Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই প্রকল্পে বাড়ছে ব্যয়

রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২২, ১২:১৯ এএম

রেলওয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ লেভেল ক্রসিংই রয়েছে অরক্ষিত। অনেক স্থানেই গেটকিপার নেই। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের। ৬৫৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়নে ২০১৫ সালে দুটি প্রকল্প নেয়া হয়। কয়েকবছর পেরোলেও প্রকল্পগুলো শেষ হয়নি। তবে দফায় দফায় বাড়ছে প্রকল্প ব্যয়। সারাদেশে লেভেল ক্রসিং রয়েছে দুই হাজার ৮৫৬টি। এর মধ্যে রেলওয়ে দেখাশোনা করে এক হাজার ৪৫টি। এগুলোর মধ্যে আবার ৩৬২টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর বাইরেও অনেক লেভেল ক্রসিং আছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিংগুলোর পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন শীর্ষক দুইটি প্রকল্প নেয়া হয়।

ইতোমধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন রেলওয়ে গেটকিপাররা। গতকাল ১২তম দিনে চলছে তাদের অনশন। দিন যত বাড়ছে অসুস্থতার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ১৫ জন আশঙ্কাজনক এবং শতাধিক গেটকিপার গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। রাজধানীর কমলাপুর প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন রেলওয়ে গেটকিপাররা। বাংলাদেশ রেলওয়ের মানউন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১ হাজার ৮৮৯ জন গেটকিপারের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরার দাবিতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রেলপোষ্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে গেটকিপার রাজস্বকরণ বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের উদ্যোগে আন্দোলন হচ্ছে।

আন্দোলনের সমন্বয়কারী মো. আল মামুন বলেন, কমলাপুরের খোলা আকাশের নিচে গেটকিপাররা অনশন চালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার কোনো সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা আসেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেটকিপাররা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প দুইটি শেষ করার কথা থাকলেও কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছর জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে আরও তিন বছর প্রকল্প দুইটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১০ বছরে গিয়ে ঠেকবে প্রকল্প দুইটির মেয়াদ। পাশাপাশি দুই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ২২১ কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য পূর্বাঞ্চলের প্রকল্পটি চতুর্থ দফা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর পশ্চিমাঞ্চলের প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে পূর্বাঞ্চলে ৩২৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন ও এক হাজার ৩৮ গেটকিপার নিয়োগের কথা ছিল। এজন্য ২০১৫ সালের ২৫ জুন অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। পরে তা বিশেষ সংশোধনের নামে বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়। প্রথম সংশোধনে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ও দ্বিতীয় সংশোধনে ১০৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি তৃতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় নিয়োজিত গেটকিপাররা বিভিন্ন লেভেল ক্রসিংয়ে কাজ করছেন। প্রকল্পের অবকাঠামোসহ অন্যান্য উন্নয়ন ২০১৯ সালের জুনেই শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত গেটকিপারদের দুই বছরের বেতন-ভাতার সংস্থান ছিল। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও গেটকিপারদের কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ী করার সুযোগ নেই। তাই জনবলের পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এজন্য প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পরে তা অর্থ বিভাগে যাবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে গেটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে অন্ততপক্ষে দুই বছর লাগবে। ওই সময় তাদের বেতন-ভাতা চালিয়ে নিতে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩২৬টি ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন ছাড়াও ৮৫১ অস্থায়ী গেটকিপার নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। এজন্য ২০১৫ সালের ২৫ জুন অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পরে তা প্রথম সংশোধনের সময় বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। স¤প্রতি প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দুই প্রকল্প মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। নতুন প্রস্তাব অনুমোদন হলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ২২০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ২২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেছেন, গেটকিপারদের চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে ট্রেন পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে। দুই প্রকল্পের আওতায় গেটকিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাই প্রকল্প দুটি আগামী জুনে শেষ করা হচ্ছে না। এজন্য প্রকল্প দুইটির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নিয়োগকৃত গেটকিপারদের বিভাগীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পদায়ন করা হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • Md.Jillur Rahman ১১ মার্চ, ২০২২, ১১:২৬ পিএম says : 0
    আর কতকাল ঝুলিয়ে রাখা হবে আমাদের। প্রধানমন্ত্রীর নিদেশনা বাস্তবায়ন চাই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রি অতি দ্রুত রাজস্ব করে দিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেলওয়ে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ