Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যুদ্ধে কোনও সাহসিকতা নেই

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

এক জীবনে অনেক জীবন বাঁচা যায়। এক জীবনে অনেক জীবন বাঁচানো যায়। আবার এই এক জীবনেই ‘বিশ্বযুদ্ধ’ ঠেকিয়ে দেওয়া যায়! এমনটা আর ক’জনই বা পারেন! যিনি পারেন এই বিশ্ব তাকে বুকে রাখে। যেমনটা পেরেছিলেন জেমস হিলিয়ার বøাউন্ট ওরফে জেমস বøান্ট।
কে এই জেমস বøান্ট? একজন আন্তর্জাতিক পপ তারকা? যার প্রথম অ্যালবাম ‘ব্যাক টু বেডলাম’ বিশ্বে এ পর্যন্ত ১১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে! তার কণ্ঠে ‘ইউ আর বিউটিফুল’ শুনে প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়া যায় বারবার? নাকি যিনি প্রাণের বন্ধু ও আরেক বিশ্ববন্দিত গায়ক এড শিরানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন যে, তাকে গান লেখা শিখিয়ে দিলে তবেই তিনি এডকে স্কি করা শেখাবেন! এসবই গায়ক বøান্টকে নিয়ে কথা বললে আলোচনায় আসবে।
ব্রিটিশ গায়ক-গীতিকার হিসাবে যে বøান্টকে বর্তমানে গোটা দুনিয়া চেনে, সেই বøান্টের আরও একটা ‘অসামান্য’ পরিচয় রয়েছে। সে কথা বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে অতীতে। ইউক্রেনে সাম্প্রতিক রাশিয়ার সামরিক অভিযানের আবহে বøান্টের কথা আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক।
এক অন্য বøান্টকে চেনার জন্য একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। উইল্টশায়ারের টিডওয়ার্থের ৪৯ বছরের বাসিন্দা ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। স্যান্ডহার্স্টের রয়্যাল মিলিটার কলেজ থেকে সেনা প্রশিক্ষণ নিয়ে বøান্ট যোগ দিয়েছিলেন লাইফ গার্ডস রেজিমেন্টে। এখান থেকেই ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় উত্তীর্ণ হন বøান্ট। অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাঠ নিতে তিনি আবার গিয়েছিলেন কানাডার শাফিল্ডে অবস্থিত ব্রিটিশ আর্মি ট্রেনিং ইউনিউটেও। সেখানে বøান্টের রেজিমেন্টের ছয় মাসের পোস্টিং ছিল। বøান্ট সেখানে কমব্যাট ট্রেনিংয়ের অনুশীলন নেন। শিখে নেন কী ভাবে অস্ত্র হাতে শত্রæর মোকাবিলা করতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে।
যোদ্ধা বøান্টকে আসল পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল ১৯৯৯ সালে কসোভোয়। যা বøান্টের জীবন জীবনদর্শন আমূল বদলে দিয়েছিল। ব্রিটিশ সেনার ক্যাভালরি রেজিমেন্টের অন্তর্গত বø্যু অ্যান্ড রয়্যালস স্কোয়াড্রনের কর্মকতা হয়ে ২৫ বছরের বøান্ট ন্যাটোর সঙ্গে মোতায়েন ছিলেন কসোভোতে। ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কর্মকর্তা বøান্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রিস্টিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দখলে আনার।
ঘটনাচক্রে ন্যাটো দখল নেওয়ার আগেই সেই বিমানবন্দর রুশ সেনার কব্জায় চলে এসেছিল। ২০০ রাশিয়ান সেনা অস্ত্র তাক করে ছিলেন বøান্টদের দিকে। বøান্ট ৩০ হাজার ন্যাটো সেনার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ইউনিটের প্রধান ছিলেন তিনিই। বোঝাই যাচ্ছে যে ওই প্রিস্টিনা বিমানবন্দরে স্ট্যান্ড-অফ ঠিক কতটা উত্তপ্ত হয়েছিল সেসময়। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’। যার আক্ষরিক অর্থ, যুদ্ধ না করে সূচের অগ্রভাগ সমান মাটিও ছেড়ে দেবে না কেউ। যদিও ন্যাটো ইচ্ছা করলে তুড়ি মেরে রুশ সেনাকে গুঁড়িয়ে সেদিন বিমানবন্দরের দখল নিতে পারত। ২০০ সেনা বনাম ৩০ হাজার সেনা! এক অসম লড়াই! কে বিজয়ী হবে তার আগাম অনুমানের জন্য কোনও পুরস্কার নেই।
লড়াইয়ের অদম্য নেশা ও দখল নেওয়ার অমোঘ টান থেকেই শুরু হবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ! মন সায় দেয়নি বøান্টের! বøান্ট আক্রমণের পথ বেছে নেননি। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বহু বছরের রাজনৈতিক শত্রæতার পাঠ নিশ্চই তারও অজানা ছিল না। এর মধ্যেই কিন্তু বøান্টের কানে তার উর্ধ্বতনের নির্দেশ রেডিও বার্তায় চলে এসেছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছিল বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা। এই প্রসঙ্গে বিবিসি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বøান্ট বলেছেন, ‘জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্কের কাছ থেকে সরাসরি নির্দেশ এসেছিল রাশিয়ান সেনাদের পরাভ‚ত করার। বিভিন্ন শব্দ উনি ব্যবহার করেছিলন, যা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল তখন। রেডিওতে বলা হয়েছিল রাশিয়ানদের ধ্বংস করে দেওয়ার কথা।’
যোদ্ধা বøান্টের মানবিক হৃদয় একবারও কোর্ট মার্শাল হওয়ার ভয়ে ভীত ছিল না। সরাসরি ওয়েসলি ক্লার্কের নির্দেশ অমান্য করেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা থেকে বøান্টকে রুখে দিতে সমর্থন করেছিলেন তার দলের আরেক মানবিক যোদ্ধা জেনারেল মাইক জ্যাকসন। সেই মুহূর্তে তিনি বøান্টকে বলেছিলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার জন্য আমার সৈন্যদের দায়ী করতে পারব না।’ এমনটাই সাক্ষাৎকারে জানান বøান্ট। সেই চর্চিত স্ট্যান্ড-অফে রুশ সেনা কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিল আগেই। বøান্টদের তারা বলেছিলেন যে, তাদের পানি ও খাবার শেষ হয়ে গেছে। যে বিমানবন্দরের দখল নিয়ে এই লড়াই, তা তারা ভাগ করে নেওয়ার অনুমতিও চেয়েছিলেন।
বøান্টের কথা বলতে গেলে কসোভোতেই ফিরতে হবে। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের গিটার নিয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গে করে! স্ট্যান্ড-অফরে সময় প্রায়ই সেনাবাহিনীর ট্যাংকের পাশে গিটার নিয়ে বসে পড়তেন। বার করে নিতেন কাগজ-কলম। কসোভার স্থানীয় মানুষরাই সেসময় বøান্টদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করতেন। সহযোদ্ধা ও স্থানীয়দের গিটার বাজিয়ে গান শোনাতেন বøান্ট। যুদ্ধের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক যোদ্ধা এভাবে শান্তির বার্তা দিচ্ছেন! এমনটা কী আদৌ দেখা যায়!
রণাঙ্গনে দাঁড়িয়ে বøান্টই বলতে পারেন, ‘যুদ্ধে কোনও সাহসিকতা নেই।’ তাই তো তিনিই লিখতে পারেন ‘নো ব্রেভারি’র মতো গায়ে কাঁটা দেওয়া, চোখে পানি আনা গান। সামরিক পোশাকেও বøান্টের চোখে বারবার যুদ্ধবিধ্বস্তদের দুঃখ আর দুঃখই শুধু ফুটে উঠেছে। নাহলে রণাঙ্গনে দাঁড়িয়ে তিনি লিখতেন না, ‘এবং আমি আর কোন সাহসিকতা দেখতে পাচ্ছি না/তোমার চোখে আর কোন সাহসিকতা নেই/শুধু কষ্ট/এবং আমি কোন সাহসিকতা দেখছি না/তোমার চোখে আর কোন সাহসিকতা নেই/শুধু কষ্ট/শুধু দুঃখ’। বøান্ট আজও যুদ্ধ চান না। নাহলে সপ্তাহ খানেক আগে এই গানের ইউটিউব লিঙ্কই টুইট করে লিখতেন না ‘একটি যুদ্ধের গান!’ সূত্র : মিরর ইউকে, দ্য গার্ডিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুদ্ধ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ