Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোণঠাসা ইউক্রেন বাহিনী

ন্যাটোয় যোগাদানের অভিপ্রায় প্রত্যাহার জেলেনস্কির : আলোচনার জন্য দরজা উন্মুক্ত

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ/ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২২, ১২:৩০ এএম

বিভিন্ন ফ্রন্টে রাশিয়ার অগ্রাভিযান অব্যাহত
নিষেধাজ্ঞা মার্কিন অর্থনীতিতেও আঘাত হানতে পারে
ইউক্রেনের জন্য পোল্যান্ডের যুদ্ধবিমান গ্রহণযোগ্য নয় : পেন্টাগন
বাইডেনকে প্রত্যাখ্যান সউদী, আমিরাতের নেতাদের

নিজেদের দেশকে নিরাপদ রাখার প্রত্যয়ে অভিযান পরিচালনাকারী রাশিয়ান বাহিনী একাধিক ফ্রন্টে অল্প অল্প করে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তারা মধ্য ইউক্রেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলের কাছাকাছি বলে মনে হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ডিনিপ্রো শহর। বারো দিনের যুদ্ধ শেষে বিধ্বস্ত দেশের পরিস্থিতি দেখে অবশেষে সুর নরম করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার রাতে তিনি জানালেন, আলোচনায় বসার জন্য দরজা খুলে রেখেছেন তিনি। এমনকি, ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য যে উৎসাহ তার দেশ দেখিয়েছিল তা থেকেও আপাতত পিছিয়ে আসছেন তারা। সমঝোতা হতে পারে ডনবাস এলাকা নিয়েও।

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন কর্তৃক ঘোষিত রাশিয়ান তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা মার্কিন অর্থনীতির জন্য অর্থবহ পরিণতি হতে পারে। ইতোমধ্যে সেখানে যখন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এবং গ্যাসের দামও বেড়েছে। যদিও সেই প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

পেন্টাগন মঙ্গলবার পোল্যান্ডের যুদ্ধ বিমান দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়ার অভিযানের জবাব পোল্যান্ড আকষ্মিকভাবে ঘোষণা দিয়েছিলো যে, তারা ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দেবে। এদিকে মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মধ্যপ্রাচ্য এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ফোনালাপ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

একটি আশ্চর্যজনক পদক্ষেপে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৩ ফেব্রæয়ারি ঘোষণা করেছে যে, তারা ১২টি এল-১৫ উন্নত জেট প্রশিক্ষণ বিমান কেনার জন্য চীনের ন্যাশনাল অ্যারো-টেকনোলজি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএটিআইসি) এর সাথে চুক্তি করার পরিকল্পনা করছে। চুক্তিতে আরো ৩৬টি বিমান কেনার বিকল্পও রাখা হবে। রাশিয়া যে শহরটি দখলের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে সেই ডিনিপ্রো শহরটি একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। যদি রাশিয়ান সৈন্যরা উত্তর দিক থেকে, খারকিভের কাছে এবং দক্ষিণ থেকে ক্রিমিয়া থেকে উভয় দিকে অগ্রসর হতে পারে, তবে তারা পূর্বে ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে বা তাদের পিছু হটতে বাধ্য করতে পারে।

রোচান কনসাল্টিংয়ের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কনরাড মুজিকার বিশ্লেষণ মতে, যদি পূর্বে ইউক্রেনীয় বাহিনী ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার না করে, তবে শিগগিরই তাদেরকে সম্ভাব্যভাবে ঘিরে ফেলা এবং ধ্বংস করা হতে পারে। ১৩ দিন আগে অভিযান শুরুর পর থেকে দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ান প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি করেছে এবং রাশিয়ান বাহিনী শুক্রবার জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর মেলিটোপোলের উত্তরে চাপ অব্যাহত রেখেছে।

মঙ্গলবার আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের মুখপাত্র ইভান আরেফিভের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ান সৈন্যরা ছোট শহর পোলোহির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং শহরটিতে ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎ ও খাবার পানি সরকরাহ বন্ধ রয়েছে। সাম্প্রতিক অগ্রগতির একটি লক্ষ্য রাশিয়ান বাহিনীর তিনটি দলকে একত্রিত করা বলে মনে হচ্ছে: ক্রিমিয়া থেকে দক্ষিণে সৈন্যরা আসছে; সৈন্যরা খারকিভের কাছাকাছি থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে; এবং রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডনবাস অঞ্চলে সামনের সারিতে ঠেলে দিচ্ছে।

সুর নরম করে ন্যাটোয় যোগের দাবি ছাড়লেন জেলেনস্কি! : বারো দিনের যুদ্ধশেষে বিধ্বস্ত দেশের পরিস্থিতি দেখে অবশেষে সুর নরম করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। মঙ্গলবার রাতে তিনি জানালেন, আলোচনায় বসার জন্য দরজা খুলে রেখেছেন তিনি। এমনকি, ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য যে উৎসাহ তার দেশ দেখিয়েছিল তা থেকেও আপাতত পিছিয়ে আসছেন তারা। সমঝোতা হতে পারে ডনবাস এলাকা নিয়েও।

জেলেনস্কির দেশের ন্যাটো-ভুক্ত হওয়ার জন্য ‘ইচ্ছাপ্রকাশ’-ই অন্যতম প্রধান ও স্পর্শকাতর কারণ ছিল ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের। তবে মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি এবং তার দেশ ন্যাটোভুক্ত হওয়ার দাবি ছেড়ে সরে আসছেন। অপরদিকে, মস্কোর ইচ্ছায় সায় দিয়ে ইউক্রেনের পূর্বপ্রান্তের লুহানস্ক এবং ডনেৎস অঞ্চল, যা প্রধানত দেশের ভিতর ‘রুশ বিদ্রোহী’-দের এলাকা হিসাবে পরিচিত, সেই ডনবাস অঞ্চল নিয়েও আলোচনা করতে সম্মতি দিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য, ২৪ ফেব্রæয়ারি, ইউক্রেনে হামলার আগে এই দুই অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রুশ অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করে দেন।

এই বিষয়টিকে কটাক্ষ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘সিউডো রিপাবলিক’ রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনও দেশই লুহানস্ক এবং ডনেৎস অঞ্চলকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এখন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টে বক্তব্য, ‘ন্যাটো ইউক্রেনকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়। এই বিষয়টি বোঝার পরই আমি অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছি। ন্যাটো জোটও এখন আমাদের গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছে কারণ তারা রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ শত্রুতায় যেতে চাইছে না।’

জেলেনস্কির বক্তব্য, তিনি এমন একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে পরিচিত হতে চান না, যারা হাঁটু মুড়ে বসে কোনো কিছুর জন্য ভিক্ষা চাইছে। এদিন জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলতে চাই। তবে লুহানস্ক এবং ডনেৎস অঞ্চলকে রাশিয়ার প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা নিয়েও আমরা কথা বলতেই পারি।’
নিষেধাজ্ঞা মার্কিন অর্থনীতিতেও আঘাত হানতে পারে : মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন কর্তৃক ঘোষিত রাশিয়ান তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা মার্কিন অর্থনীতির জন্য অর্থবহ পরিণতি হতে পারে। ইতোমধ্যে সেখানে যখন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এবং গ্যাসের দামও বেড়েছে। যদিও সেই প্রভাব কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে বাইডেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার তেল-গ্যাস এবং জ্বালানির সব ধরনের নিষিদ্ধ করছি।’ তিনি বলেছিলেন যে, পরিকল্পনাটি রাশিয়ান অর্থনীতির ‘প্রধান ধমনী’ লক্ষ্য করবে। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, এ পদক্ষেপ সম্ভবত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেবে, তিনি সেই বাস্তবতার জন্য রাশিয়ান আগ্রাসনকে দায়ী করেছেন। রাশিয়ার তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা আমদানিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। এটি রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নতুন মার্কিন বিনিয়োগকেও নিষিদ্ধ করে। এবং এটি আমেরিকানদের অর্থায়ন বা বিদেশী সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করা থেকে বাধা দেয় যারা রাশিয়ায় শক্তি উৎপাদন করতে বিনিয়োগ করছে।

ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় রাশিয়া থেকে তার সরবরাহের অনেক বেশি আমদানি করে। তবে জ্বালানির বাজার বিশ্বব্যাপী এবং নিষেধাজ্ঞার হুমকি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পণ্যের দামকে উচ্চতর করেছে। ইনফ্লেশন ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ওমাইর শরীফ বলেন, ‘বিষয়গুলো খুবই অস্থির হয়ে উঠেছে।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেলের দামের কতটা বৃদ্ধি এই নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার পেছনে রয়েছে তা বলা কঠিন। কিন্তু ইউক্রেনের সংঘাত স্পষ্টতই গ্যাসের দামকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এতটাই যে এই মাসে জাতীয় গড় গ্যাসের দাম প্রায় ৪ ডলার ৫০ সেন্ট বাড়তে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

যদিও তেল ও গ্যাস নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতিকে উচ্চতর করতে পারে, অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে, অর্থনৈতিক পরিণতির স্কেল কীভাবে এটি গঠন করা হয়েছিল তার ওপর বড় অংশে নির্ভর করবে। উদাহরণস্বরূপ, এটি সম্ভবত বিশ্বব্যাপী এবং বাজারে একটি বড় পার্থক্য আনবে যদি ইউরোপীয়রা রাশিয়ান তেল এবং গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করে এবং এটি ঘটবে কিনা বা কতটা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেক দেশে একটি নিষেধাজ্ঞা ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহকে মারাত্মকভাবে হ্রাস করবে এবং ব্যাহত করবে এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে,’ ক্যারোলিন বেইন, ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের একজন অর্থনীতিবিদ, ঘোষণার আগে একটি গবেষণা নোটে লিখেছেন, অনুমান করেন যে, দাম বৈশ্বিক তেলের বেঞ্চমার্ক, ব্রেন্ট ক্রুড, সেই ক্ষেত্রে ব্যারেল প্রতি প্রায় ১৬০ ডলারে স্থির হবে।

মঙ্গলবার দিনের মাঝামাঝি ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ৬ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৩০ ডলার প্রতি ব্যারেল হয়েছে। তুলনা করে, ২০২১ সালের শেষে এটি ব্যারেল প্রতি প্রায় ৭৮ ডলার ছিল। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সেই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। ‘এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও খরচ বাড়বে,’ বাইডেন বলেছিলেন, ‘রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা একইভাবে এটি বোঝে।’

ইউক্রেনের জন্য পোল্যান্ডের যুদ্ধবিমান গ্রহণযোগ্য নয় : পেন্টাগন : পেন্টাগন মঙ্গলবার পোল্যান্ডের যুদ্ধ বিমান দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রাশিয়ার অভিযানের জবাবে পোল্যান্ড আকষ্মিকভাবে ঘোষণা দিয়েছিলো যে, তারা ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দেবে।
পোল্যান্ডের এ প্রস্তাব রাশিয়ার সাথে একটি বিস্তৃত যুদ্ধে আটকা পড়া এড়ানোর পাশাপাশি ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের উৎসাহিত করার জন্য ন্যাটো মিত্রদের দ্বারা অসমতার একটি বিরল প্রদর্শন। অর্থাৎ, ন্যাটো নিজেরা যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না, কিন্তু ইউক্রেনকে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন যে, জার্মানির ইউএস রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে ২৮টি জেট বিমান সরবরাহ করতে পোল্যান্ড যে ঘোষণা দিয়েছে, তা ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়ার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মার্কিন এবং ন্যাটো ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

‘আমরা পোল্যান্ড এবং আমাদের অন্যান্য ন্যাটো মিত্রদের সাথে এই ইস্যুটি এবং এটি যে কঠিন লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো উপস্থাপন করে সে সম্পর্কে পরামর্শ চালিয়ে যাব, তবে আমরা পোল্যান্ডের প্রস্তাবটি কোনভাবে কার্যকরী বলে বিশ্বাস করি না,’ কিরবি একটি বিবৃতিতে বলেছেন। আরো যুদ্ধবিমান দেয়ার প্রস্তাবিত উপহার প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রুশ হামলার মধ্যে ইউক্রেনীয়দের মনোবল বৃদ্ধি করবে। তবে এটি ইউক্রেনের বাইরেও যুদ্ধ বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকে সমর্থন করা যুদ্ধে যোগদানের সমতুল্য এবং তারা এর প্রতিশোধ নিতে পারে।

বাইডেনকে প্রত্যাখ্যান সউদী, আমিরাতের নেতাদের : মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মধ্যপ্রাচ্য এবং মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ফোনালাপ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বাইডেন এবং সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে একটি ফোনালাপ সম্পর্কে একজন মার্কিন কর্মকর্তা জার্নালকে বলেছেন, ‘দুইজনের মধ্যে একটি ফোনালাপ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘সউদী তেল কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরুর অংশ হিসাবে এই ফোনালাপ হওয়ার কথা ছিল।’
কর্মকর্তাদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদও বাইডেনের একটি কল প্রত্যাখ্যান করেছেন। কর্মকর্তারা আউটলেটকে বলেছিলেন যে, ইয়েমেনে যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের অভাব এবং ইরানের পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে পুনরুজ্জীবিত আলোচনার কারণে দুটি উপসাগরীয় দেশের সাথে মার্কিন সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ করছে কারণ কিছু দেশ রাশিয়ার অভিযানের বিষয়ে নিরপেক্ষ ছিল। রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করার কারণে ওয়াশিংটন সম্ভাব্য তেল আলোচনার জন্য ইরান, সউদী আরব এবং ভেনিজুয়েলার দিকে তাকিয়ে আছে।

সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়েই বলেছে যে, তারা রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থার সম্মতির চেয়ে বেশি তেল উৎপাদন করবে না।

নিষেধাজ্ঞার লাঠি শান্তি আনবে না : নিন্দা করে চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বুধবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা অর্থনৈতিক সংশয় সৃষ্টি করবে যা সব পক্ষকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে বাধ্য।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘চীন অবশ্যই একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে যা আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে নয়। নিষেধাজ্ঞার লাঠি ব্রান্ডিং করা শান্তি ও নিরাপত্তা আনবে না। এটি শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতি এবং জীবনমানের জন্য গুরুতর সমস্যার দিকে নিয়ে যাবে’।

ক‚টনীতিক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এহেন পরিস্থিতিতে সবাই হেরে যায়। নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র বিভাজন এবং সংঘর্ষকে তীব্র করবে’।
তিনি উপসংহারে বলেন, ‘চীন এবং রাশিয়া জ্বালানি খাতে স্থিতিশীল সহযোগিতা বজায় রেখেছে এবং আমরা সমতা, পারস্পরিক সম্মান এবং সুবিধার নীতির ভিত্তিতে স্বাভাবিক বাণিজ্য মিথস্ক্রিয়া চালিয়ে যাব এবং এর মধ্যে তেল ও গ্যাস খাত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনাকে সমর্থন করে বেইজিং : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং অস্থিরতা তীব্র হওয়ায় ‘সর্বোচ্চ সংযম’ করার আহবান জানিয়েছেন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘সর্বোচ্চ সংযম’ করার আহবান জানিয়েছেন এবং বলেছেন ‘ইউরোপে যুদ্ধের আগুন আবার জ্বলতে দেখে বেইজিংকে কষ্ট দেয়’।

চীনের রাষ্ট্রীয় স¤প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি জানিয়েছে, শি গত মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলৎজের সাথে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেছেন, তিনটি দেশের উচিত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনাকে যৌথভাবে সমর্থন করা।
চীনা নেতা ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটিকে ক্রমবর্ধমান হওয়া বা ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিটকে যাওয়া; প্রতিরোধ করা উচিত।

শি আরো বলেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে কাজ করা উচিত এবং বৈশ্বিক অর্থায়ন, জ্বালানি সরবরাহ, পরিবহন এবং সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতার উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এক বিবৃতিতে, জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন: ‘চ্যান্সেলর শুলৎজ, প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ এবং প্রেসিডেন্ট শি বিরোধের ক‚টনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে সমস্ত আলোচনাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করতে সম্মত হয়েছেন।
‘তিন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান মানবিক ত্রাণ এবং বিতর্কিত এলাকায় প্রবেশাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন’ মুখপাত্র বলেছেন, তাদের তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধ শেষ করার জন্য আরো প্রচেষ্টার সমন্বয়ের জন্য ঘনিষ্ঠ পরামর্শে প্রবেশ করবেন।

ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার নিন্দা করতে বা এটিকে আগ্রাসন বলতে অস্বীকার করা চীন বারবার রাশিয়ার ওপর অবৈধ নিষেধাজ্ঞা হিসাবে বর্ণনা করার বিরোধিতা প্রকাশ করেছে। সূত্র : রয়টার্স, এপি, তাস, দ্য হিল, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১০ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৪ এএম says : 0
    বললেই হয় শর্ত মেনে নিতে রাজি তাহা হলেই তো যুদ্ধ বন্ধ করে দেবে রাশিয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১০ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৫ এএম says : 0
    বললেই হয় শর্ত মেনে নিতে রাজি তাহা হলেই তো যুদ্ধ বন্ধ করে দেবে রাশিয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Ur Rashid Harun ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    ইউক্রেন যুদ্ধে জডায় নি রাশিয়া তার উপর আক্রমণ করে ইউক্রেনে র উপর অন্যায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় হিটলারের মতো হয়তো জান মালের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে কিছু সর্ত মেনে শান্তি চায় তার মানে এই নয় যে ইউক্রেনে র সরকার বা জনগণ বাকি জীবন এই অন্যায় ভুলে যাবে এই যুদ্ধ আগামী তে ইউক্রেনে র জাতীয় দিবস হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Adib Mallick ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    রাশিয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর হলে, আলোচনার মাধ্যমেই এই বিরোধের অবসান ঘটবে যুদ্ধ আর দীর্ঘায়িত হবে না। যুদ্ধ মানেই উভয়পক্ষের প্রাণহানি সম্পদ ধ্বংস। আশাকরি যুদ্ধবাজ দীর্ঘায়িত হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Palash ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে যা বাঁশ দেওয়া দরকার, পশ্চিমা বিশ্ব দিয়ে ফেলেছে। তাদের উদ্দেশ্য সফল। এখন আপোষ করবেই। তবে রাশিয়ার উচিত নতুন শর্ত আরোপ করা- সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hamidul Khaja ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    ইউক্রেন এখন উভয়সংকটে আছে। যেখানে দেশের জানমালের চরম ক্ষতি হচ্ছে। সেখানে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বর্তমান ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও তাহলে পরাজয় হতে পারে। তবে দেশের জনগণের জানমালের ভালোর জন্য সে পরাজয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubul Hoque ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরায্য উভয় রাশিয়া র বিরুদ্ধে কোয়ালিশন গঠনের চেষ্টা করছে যেমন করেছিল ইরাকে র বিরুদ্ধে কিন্তু রাশিয়া তো আর ইরাক নয় যা ইচ্ছা তাই করবেন ভালো মানুষের ন্যায় কথা বলে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jakir Al Faruki ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৮ এএম says : 0
    জেলেনস্কি একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক। সম্প্রসারণবাদী শক্তির হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তার ত্যাগ অতুলনীয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মো রিয়াদ জমাদার ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৮ এএম says : 0
    আহ! পশ্চিমা সাম্রাজ্যের ধারাবাহিক পতন! যার শুরু আফগানিস্তান দিয়ে!
    Total Reply(0) Reply
  • Towkir Ahamed ১০ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৯ এএম says : 0
    যুদ্ধ শুরুর আগে বহুত সাবধান করেছি এটা কিন্তু রাশিয়া,,এটা সিকিম নয়,,,সবাই জানে ১০০%নিশ্চিত এই যুদ্ধে রাশিয়াই ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবে,,কারণ এগুলা জানা উত্তর আমাদের,,তারপরও লেগে গেলেন,,সুখে থাকলে ভূতে কিলাই তো,,,আমেরিকা মিলিটারি গ্লোবাল র‍্যাংকিংয়ে ১ থাকা স্বত্তেও রাশিয়াকে ভয় পাই,,,কারণ আমেরিকার নিউক্লিয়ার পাওয়ার আছে ৭২০০ আর রাশিয়ার আছে ৭৮০০+
    Total Reply(0) Reply
  • Mominul Hoque ১০ মার্চ, ২০২২, ১০:১২ এএম says : 0
    প্রথম এবং প্রধান ভুলটি ইউক্রেনই করেছে, তাদের বুঝা উচিত ছিলো পিছন থেকে শয়তানী প্রেতাত্মারা উস্কানী দিচ্ছে। এতে ইউক্রেনেরই ক্ষতি! আর ইউরোপ-আমেরিকা মিলে বর্তমান রাশিয়া অথবা চীন’এর কোন কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহ না করুক এই ধরনের কিছু করতে গেলে পৃথিবীই কি হবে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেই রেখেছেন- “যেই পৃথিবীতে রাশিয়া থাকবে না, সেখানে আর কেউই থাকতে পারবে না” এটি থেকেই অনুমিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ