মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দৃশ্য ১- ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর সংসদে যাওয়া শুরু ভগবন্ত মানের। ক'দিন পরই সাংসদদের একাংশের অভিযোগ, ভগবন্ত নাকি মদ্যপ অবস্থায় সংসদে আসেন। তাঁকে সতর্ক করা হোক। পাঞ্জাবের সাংসদ পেলেন নতুন নাম-'পেগবন্ত মান'!
দৃশ্য ২- ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভাটিন্ডার এক সভায় টলমল করছে পা। সমবেত জনতার উদ্দেশে 'ফ্লাইং কিস' ছুড়ে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়লেন ভগবন্ত। নিজেকে হেয় করে এ ভাবেই লোক হাসিয়েছিলেন সাবেক কমেডিয়ান।
দৃশ্য ৩- ২০১৯ সালে ভগবন্ত মানকে আম আদমি পার্টির অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবে সামনে নিয়ে এলেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জানালেন, এই ভগবন্ত এক্কেবারে অন্য মানুষ। রিহ্যাব সেন্টার ঘুরে আসার পর মদ আর ছোঁন না তিনি। তার পরের আড়াই বছর সত্যিই এক অন্য ভগবন্তকে দেখলেন পাঞ্জাবের মানুষ। যে ভগবন্তকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে চেয়ে ভোট দিলেন ৯৩ শতাংশ আপ-সমর্থক। আর এখন সেই সাবেক কমেডিয়ান ভগবন্ত-ই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বসতে চলেছেন পাঞ্জাবের তখ্তে।
সাঙ্গরুর সাতোজ গ্রামে স্কুলশিক্ষকের পরিবারে জন্ম ভগবন্তের। ছোট থেকেই লোকজনকে হাসিয়ে মজা পান। হাস্যরসের মোড়কে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে জনপ্রিয়তা পেলেন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে। শহিদ উধম সিং গভর্নমেন্ট কলেজে বি.কম পড়াকালীন মাত্র ১৮ বছর বয়সে প্রথম কমেডির অডিও ক্যাসেট প্রকাশ। তার পর টেলিভিশন শো 'জুগনু মস্ত মস্ত', মুহূর্তে যার টিআরপি আকাশছোঁয়া। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ হয়ে উঠলেন ভগবন্ত মান।
কমেডিয়ান মানের কেরিয়ার যখন শিখরে, তখনই আচমকা সবকিছু ছেড়ে রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত। মনপ্রীত সিং বাদলের 'পিপলস পার্টি অফ পাঞ্জাব'-এ যোগ দিলেন ভগবন্ত। সালটা ২০১১। পরের বছর লেহরাগাগ্গা থেকে বিধানসভা ভোটে লড়া, যদিও শুরুটা হার দিয়েই হয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেসের হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন মনপ্রীত সিং বাদল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত ভগবন্তের পছন্দ হয়নি। বাদলের দল ছেড়ে কেজরিওয়ালের আপের হাত ধরলেন ভগবন্ত। বাকিটা ইতিহাস। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে নিজের ভিটে সাঙ্গরুর থেকে দাঁড়িয়ে অকালি নেতা এস এস ধিন্দসার বিরুদ্ধে দু'লক্ষ ভোটে জিতলেন ভগবন্ত।
২০১৭-এর বিধানসভা ভোটে আপের প্রচারের অন্যতম মুখ হয়ে উঠলেন ভগবন্ত। নেশার কারণে বিতর্কে জড়ালেন বটে, কিন্তু তা ভগবন্তের জনপ্রিয়তাকে টাল খাওয়াতে পারেনি। আর রিহ্যাব থেকে ফেরা ভগবন্ত এ বারের ভোট প্রচারে একেবারে অন্য মানুষ। ফরচুনারের বনেটের উপর উঠে প্রচার নেই, নিম্নরুচির জোকসও বাদ, শুধু শের-শায়েরিতে বিরোধীদের কাত করার চেষ্টা। আর তাতে ফলও হলো। প্রথমত, আপের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে উঠে আসা। দ্বিতীয়ত, ধুরি থেকে দাঁড়িয়ে এ বারের বিধানসভা ভোটে ৫৮ হাজার ভোটে জয়!
'পাঞ্জাব নু পাঞ্জাব বানান দি লড়াই', শহিদ ভগৎ সিংয়ের প্রকৃত পাঞ্জাব ফিরিয়ে আনার এই স্লোগানেই কিস্তিমাত করলেন মান। বৃহস্পতিবার ধুরিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন, রাজভবনে শপথগ্রহণ করবেন না তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার শপথগ্রহণ হবে ভগৎ সিংয়ের গ্রাম খাটকরকালানে। আর কোনও সরকারি অফিসে থাকবে না মুখ্যমন্ত্রী মানের ছবি, বদলে থাকবে ভগৎ সিং আর বি আর আম্বেদকরের ছবি।
যে বিরোধীরা একদিন তাকে নেশাড়ু বলে কটাক্ষ করেছিলেন, তাদের উদ্দেশে মানের বার্তা, ''ওদের ক্ষমা করে দিয়েছি। ব্যক্তিগত আক্রমণ ওদের অস্ত্র ছিল, কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করেনি।'' এক মাসে পাঞ্জাবে বদল আনার স্বপ্ন দেখিয়ে পঞ্চনদের তীরে তখ্তে বসতে চলেছেন ভগবন্ত।
কিন্তু কেজরিয়ালের ছায়া থেকে বেরোতে পারবেন কি তিনি? রাজনীতিকদের একাংশের মতে, মানকে হাতের পুতুল বানিয়ে রিমোট কন্ট্রোলে পাঞ্জাবের সরকার চালাবেন কেজরিওয়ালই। ভগবন্ত কী বলছেন? পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, নিজের মতো করে পাঞ্জাবের সব শ্রেণির মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন তিনি। সূত্র: টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।