Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন দখলদারিত্বের যুদ্ধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়

একবিংশ শতাব্দীর আধিপত্য যুদ্ধ-৩

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

১৯০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র উভয় ভূ-রাজনৈতিক কৌশলই অনুসরণ করেছে। ইউরোপ ম‚লত ম্যাকিন্ডারের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাপক অভ্যন্তরীণ আশঙ্কা সত্তে¡ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনকে যুদ্ধে অংশ নিতে অ্যাংলো-ফরাসি যুক্তিবিদদের মাধ্যমে এই বলে প্ররোচিত করা হয়েছিল যে, জার্মানির বিজয় বিশ্বকে আধিপত্য করতে সক্ষম একটি একক শক্তির দিকে নিয়ে যাবে এবং তাই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ হুমকির মুখে পড়বে।

একই যুক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টকে ইউরোপে মার্কিন হস্তক্ষেপ সমর্থন করতে বাধ্য করেছিল। এবং তার উত্তরস‚রিদের সোভিয়েত ইউনিয়নকে (বর্তমান রাশিয়া) মহাদেশটিতে আধিপত্য করতে বাধা দেওয়ার জন্য সেখানে যথেষ্ট বাহিনী মোতায়েন করার দিকে পরিচালিত করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি ন্যাটোর বিদ্যমান থাকার অপরিহার্য কারণ। এশিয়া-প্যাসিফিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র ম‚লত দ্বীপগুলির সামরিক ঘাঁটির উপর নিয়ন্ত্রণ এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনী বজায় রাখার চেষ্টা করছে। যদিও, যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো এশিয়ার মূল ভূখন্ডে যুদ্ধে নেমেছে, কিন্তু বিপর্যয় এবং চূড়ান্ত প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তার সমাপ্ত ঘটেছে। ফলস্বরূপ, ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল সমগ্র অঞ্চল জুড়ে দ্বীপগুলির সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখা এবং সেখানে তার অপ্রতিরোধ্য নৌ শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

এ শতাব্দীতে, আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল এবং নিরর্থক আক্রমণের সাথে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান ৯/১১-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে (জিডবিøউটি), ওয়াশিংটনের অনেক কৌশলবিদ দীর্ঘকাল ধরে বৈশ্বিক ভ‚রাজনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত সুদীর্ঘ লক্ষ থেকে একটি বেদনাদায়ক এবং বিপথগামী বিচ্যুতি হিসাবে অভিহিত করেছেন। যখন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ এবং বিদ্রোহ দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, তখন এটি চীন ও রাশিয়াকে তাদের নিজস্ব ভ‚-রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ প্রদান করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতৃত্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধের সাথে তার ধৈর্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ‘মহান-শক্তি প্রতিযোগিতা’ এর একটি নতুন মতবাদ ঘোষণা করে, যা ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য একটি নিখুঁত কৌশল।

২০১৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এস্পার ব্যাখ্যা করেন, ‘মহান শক্তি প্রতিযোগিতার এই নতুন যুগে, কৌশলগত প্রতিযোগীদের উপর আমাদের যুদ্ধের সুবিধাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।’ পেন্টাগন জিডবিøউটিকে গুটিয়ে নেয়ার সাথে সাথে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা আমাদের অগ্রাধিকার অঞ্চলগুলিতে আমাদের বাহিনী এবং সরঞ্জামগুলি পুনরায় নিয়োজিত করার জন্য কাজ করছি, যা আমাদের চীন এবং রাশিয়ার সাথে আরও ভালভাবে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করবে।’ এস্পার বলেন যে, দুটি যুদ্ধক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে: ইউরোপে ক্রমবর্ধমান দৃঢ়, সুসজ্জিত রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং এশিয়ায় আরও শক্তিশালী চীনের বিরুদ্ধে। সেকারনে, এস্পার অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিমান ও নৌবাহিনীর ত্বরান্বিত গঠনের চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আফগান যুদ্ধে পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, বাইডেন প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, যা অন্তত ইউক্রেনের বর্তমান সঙ্কটের আগ পর্যন্ত আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে রাশিয়াকে নয়, চীনকে দেখেছিল। ক্রমবর্ধমান সম্পদ, উন্নত প্রযুক্তিগত ক্ষমতা এবং সর্বদা উন্নত সামরিক বাহিনীর কারণে ভূ-রাজনৈতিক দাবার ছকে চীনকে একাই মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হিসাবে দেখা হয়। হোয়াইট হাউস তার অন্তর্র্বতী ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিক গাইডেন্স মার্চ ২০২১-এ বলেছে, ‘বিশেষ করে, চীন দ্রুত আরো দৃঢ় হয়ে উঠেছে। এটি একমাত্র প্রতিযোগী যা তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তিকে একত্রিত করতে সক্ষম। একটি স্থিতিশীল এবং উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি স্থায়ী চ্যালেঞ্জ।’ সূত্র : ট্রুথ আউট। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ