Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নতুন প্রেসিডেন্টকে রাজনীতির ক্ষত সারাতে হবে সবার আগে

প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে প্রায় দুই বছরের প্রচারণা শেষে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ, সংখ্যালঘু ভোটারদের নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি, রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে আক্রমণ ইত্যাদির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলা নতুন প্রেসিডেন্টের কাজ। এ ক্ষেত্রে আশার কথা হচ্ছে, প্রচারণার শেষ দিনে এসে ট্রাম্প এবং হিলারি উভয়েই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জয়ী হলে অবশ্যই বিভাজন দূর করতে সচেষ্ট হবেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার নির্বাচনী প্রচারণা বিভাজনের চূড়ান্ত রূপ লক্ষ্য করেছে। এই নির্বাচনে দুই প্রার্থীই বাকবিত-ার মধ্যদিয়ে সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত প্রভৃতি বিভক্তিকে প্রকট আকার দিয়েছেন। এছাড়া প্রার্থীদের অতীত কর্মকা-ের জের টেনেও কম নোংরামি হয়নি এবারকার নির্বাচনী প্রচারণায়। বার্তা সংস্থা এপির সংবাদ পর্যালোচনায় বলা হচ্ছে, এই বিভক্তি যদিও এবারই প্রথম নয়, কিন্তু এর চূড়ান্ত খোলাখুলি রূপ লক্ষ করা গেছে এবারই। এর আগে কোনো দল এককভাবে একটি বিশেষ শ্রেণীকে নিজের সমর্থক এবং অন্য একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়নি। আর এর ফলে এবারকার মতো কখনো একটি বিশেষ শ্রেণী সরাসরি কোনো একজন প্রার্থীর পক্ষে এককভাবে অবস্থান নেয়নি। বিভাজনের রূপটি সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, কোনো পক্ষই অপর পক্ষকে বুঝতে চেষ্টা করেনি, এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতাও লক্ষ করা গেছে। সব মিলিয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই নির্বাচন মার্কিনীদের চরমভাবে বিভক্তির মধ্যে ফেলেছে। রাজনৈতিক ক্ষত সৃষ্টিটা প্রথমত রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরেই হয়েছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কম শিক্ষিত খেটে খাওয়া শ্বেতাঙ্গ মানুষদের আবেগকে পুঁজি করে প্রকৃত আমেরিকানদের জন্য এক মহান দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ফলে এই শ্রেণীর মানুষ তাকে সমর্থন দিয়েছে। তাদের সমর্থন করার কারণেই অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছেন তিনি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসী হওয়া আমেরিকানদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর এই আতঙ্ককে পুঁজি করে নিজেদের ভোটব্যাংক তৈরি করে হিলারি শিবির। কৃষ্ণাঙ্গ এবং মুসলিমবিরোধী মন্তব্য করেও বিভাজনটা স্পষ্ট করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে মুসলিম ভোটাররা এবং আফ্রো-আমেরিকান ভোটাররাও ভিড় করেছেন হিলারি শিবিরে। এর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে নেমে পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়া, নোংরা ব্যক্তিগত আক্রমণ আর নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতির ক্ষতটাকে বড় করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বরাবরই বড় দুই দল রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিকÑ এই দুই শিবিরে বিভক্ত। তবে এবারকার নির্বাচনে এই দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু যাচাই করার প্রবণতাই একমাত্র সমস্যা ছিল না। এবার নির্বাচন থেকে ভোটারদের সরিয়ে রাখার চেষ্টার অভিযোগও আছে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে। ফ্লোরিডায় দলটি সফলও হয়েছে। নতুন আইনের কারণে সেখানে কয়েক লাখ অপরাধী ভোট দিতে পারেনি। তাদের বড় অংশই আফ্রিকান-আমেরিকান, যারা বরারবরই ডেমোক্রেটিক পার্টির বড় সমর্থক। ভোটারদের রুখতে রিপাবলিকানদের এই আইনি অথচ দৃষ্টিকটু চেষ্টা অবশ্য ক্যারোলিনা, উইসকনসিন ও টেক্সাসে সফল হয়নি। এরপরও এসব প্রচেষ্টা আমেরিকানদের মনের মধ্যে বিভেদের ক্ষতটা বাড়িয়ে তুলেছে। এর পাশাপাশি দুই দলই দেদার টাকা খরচ করে টেলিভিশনে, অনলাইনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপর প্রার্থীকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, দুই প্রার্থীই বিভাজন উস্কে দেয়ার মতো কথা বলেছেন; এবং যেহেতু তাদের সমর্থকরাই বেশি এসব বিজ্ঞাপন দেখেছেন, তাই তারা এসব কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেছেন। এর ফলে তাদের মনে অপর একটি শ্রেণীর প্রতি বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। এখন নির্বাচনের ফল যার ঘরেই যাক, বিজয়ী প্রার্থীকে অবশ্যই এই বিস্তৃত বিভাজনের রেখাগুলো মুছে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এপি অনলাইন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নতুন প্রেসিডেন্টকে রাজনীতির ক্ষত সারাতে হবে সবার আগে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ