গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে খুন ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ বাড়ছে। মহানগরীতে চলতি বছরের দশ মাসে ৭৭টি খুনের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। আর ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৭৯টি। একই সময়ে চট্টগ্রাম জেলাসহ রেঞ্জের এগার জেলায় খুন হয়েছে ৫২৩ জন। ধর্ষণসহ নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে ২ হাজার ২৫০টি। পুলিশের রেকর্ড থেকে খুন-ধর্ষণের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ধরনের ভয়ানক অপরাধ বাড়লেও মামলা তদন্তে ধীরগতি এবং আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আর এ কারণে খুন ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পুলিশ বলছে ডাকাতি, ছিনতাইসহ পারিবারিক কলহ বিরোধ, পূর্বশত্রæতার কারণে খুনোখুনি বাড়ছে। পারিবারিক কলহ ও পূর্বশত্রæতার জেরে সংঘটিত হত্যাকাÐে আসামীরা সহজে ধরা পড়লেও ছিনতাই, ডাকাতিসহ খুনের ঘটনায় আসামীরা সহজে ধরা পড়ছে না।
আর বেওয়ারিশ হিসাবে যাদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে তাদের খুনের রহস্য উদঘাটনেও পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় অনেক মামলার রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না।
পারিবারিক কলহে খুনের পর বেশিরভাগ ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হচ্ছে। বেশিরভাগ অপমৃত্যুর মামলা তদন্তে দেখা যাচ্ছে এটি আত্মহত্যা নয় খুন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়াসহ নানা কারণে এসব মামলার রহস্য উদঘাটনেও সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যা মামলার খুনিরা ধরা না পড়ায় এবং সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এতে করে খুনের ঘটনা বাড়ছে। মাদক ব্যবসা নিয়েও কোন কোন এলাকায় খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দশ মাসে খুন হয়েছে ৭৭ জন। গত মাসে মহানগরীতে ১০ জন খুন হয়েছে। এসব খুনের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া, অনৈতিক সম্পর্ক, পারিবারিক বিরোধ ও মাদকাসক্তি। ছিনতাইকারীদের হাতেও একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এরমধ্যে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান ও পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের সামনের সড়কে ছিনতাইকারীদের হাতে নির্মম খুনের শিকার দুইজনের খুনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। ওই দুটি খুনের ঘটনায় জড়িত ছিল অটোরিকশাযোগে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ওই দুটি ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে তিনজন খুনের দায়স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই চক্রটি অটোরিকশায় যাত্রী তুলে তার কাছ থেকে ছিনতাই করে। আর ছিনতাইয়ে বাধা দিলেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয়। নগরীতে এমন অপরাধীদের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের হাতে এর আগেও নগরীতে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক কলহ বিরোধেও খুনের ঘটনা ঘটছে। গেল মাসে নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী। স্ত্রী আয়েশা মনিকে গলা টিপে হত্যার পর র্যাব-৭ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কার্যালয়ে হাজির হন স্বামী আলেক শাহ। খবর পেয়ে ইপিজেড থানা পুলিশ ওই এলাকার যৌথ আবাসিক কলোনীর ভাড়া বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর রাতে সীতাকুÐ থানায় হাজির হন খাদিজা বেগম নামে এক নারী। দুই শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে থানায় হাজির হয়ে পুলিশকে জানান, স্বামীকে খুন করে এসেছি। বাসায় লাশ রেখে বাইরে তালা দিয়েছি। তার অভিযোগ, কাভার্ড ভ্যান চালকের সহকারী স্বামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য প্রতিদিন তাকে মারধর করেন। আর এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমন্ত স্বামীকে শিলপাটা দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করেন তিনি।
নগরীর টেরিবাজারে ভগ্নিপতিকে খুন করে থানায় হাজির হন শ্যালক। বাবলু ধর নামে ওই যুবক স্বীকার করেন ভগ্নিপতি স্বর্ণের কারিগর অঞ্জন ধরকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে ঘরে তালা মেরে দিয়েছেন তিনি। তার দাবি বোনকে নির্যাতন করায় সে এই খুন করেছে। তবে এ খুনের দু’দিন পর নিহতের মা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে খুনের জন্য পুত্রবধূকে দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন ৪০ লাখ টাকা বউয়ের নামে এফডিআর করে দেয়ার পর তার ছেলেকে পাত্তা না দিয়ে পুত্রবধূ পরকীয়া মগ্ন। এ কারণে ভাইকে দিয়ে স্বামীকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নিজের পরকীয়া সম্পর্ককে চাপা দিতে স্ত্রীকে হত্যা করে রিদুয়ানুল কাদের হৃদয় নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরার বাসায় স্ত্রীকে খুনের পর তার লাশ বাথরুমের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে সে। খবর পেয়ে নিহতের মা বাসায় এসে তালা খুলে দেখেন বাথরুমের দরজায় ঝুলছে কন্যার লাশ। ১০ দিন পর গত সোমবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। স্ত্রীকে খুন করে ওইদিনই কক্সবাজার চলে যায় সে। এরপর যে মেয়ের সাথে পরকীয়া চলছিল তাকে বিয়ে করে সেখানে।
১৯ অক্টোবর নগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজারের কাছে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে রোজিনা খাতুন নামে এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে পুলিশ জানতে পারে দুই মাস আগে রুবেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে রোজিনা খাতুন। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে ভিন্ন চিত্র। এ ঘটনায় আটক মোঃ মাজেদ আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে এ খুনের দায় স্বীকার করে। সে জানায়, তার বন্ধু রুবেলের সাথে রোজিনার লিভ টুগেদার চলছিল। একপর্যায়ে রোজিনা রুবেলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে রুবেল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
১১ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালী থানার কাটাপাহাড় এলাকা থেকে মরিয়ম বেগম (৩৫) নামে এক নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে তার স্বামী মোঃ রুবেল হোসেন (৩২)। ৬ অক্টোবর নগরীর আগ্রাবাদ মৌলভী পাড়ায় স্ত্রী সোহেনা বেগমকে খুন করে লাশ বাসায় রেখে পালিয়ে যান স্বামী সজীব আহমেদ।
সম্প্রতি নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় মাকে কুপিয়ে খুন করে ছুরি দিয়ে গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মাদকাসক্ত ছেলে। এর আগে হাটহাজারীতে পুত্রের হাতে খুন হন জন্মদাতা পিতা। তার আগে চান্দগাঁও এলাকায় মাকে খুন করে এক পুত্র।
খুনের পাশাপাশি মহানগরীতে ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে। চলতি বছরের দশ মাসে নগরীর ১৬টি থানায় এধরনের ২৭৯টি ঘটনা রের্কড হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় চলতি বছরের দশ মাসে ৫২৩টি খুনের ঘটনা রের্কড হয়। আর ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৫০টি।
গেল বছর চট্টগ্রাম মহানগরীতে খুন হয়েছে ১০৫ জন এবং ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৫৭টি। একই বছর রেঞ্জে খুনের ঘটনা ঘটে ৬৮৮টি এবং ধর্ষণসহ নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩ হাজার ৪৪৬টি। পুলিশ খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধকে ভয়ঙ্কর অপরাধ হিসাবে গণ্য করে এসব মামলার তদন্তকে অগ্রাধিকার দেয়। এধরনের মামলার বিচার দ্রæত নিষ্পত্তির জন্যও রয়েছে বিশেষ আদালত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।