথই নেই।
ষ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।