মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ফেব্রুয়ারির শুরুতে চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘সর্বমার্কিন’ সংগ্রামে সাফল্যের লক্ষ্যে হোয়াইট হাউস উচ্চ-স্তরের নির্দেশিকা প্রদানের জন্য একটি নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা ‘ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল’ জারি করে, ঠিক যেমন রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে তার বাহিনীকে একত্রিত করে। ইন্দো-প্যাসিফিককে বিশ্ব অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সত্যিকারের কেন্দ্রস্থল হিসাবে বর্ণনা করা পরিকল্পনাটিতে মার্কিন কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য এবং চীনের উত্থান মোকাবেলার জন্য বহুমুখী প্রচেষ্টার আহ্বান রয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক চিন্তাধারার একটি নজিরহীন অভিব্যক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আমাদের উদ্দেশ্য (চীন) পরিবর্তন করা নয় বরং কৌশলগত পরিবেশকে গঠন করা যেখানে এটি সক্রিয়, বিশ্বে প্রভাবের ভারসাম্য তৈরি করা যা যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের পক্ষে সর্বাধিক অনুক‚ল।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই নীলনকশা বাস্তবায়নে বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা দল চীনকে ঠেকানোর কৌশল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ এবং সমুদ্রপথগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাপান এবং ফিলিপাইন সহ ‘প্রথম দ্বীপমালা’, যা উন্মুক্ত প্রশান্ত মহাসাগর থেকে চীনকে আলাদা করে, তা নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। সেই দ্বীপমালার মধ্যে অবস্থিত তাইওয়ানকে নিশ্চিতভাবে চীন তার নিজের বলে দাবি করেছে এবং দ্বীপটিকে এখন ওয়াশিংটন মার্কিন নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য হিসাবে দেখছে।
ডিসেম্বরে ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব এলি র্যাটনার সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটিকে বলেন, ‘আমি একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শুরু করতে চাই কেন তাইওয়ানের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এত গুরুত্বপ‚র্ণ। আপনারা জানেন যে, তাইওয়ান প্রথম দ্বীপমালার মধ্যে একটি গুরুত্বপ‚র্ণ স্থানে অবস্থিত, মার্কিন মিত্র ও অংশীদারদের একটি নেটওয়ার্কের পোতাশ্রয়, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে, বেইজিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের উত্থান ঠেকানোর এবং তাইওয়ানের উপর দেশটির দাবি প্রতিহত করার এধরনের প্রচেষ্টা অগ্রনীয়। চীন বারবারই জোর দিয়ে বলে এসেছে যে, তাইওয়ানে মার্কিন হস্তক্ষেপ একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করতে পারে, যা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজত চীনের রাষ্ট্রদ‚ত কিন গ্যাং সম্প্রতি বলেছেন, ‘তাইওয়ান ইস্যুটি চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরকের বাক্স। যদি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা উৎসাহিত তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতার পথে চলতে থাকে, তাহলে সম্ভবত এটি দু’টি বড় দেশ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত সামরিক সঙ্ঘাতে করবে।’
তাইওয়ানের দাবীকৃত আকাশসীমায় চীনা যুদ্ধবিমান নিয়মিত অনুপ্রবেশ এবং তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলির টহলের কারণে অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা করেছিলেন যে, ইউক্রেন নয় তাইওয়ান এই যুগের মহাশক্তির প্রতিযোগিতা থেকে উদ্ভূত প্রথম বড় সামরিক সঙ্ঘাতের স্থান হবে। কেউ কেউ এখন সতর্ক করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে, তা চীনকে তাইওয়ান অধিগ্রহন শুরু করতে প্ররোচিত করতে পারে।
দুর্ভাগ্যবশত, ইউক্রেন এবং তাইওয়ান আজ বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক ছকে বিতর্কের একমাত্র স্থান নয়। যেহেতু মহাশক্তির প্রতিযোগিতা নতুন গতি লাভ করেছে, অন্যান্য স্থানগুলিও তাদের কৌশলগত অবস্থান বা অত্যাবশ্যক কাঁচামালের মজুদ বা উভয় কারণে গূরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাব্য সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভ‚ত হয়েছে। তিনটি বাল্টিক প্রজাতন্ত্র (এবং প্রাক্তন এসএসআর) এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া সমন্বিত বাল্টিক সাগর এলাকা, এখন সবাই একটি বর্ধিত ন্যাটো বাহিনীর সদস্য। ভ্লাদিমির পুতিন সঙ্গত কারণে তাদের ন্যাটো সদস্যপদ লোপ করতে চান।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের পাশাপাশি ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সীমান্ত রয়েছে। চীন প্রায় এই সমগ্র সামুদ্রিক বিস্তৃতি এবং এর মধ্যে থাকা দ্বীপগুলির উপর কর্তৃত্ব দাবি করেছে এবং এই অঞ্চলে অন্য দাবিদারদের ক্রমবর্তমান অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বর্তমানে বাইডেনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র সেই দাবিদারদের চীনা ‘গুন্ডামি’ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।
পূর্ব চীন সাগরে জনবসতিহীন দ্বীপগুলি চীন এবং জাপান উভয়ই দাবি করেছে। তাদের প্রত্যেকেই তাদের আধিপত্য জাহির করতে এলাকায় যুদ্ধবিমান ও জাহাজ পাঠিয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি বিøঙ্কেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ওয়াশিংটন জাপানের দাবি স্বীকার করেছে এবং চীন আক্রমণ চালালে জাপানের বাহিনীকে সমর্থন দেবে। ভারত ও চীনের সীমান্ত দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে পর্যায়ক্রমে সংঘর্ষের স্থান। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অবস্থানের প্রতি সহানুভ‚তি প্রকাশ করেছে, সেদেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আংশিকভাবে দাবি করা আর্কটিক অঞ্চলকে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং মূল্যবান খনিজগুলির বিশাল মজুদ বলে মনে করা হয়।
আর্কটিককে রাশিয়া তার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং চীন এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সম্ভাব্য বাণিজ্য পথ হিসেবেও দেখে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো সংঘর্ষ বা সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটেছে এবং এগুলির মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সঙ্ঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা আরও বাড়ছে, যা বয়ে আনবে ভয়াবহ পরিণতি। এবং ইতিহাস বলে যে, বৈশ্বিক ভূরাজনীতির বিরোধ খুব কমই শান্তিপ‚র্ণভাবে শেষ হয়ে থাকে। সূত্র : ট্রুথ আউট। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।