মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ১৭তম দিনে বিশাল রুশ সেনাদল এবং সাঁজোয়া বহর এখন ক্রমশ রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ব্রিটেনের গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বেশিরভাগ রুশ সেনা এখন রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্র থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে।
ছোট ছোট কিছু অগ্রবর্তী দল আরও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা ইউক্রেনের বাহিনীর দিক থেকে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, রুশ রকেট লঞ্চারগুলো এখন কিয়েভের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর দিকে তাক করা। ভারী গোলাবর্ষণের শব্দও শোনা যাচ্ছে। ইউক্রেনের একজন এমপি বিবিসিকে বলেছেন, রুশ আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কিয়েভের মানুষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং রুশরা শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
কিয়েভের দক্ষিণে ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমান ক্ষেত্রের ওপর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ভাসিলকিভ শহরের মেয়র জানিয়েছেন, এই হামলায় রানওয়ে এবং তেলের ডিপো ধ্বংস হয়ে গেছে, একই সঙ্গে পাশে অস্ত্র এবং গোলাবারুদের গুদামেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। ইউক্রেনের আরেকটি উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভ এখনো অবরুদ্ধ, সেখানে তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহরে কোন পানির সরবরাহ নেই, একটি অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাইকোলেভ, যেটি রুশ অধিকৃত শহর খেরসান এবং ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেসার মাঝামাঝি, সেখানেও তীব্র গোলাবর্ষণ চলছে।
ইউক্রেনের সরকার বলছে, শনিবার কয়েকটি মানবিক ত্রাণ করিডোর খোলা যাবে বলে তারা আশা করছে, যাতে বিভিন্ন শহরের রুশ বোমা হামলার মুখে থাকা লোকজন যে পালাতে পারে। ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক জানিয়েছেন, এসব শহর থেকে মানুষকে উদ্ধারের বিষয়টি নির্ভর করবে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি মেনে চলে কীনা, তার ওপর। বিবিসির সংবাদদাতা জেমস ওয়াটারহাউজ বলছেন, রাজধানী কিয়েভের উত্তরে এখন ক্রমাগত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বেশিরভাগ রুশ সেনা সেদিকেই জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বেশিরভাগ রুশ সেনা এখন কিয়েভের উপকণ্ঠ পর্যন্ত চলে এসেছে।
ইউক্রেনের সামরিক অধিনায়কদের আশঙ্কা, রুশ সেনারা কিয়েভের ওপর অনেক ব্যাপক এবং পূর্ণাঙ্গ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা শহরটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করবে, যেটি তারা অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রেও করেছে। তবে সেরকম সক্ষমতা রাশিয়ার বাহিনীর আছে কীনা, সেটা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনের অন্যান্য শহরের মতো এখানেও রুশ বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে।
বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন যে ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছেন, সেটা স্পষ্ট। এবং রাশিয়া যে এই সংঘাতের নতুন একটা পর্যায়ে প্রবেশ করছে, সেটাও স্পষ্ট। কারণ কিয়েভকে ঘিরে তারা বিপুল সমরাস্ত্র জড়ো করেছে- আর্টিলারি, রকেট লঞ্চার, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র- সব ধরণের সমরাস্ত্র। ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, রাশিয়া কীভাবে লড়াই করবে, তার ইঙ্গিত পেতে তাকাতে হবে অতীতে চেচনিয়ার গ্রোজনি বা সিরিয়ার আলেপ্পোতে তারা কী ধরণের কৌশল নিয়েছিল, সেদিকে। এই দুটি শহর দখলের জন্য রুশ সেনাদের প্রতিটি রাস্তায় লড়াই করতে হয়েছে, কিন্তু এর ফলে দুটি শহরই কার্যত মাটিতে মিশে গিয়েছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন কি কিয়েভে সেটা করবেন? ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, এটা বলা কঠিন। কারণ কিয়েভ শুধু ইউক্রেনের রাজধানী নয়, এই শহর প্রাচীন রুশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অংশ, যখন মস্কো বলে কোন শহরের অস্তিত্বই ছিল না, তখন এই কিয়েভই ছিল রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী। প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি কিয়েভ ধ্বংস করে ফেলেন, সেটা রাশিয়ার মানুষ ভালোভাবে নেবে না।
তবে ফ্রাংক গার্ডনারের বিশ্বাস, ইউক্রেন দখলের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন কোন কিছুই বাদ রাখবেন না। ইউক্রেন ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিচ্ছে, এটা দেখার চাইতে তিনি বরং তার প্রতিবেশী দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়াও মেনে নেবেন। তবে ন্যাটোর সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রোজ গোটেমোয়েলার বিবিসিকে বলেছেন, কিয়েভে রাশিয়ার সৈন্যরা সেরকম বড় কোন সাফল্য পাবে কীনা, সেটা নিয়ে তার সংশয় আছে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া যে এখন সিরিয়া থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা আনার চেষ্টা করছে, সেটাও প্রমাণ করে, রাশিয়া এই অভিযানে কত বর্বর একটা কৌশল নিয়েছে। রাশিয়া বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ১৬ হাজার যোদ্ধা আছে, যারা রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা এদের মধ্যে অনেক সিরিয়ান আছে, যারা শহরের গেরিলা লড়াইয়ে বেশ দক্ষ। রোজ গোটেমোয়েলার বলছেন, ‘এগুলো আসলে চরমপন্থি গোষ্ঠী, সিরিয়ায় লড়াই করছিল এরকম লোকজন। যুদ্ধে লিপ্ত সবচেয়ে সহিংস কিছু চরমপন্থি দল।’ সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।