মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে এবার দেশটির বিরোধীদল ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর জোটের সাথে আঁতাত করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানসহ ইমরানের দল ‘পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)-এর কিছু প্রভাবশালী সদস্য, যা দেশটিকে ক্রমেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে যে, ব্যাপক অর্থ এবং উচ্চ ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে ইমরান শিবিরের আনুগত্য কিনে নিয়েছে পাকিস্তানের দুর্নীতিবাজ প্রাক্তন শাসক নওয়াজ শরীফের জোট।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারের কাছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে প্রস্তুত ইমরান বিরোধীরা এমনকি এও সতর্ক করেছে যে, যদি স্পিকার প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে বা বিলম্ব করতে অস্বীকার করেন, তাহলে তারা ২২ ও ২৩ মার্চ ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের ভেন্যু পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলি সেক্রেটারিয়েটে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন। সোমবার স্পিকারের মাধ্যমে ইমরানের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবটি গৃহীত হলে ২৮ মার্চ অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন বলে আশা করছেন তারা।
গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, পাকিস্তানের ইমরানবিরোধী শিবির যখন একদিকে তার ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে চলেছে, তখন অন্যদিকে, দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং ডিজি (আইএসআই) লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আঞ্জুমসহ চারজন সিনিয়র পাকিস্তানি জেনারেল ওআইসি-সম্মেলনের পরপরই পাক-প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। এমনকি, পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির বহুল আলোচিত তুরুপের তাস সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফও ইমরান খানের পক্ষে সেনাবাহিনীর সাথে মধ্যস্থতা করতে দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, জেনারেল শরীফ ইমরান খানের নির্দেশে জেনারেল বাজওয়ার সাথে দেখা করতে পাকিস্তানে উড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেনাপ্রধান ও তার সমর্থকগণ ইমরানকে দ্বিতীয় সুযোগ না দেয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করেছেন। হিন্দুস্তান টাইম্সের প্রাপ্ত দিল্লিতে পৌঁছানো রিপোর্ট বলছে যে, যে কোনো মূল্যে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য মরিয়া বিরোধী জোটের সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাট্টা হয়ে মত দিয়েছে যে, তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় ইমরানের অবস্থানের জন্য এবং আফগানিস্তানে পশ্চিমাদেরকে ইসলামাবাদ সমর্থন করা সত্তে¡ও তাকে এবং পাকিস্তানকে উপেক্ষা করার জন্য ইমরানের যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিরোধী সমালোচনা পাকিস্তানের মার্কিন মদদপুষ্ট সেনাবাহিনী ও বিরোধীদলগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ প্রেক্ষিতে, ওআইসি সম্মেলনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য স্পষ্টভাবে বলেছে এবং রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর কারণে প্রস্তাবটি গ্রহণ না করা হলে পুরো বিধানসভার কার্যক্রম ব্যাহত করার হুমকি দিয়েছে সেনা সমর্থিত পিএমএল-এন জোট।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের তারিখ যতই কাছে আসছে, ক্ষমতাসীন পিটিআই দলের বেশ কিছু প্রভাশালী সদস্যও (এমএনএ) অন্য সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা জানিয়েছেন যে, তারা ক্ষমতাসীন দল ত্যাগ করেছেন এবং আগামী নির্বাচনে দলটির পক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন না। শুধু তাই নয়, তাদের একজন দাবি করেছেন যে, তিনজন ফেডারেল মন্ত্রী ইতোমধ্যেই পিটিআই ত্যাগ করেছেন এবং বিরোধী জোট থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্প্রতি জিও নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে হারুন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) পদত্যাগ করা উচিত এবং দলের অন্য কোনো সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য এগিয়ে আনা উচিত। এটিই এগিয়ে যাওয়ার এবং এই সঙ্কট নিরসনের একমাত্র উপায়। দেশ আর অস্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারছে না এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবশ্যই তার একগুঁয়েমি ত্যাগ করতে হবে এবং দলের মধ্যে থেকে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসাবে এগিয়ে আনতে হবে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আবারও দলত্যাগী নেতাদের ক্ষমতাসীন পিটিআই-এ ফিরে আসার আহŸান জানিয়ে বলেছেন, তিনি তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থনকারীদের একজন ‘সহানুভ‚তিশীল পিতার’ মতো ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত। রোববার এক জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইমরান পিটিআই’র বিদ্রোহী সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, ‘দলে ফিরে আসুন বা সামাজিক বয়কটের মুখোমুখি হন। মানুষ আপনাদের বিশ্বাস করবে না। তরুণরা দেশে যা ঘটছে তা সম্পর্কে সচেতন, এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ যেখানে কোনো কিছু গোপন করা কঠিন।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দলত্যাগী নেতাদের তাদের বিবেক বিক্রি করে এবং দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার মারাত্মক পরিণতির জন্য সতর্ক করে বলেন, ‘এ টাকা গ্রহণ করে আপনি আপনার সন্তানদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছেন।’
বিরোধী দলগুলোর দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে ইমরান খান দাবি করেছেন যে, তারা তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে পিটিআই’র নেতাদের আনুগত্য এবং দলীয় সম্পর্ক পরিবর্তন করতে তাদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, দলের অন্যান্য সদস্যরা তাকে সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে বিদ্রোহীদের দলে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, ইমরান বলেন, ‘দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বা বিবেকের সাথে আপস করে যদি সরকার বাঁচাতে হয়, তাহলে আমি এমন সরকারকে অভিশাপ দিই।’
প্রধানমন্ত্রী ইমরান দাবি করেছেন যে, সিন্ধু হাউসে সংসদ সদস্যদের মধ্যে টাকার ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন মিত্র হওয়া সত্তে¡ও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করায় তিনি একটি স্বাধীন বিদেশী নীতি থাকার জন্য ভারতের প্রশংসা করেন, যা দেশটির নিজের জনগণের জন্য অনুক‚ল। ইমরান খান বলেছেন, তিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতকে ‘একদম না’ বলেছেন। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সমর্থন চাওয়ার বিষয়টি প্রোটোকল ভঙ্গ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ইইউ-এর অনুরোধ মেনে পাকিস্তানের কিছুই হবে না।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধের অংশ হয়েছি এবং ৮০ হাজার মানুষ এবং ১শ’ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছি।’ তিনি শাহবাজ শরিফকে জিজ্ঞাসা করেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে পাকিস্তান কী অর্জন করেছে। তিনি তার বিরোধীদের ‘ভন্ড’ উল্লেখ করে বলেন, তারা কখনোই তাদের জাতির পক্ষে দাঁড়াতে পারবে না কারণ তারা টাকার পূজা করে। ইমরানের মতে, জাতি কখনোই উন্নতি করবে না যদি এটি বিশ্বের পরাশক্তির ‘দাস’ থেকে যায় এবং কেবল তখনই উন্নতি করবে যখন এটি নিজের পায়ে দাঁড়াবে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইম্স, ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।