পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইউক্রেন থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়া গতকাল সোমবার রাজধানী কিয়েভসহ চারটি শহরে আরো একটি যুদ্ধবিরতি এবং কয়েকটি মানবিক করিডোর ঘোষণা করেছে। বিবদমান দু’টি দেশের মধ্যে চলমান আলোচনার আবহে এটা এ ধরনের তৃতীয় সাময়িক যুদ্ধবিরতি। মানবিক করিডোর খোলার ব্যাপারে গত সপ্তাহের বৈঠকে মীমাংসা হয়। এর আগে মানবিক করিডোর খোলার জন্য রাশিয়া আরো দু’দফা ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেই করিডোর নিশ্চিত করতে যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি দরকার তা পালন না করার জন্য দু’ক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছে। রাশিয়া বলছে, তারা মোট ছয়টি মানবিক করিডোর খুলেছে, কিন্তু ইউক্রেন সরকার অভিযোগ করছে এসব করিডোরের সবই রাশিয়া এবং বেলারুশমুখী।
সপ্তাহান্তে বেসামরিক নাগরিকদের অবরুদ্ধ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ পথ তৈরির প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। কিন্তু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার একটি নতুন চাপ ঘোষণা করে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের কিইভের রাজধানী, দক্ষিণের বন্দর শহর মারিউপোল এবং খারকিভ ও সুমি শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের সাথে এদিন বেলারুশে তৃতীয় দফা আলোচনা করেছে রাশিয়া। এর আগে রুশ প্রতিনিধিদল মস্কো থেকে বেলারুশের শহরে এসে পৌঁছায়। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় আলোচনা শুরু করে বিবদমান দু’টি দলের প্রতিনিধিরা।
রুশ-ইউক্রেন সংলাপের ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য, ইউক্রেনীয় পিপলস সার্ভেন্ট পার্টির সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান ডেভিড আরাখামিয়া বলেছেন, আগামি ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ন্যাটোতে যোগ দেবে না তার দেশ। তিনি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে অংশগ্রহণের প্রচেষ্টা চালাবে না, বরং অন্যান্য পদ্ধতিতে ন্যাটোর সাথে যুক্ত হওয়া নিয়ে আলোচনা করবে। এ ব্যাপারে রাশিয়া ছাড়া আরো অনেক দেশের সাথে সংলাপ করবে ইউক্রেন।
ক্রেমলিনের দেয়া শর্তগুলো মেনে নিলেই অবিলম্বে অভিযান বন্ধ করবে রাশিয়া, সেটাই ইউক্রেনের মানুষের পক্ষে মঙ্গলদায়ক হবে। গতকাল তৃতীয় দফা বৈঠকের আগে ইউক্রেনকে তিনটি বার্তা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এগুলো হল, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ নেবে না, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক হবে স্বাধীন রাষ্ট্র এবং ক্রিমিয়া হবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল। এর আগে শনিবার তিনি বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ডোনেৎস্ক এবং লুগানস্ক প্রজাতন্ত্রে ১৩ থেকে ১৪ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ হয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে তুরস্ক বারবারই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিল। এমনকি, পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জেলেনস্কিকে এক টেবিলে আনার চেষ্টাতেও ছিলেন এরদোগান। এদিন পুতিন ফোনে তাকে আরো বলেন যে, রাশিয়া নির্দিষ্ট সূচি মেনেই শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে অভিযান চালাচ্ছে। রাশিয়াকে থামাতে হলে ইউক্রেনকে শর্ত মানতেই হবে। আর মধ্যস্থতাকারীদের উচিত বিষয়টি ইউক্রেনের প্রশাসনকে বোঝানো। ইতিমধ্যে রুশ অভিযানে ধুলিসাৎ হয়েছে প্রতিবেশি দেশের একাধিক শহর। পুতিন বাহিনীর দখলে একাধিক পরমাণু কেন্দ্র, বিমানবন্দর। তবে রাজধানী কিয়েভ এখনও দখল করতে পারেনি রুশ বাহিনী। তবে সে শহরে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে তারা। ইউক্রেন বাহিনীকে দ্রুত আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সেটাই ইউক্রেনের পক্ষে মঙ্গলজনক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে রোববার পুতিন ফরাসি প্রসিডেন্টে ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গেও প্রায় দু’ঘণ্টা কথা বলেছেন। সেখানেও তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া নিজের লক্ষ্যপূরণে মরিয়া। সে যুদ্ধের মাধ্যমে হোক কিংবা আলোচনার মাধ্যমে। মারিউপোল ইস্যুতে ইউক্রেন সরকারকেই দায়ী করেছেন। এই শহর থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যেতে কিয়েভ ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ রুশ প্রেসিডেন্টের। পুতিন আরও জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লিতে হামলার কোনও পরিকল্পনা নেই। রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানের জন্য দুই দেশের প্রতিনিধি দল এপর্যন্ত দুটি বৈঠক করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি।
এর আগে শনিবার পুতিন বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ডোনেৎস্ক এবং লুগানস্ক প্রজাতন্ত্রে ১৩ থেকে ১৪ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ‘আমি যা বলতে যাচ্ছি তা কঠোর শোনাতে পারে। তবুও পরিস্থিতি আমাকে জোর দিয়ে বলতে বাধ্য করে যা এইমাত্র আমার সাথে ঘটেছে। আপনি শুনে থাকবেন, আজকাল বিপথগামী কুকুর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষকে আক্রমণ করতে শুরু করে। কেউ কেউ আহত হয়। এমনকি প্রাণঘাতী হামলাও হয়েছে,’ পুতিন বলেছেন।
‘একটা সময় পরে লোকেরা এই প্রাণীদের বিষ দিতে এবং গুলি করতে শুরু করে।’ তিনি বলেন, এমনকি বিপথগামী কুকুর একটি পৃথক সমস্যা এবং ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এটি সমাধান করতে বাধ্য।’ ‘ডনবাসের লোকেরা বিপথগামী কুকুর নয়! তবুও, তাদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মানুষকে এই কয়েক বছরে সেখানে মেরে ফেলা হয়েছে। ৫০০ টিরও বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বা পঙ্গু করা হয়েছে,’ পুতিন বলেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যেটি বিশেষভাবে অসহনীয় তা হল তথাকথিত সভ্য পশ্চিম আট বছর ধরে এটি লক্ষ্য না করাটা বেছে নিয়েছে। এছাড়াও, কিয়েভের কর্তৃপক্ষ ইদানীং স্পষ্টভাবে বলতে শুরু করেছে যে, তারা এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে না (মিনস্ক-২)। তারা টিভি এবং ইন্টারনেটে - সর্বত্র তাই বলে আসছে! তারা জনসমক্ষে বলেছে, ‘আমরা এটি পছন্দ করি না, আমরা এটি করব না,’ পুতিন ব্যাখ্যা করেছিলেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে অনেকেই ভালো চোখে না দেখলেও পাশে ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চীন। বার্ষিক সাংবাদিক বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক এখনও পাথরের মতো মজবুত। ভবিষ্যতেও আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় থাকবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে যা মানুষের কল্যাণ করবে।’
ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে মিত্র রাশিয়া। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীন এই দুই দেশের মধ্যে শান্তি চায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা শান্তির জন্য দুই দেশের মধ্যস্থতা করতে রাজি। যখনই কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন আমাদের সাহায্য চাইবে, আমরা সবরকম ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির মুখ্য সচিব জোসেফ বরেল একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘চীনই একমাত্র পারে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতা করতে। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়াও চীনের মধ্যস্থতায় হওয়া উচিত। পশ্চিমী শক্তিগুলোর এ কাজ করার মতো অবস্থান নেই।’ বেইজিং-এর তরফ থেকে বারবার মধ্যস্থতার কথা বলা হলেও তারা নিজে থেকে কোনো শান্তি বৈঠকের আয়োজন করেনি। যদিও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার জানিয়েছেন, ইউক্রেনে নাগরিকদের সাহায্য করতে ত্রাণ পাঠাবে চীন।
রাশিয়া-চীন সম্পর্ককে ‘বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ বলে অভিহিত করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক বিশ্বের স্থিতাবস্থা এবং উন্নতির জন্য কাজ করবে। বিশ্বশান্তির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে আমাদের দুই দেশের ভূমিকা।’ ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে রাশিয়া এবং চীন, এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়াং ই। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কোনও তৃতীয় দেশ হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয়।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বক্তব্য আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলির প্রতি সতর্কবার্তা হিসাবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়ার অভিযান নিয়ে ভুয়া তথ্যগুলো ভাইরাল হয়েছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ভুয়া সংবাদ ছড়াচ্ছে। এমনকি কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট রাশিয়ার অভিযান নিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন’র নিজস্ব কভারেজ সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য কাজ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো অংসংখ্য ভুয়া স্ক্রিনশটগুলো সিএনএন-এর রিপোর্টিংকে চিত্রিত করে, কিন্তু এগুলো আসলে বানোয়াট যা সিএনএন কখনোই প্রচার করেনি। গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে এসব স্ক্রিনশটগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভুয়া সংবাদগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ইউক্রেনে অভিনেতা স্টিভেন সিগালকে দেখা যাওয়ার বিষয়ে তথাকথিত ‘সিএনএন’ প্রতিবেদনের একটি স্ক্রিনশট। সোমবার ইউক্রেনের বিশিষ্ট পডকাস্টার জো রোগান দ্বারা এটি শেয়ার করা হয় এবং তারপর মুছে ফেলা হয়েছে।
একটি ভুয়া টুইটার অ্যাকাউন্ট দ্বারা দ্বতীয় জাল পোস্টটি করা হয়েছিল যা ভিত্তিহীনভাবে সিএনএন এর সাথে সংযুক্ত বলে দাবি করা হয়। ইউক্রেনে একজন আমেরিকান নিহত হওয়ার বিষয়ে একটি অস্তিত্বহীন ‘সিএনএন’ প্রতিবেদনের সেই ভুয়া স্ক্রিনশট, সোমবার জাতিসংঘের একজন রাশিয়ান প্রতিনিধি বিষয়টি তুলে ধরেন।
অপর একটি জাল সংবাদ ভাইরাল হয়েছে যেটি আসলে ডিজিটালভাবে পরিবর্তিত একটি স্ক্রিনশট। এতে ২০১৯ সালে সিএনএন এ প্রচারিত একটি ভিডিও থেকে কিছু অংশ নিয়ে তাতে ভারত এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কে ভুয়া তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।
রুশ আক্রমণের দ্বিতীয় দিনে যখন আমানি আল-আত্তার দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের ডিনিপ্রো ছেড়েছিলেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন প্রতিবেশী পোল্যান্ডের নিরাপত্তায় প্রবেশ করা মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। কিন্তু তার পরিবর্তে, ২৫-বছর-বয়সী মরক্কোর এ ছাত্রী একটি কষ্টকর, দিনব্যাপী যাত্রার বর্ণনা দিয়েছেন, যিনি পথে ইউক্রেনীয় সৈন্য, সামরিক স্বেচ্ছাসেবক এবং সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার অভিযান শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার আরব নাগরিক, বেশিরভাগ ইউক্রেনভিত্তিক ছাত্র, পোল্যান্ডে আশ্রয় চেয়েছে। কারণ তাদের সরকার তাদের সরিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। আল-আত্তার এবং নয়জন বন্ধু যারা ডিনিপ্রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরব ছাত্র, প্রত্যেকে একজন বাস ড্রাইভারকে ১৫০ ডলার প্রদান করেছিল যারা তাদের পোলিশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
ইউক্রেনের পশ্চিমে লভিভের ঠিক বাইরের একটি ছোট শহর হোরোডোকে নয় ঘণ্টার ভ্রমণ, সেনা চেকপয়েন্টগুলোতে ঘন ঘন থামা ছাড়াও অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পোল্যান্ড থেকে প্রায় ৪০ কিমি (১৮ মাইল) দূরে, সবকিছু বদলে গেছে। ইউক্রেন সেনারা তাদের বাসে থাকা প্রায় ৫০ জন বিদেশী যাত্রীর সবাইকে বাস থেকে নামতে বাধ্য করে। তারা শুধু একটি দিক নির্দেশ করে বলেছিল, ‘এখানেই পোল্যান্ড। বাকি পথ হেঁটে যান,’ আল-আত্তার বর্ণনা করেছেন, সৈন্যরা বলেন যে, বিদেশীদের গাড়িকে আর সামনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে না।
ডেন্টালের ছাত্রী মারিয়াম সাবের বলেছিলেন, ‘তারপর তারা সেই বাসে ইউক্রেনীয়দের উঠিয়ে দিয়ে সেটি সীমান্তের দিকে পাঠিয়ে দেয়’। আল-আত্তার এবং তার বন্ধুরা হতবাক হয়ে গেলেও পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। পথ ধরে পোল্যান্ডের রাস্তায় ইউক্রেনীয়দের ভরা যানবাহনের একটি অবিরাম স্রোত সারিবদ্ধ ছিল। গাড়িগুলো শামুকের গতিতে চলছিল এবং সেখানকার লোকেরা শুধুমাত্র ইউক্রেনীয়দের জন্য তাদের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল।
২১ বছর বয়সী মরক্কোর ফার্মেসির ছাত্র বলেছিলেন, ‘তারা ইউক্রেনীয়দের জন্য খাবার, পানি এবং বিশ্রামের জায়গা দিয়েছিল, কিন্তু যখন তারা আমাদের দেখছিল, তারা কেবল তাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল।’ ‘আমরা আমাদের লাগেজ নিয়ে বরফের মধ্যে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাঁপতে থাকি এবং জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে দেখেও তাদের কোনো করুণা ছিল না। এটা খুবই নির্দয় এবং নিদারুণ ছিল,’ আল-আত্তার কান্না চেপে বলেন।
প্রচণ্ড ঠান্ডায় কয়েক ঘণ্টা হাঁটার পর তরুণ ছাত্রদের দল ঠাণ্ডা,ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত ছিল। তারা খাবার কেনার জন্য এবং টয়লেট ব্যবহার করার জন্য একটি পরিষেবা স্টেশনের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু আবার তাদের ‘ইউক্রেনীয় না হওয়ার জন্য পেছনে ঠেলে দওয়া হয়’ -সাবের বলেন। ‘যখন আমরা সারিবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করি, দোকানের মালিকরা আমাদের ইউক্রেনীয়দের সমস্ত পরিবেশন না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। যখন সেগুলো করা হয়েছিল, আমরা তাকগুলোতে খাস্তা (শুকনো রুটি) ছাড়া আর কিছুই পাইনি,’ সাবের বলেছিলেন।
কয়েক ঘন্টা পরে, যখন তারা সীমান্ত থেকে ৬ কিমি (২ দশমিক ৭ মাইল) দূরে ছিল, সেই সময়ে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা অন্য হাজার হাজার আরব, ভারতীয় এবং আফ্রিকানদের সাথে তাদের ঘিরে ফেলে। আল-আত্তার বলেছিলেন, ‘সৈন্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা মাটির ওপর আয়তক্ষেত্র এঁকেছিল এবং আমাদের তার ভিতরে সারিবদ্ধ করেছিল, যে কেউ লাইনের বাইরে চলে যায় তাকে লাঠিসোটা বা রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর করা হয়।’ ‘যখন আমরা কয়েক মিটার দূরে একটি সার্ভিস স্টেশনে টয়লেট ব্যবহার করতে চাই, তখন সৈন্যরা আমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে বনের মধ্যেই তা করতে বলেছিল। যখন আমরা হিমশীতল ঠাণ্ডা সম্পর্কে অভিযোগ করি, তারা হেসেছিল এবং উষ্ণ রাখার জন্য আমাদের নাচের সুপারিশ করেছিল। একমাত্র জিনিস যা আমাদের চালিয়েছিল তা হল আমরা মরতে চাইনি।’
তিনটি ক্যাম্পসাইটের মধ্যে স্থানান্তরিত হওয়ার পরে এবং ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করার জন্য ছেড়ে যাওয়ার পরে দলটিকে শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র আরেকটি অন্তহীন সারি খুঁজে পেতে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। গ্রুপটি ডিনিপ্রো ছেড়ে যাওয়ার তিন দিন হয়ে গেছে। তাদের চূড়ান্ত বাধা ছিল পোলিশ সীমান্ত পুলিশের কাছে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া। যদিও এই চূড়ান্ত পদক্ষেপটি সম্পন্ন করতে ইউক্রেনীয়দের তিনদিনের বদলে মাত্র ২০ মিনিট সময় লেগেছিল।
‘সেনারা তাদের ত্বকের রঙ এবং লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে,’ আল-আত্তার বলেছিলেন, ‘মহিলাদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল, যেখানে পুরুষদের চার বা পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হয়। ‘এছাড়াও, আপনার ত্বক যত কালো হবে ততই খারাপ এবং অপেক্ষা দীর্ঘতর হবে,’ আল-আত্তার আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘কালো মানুষ এবং এশিয়ানদের মারধর করা হয় এবং সারির পিছনে পাঠানো হয়’। সূত্র : তাস, বিবিসি, আল-জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।