Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ফুটপাথ দখলমুক্ত ও আধুনিক ঢাকা গড়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঢাকা মহানগরীকে সীমিত শক্তি দিয়েই যতদূর সম্ভব বসবাসের উপযোগী করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গুলশান, বনানি, বারিধারার মত এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরো উন্নয়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট মেয়রকে নির্দেশ প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্ট, যখন তারা কোন প্ল্যান করবেন অন্তত ফুটপাতটা যেন মানুষের হাঁটার যোগ্য থাকে এবং সেটা যেন দখল না হয় যেদিকে দৃষ্টি দিয়েই করতে হবে। তিনি বলেন, আর কাউকে দোষ দেব না আমাদের প্ল্যান করা সময়ই এই সর্বনাশটা করা হয়ে যায়।’ যেটাকে তিনি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১)’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডিএনসিসি’র ৪৪ নং ওয়ার্ডস্থ কাঁচকুড়া হাইস্কুল প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
ঘন বাসতিপূর্ণ হরিরামপুর এক সময় অত্যন্ত অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মান আরও উন্নত হবে এবং মানুষের স্বাস্থ্যকর ভাবে বসবাস করতে পারবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরটাকে সীমিত শক্তি দিয়েই যতদূর সম্ভব আধুনিকায়ন করা, সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করার আমরা চেষ্টা করছি। নতুন ইউনিয়নগুলো যুক্ত করার মাধ্যমে ১৮টি ওয়ার্ড করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে খেলার মাঠ, পাবলিক টয়লেটসহ নানা নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এই নতুন ঢাকা আরো সুন্দর হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেননা এই কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ানও তার হাতেই সৃষ্টি এবং যখনই তাদেরকে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা তা সুষ্ঠু ভাবেই সম্পন্ন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় তারা জনগণের পাশে থেকে সেবা করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং স্থানীয় মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম জাকারিয়া হোসেন প্রকল্পের ওপর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠনের সময় তার একটাই লক্ষ্য ছিল এদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করা। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আজকে দেশের উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে। যাতে, এর প্রত্যেকটা নাগরিক এখনকার নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারে এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকা শহর এক সময় চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা পরিবেষ্টিত একটি সুন্দর শহর ছিল। যা ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং শহরমুখি জনতার চাপ এই শহরকে ধীরে ধীরে বাসবাসসের অনুপযোগী করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, যখন সিটি কর্পোরেশন করা হলো একটা মাত্র সিটি কর্পোরেশন কিন্ত জনসংখ্যা এত বিশাল। কাজেই একটা সিটি কর্পোরেশন দিয়ে এত মানুষের সেবা দেয়া সম্ভব নয় ছিল না। পাশাপাশি, সংলগ্ন ইউনিয়নগুলো যেগুলো ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিল। এ সব ইউনিয়নকে অর্ন্তভূক্ত করে তাদের ওয়ার্ডে পরিণত করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে তিনি দুটি ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন বলে উল্লেখ করেন। আর যা বাদ বাকী এলাকা রয়েছে সেগুলো অচিরেই অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

এ সময় তিনি উৎপাদন খরচের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এখানে বসবাসকারীদের বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় মনোযোগী হবার, ট্রাফিক আইন মেনে চলার এবং বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে পরিবেশ সুন্দর রাখার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সরকারের উন্নয়ন কাজে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযেগিতা করার ও আহ্বান জানান।

বিভিন্ন খাল পূনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ায় তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসলে সবথেকে খারাপ যেটা হয়ে গেছে, অতীতের এই বক্সকালভার্টগুলো নির্মাণ করায়। যেখানে খাল রয়েছে সেখানে খালটা রেখে দুপাশে রাস্তা করা যেত। পিলার দিয়ে ওপর দিয়েও এলিভেটেড রাস্তা করা যেত। কিন্তু বক্সকালভার্ট করার ফলে সেখানে যেমন ময়লা জমছে তেমনি জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে এজমালি সম্পত্তির মত খাল দখল হয়ে ঘর-বাড়ি বা স্থাপনা বা দোকান-পাট তৈরী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের যেমন রক্ত প্রবাহের জন্য ধ্বমনি থাকে একটি শহরেরও তেমনি শিরা বা ধ্বমনি হিসেবে কাজ করে এই খালগুলো। কাজেই সেটা উদ্ধার করা একান্ত অপরিহার্য।

সরকারের বস্তিবাসীর জন্য ভাড়া ভিত্তিক ফ্লাট নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বস্তিতে তারা মানবেতর জীবন যাপন করে। কাজেই, কোন নাগরিক কষ্টে থাক সেটা আমি চাই না। এ সময় তিনি হিজড়া, বেদে এবং কুষ্ঠরোগীদের জন্যও ঘরবাড়ি তৈরী করে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়ায় সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।
বিহারীরা পাকিস্তানে ফিরে যেতে চাইলেও পাকিস্তান সরকারের উদ্যোগ না থাকায় তাদের বাধ্য হয়ে জেনেভা ক্যাম্পের ছোট জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তাদের জন্য তিনি ভাল বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন।

তিনি বলেন, তারা খুব কর্মঠ, বিভিন্ন কাজ তারা খুব দক্ষতার সঙ্গে করতে পারেন। তারা যে যে কাজে পারদর্শী নিজেদের সে কাজে সম্পৃক্ত করে যাতে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসেবেই আমরা দেখতে চাই। প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে আরো বড় জায়গায় বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে, যেখানে কাজের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে এই পুণর্বাসনটা করা যেতে পারে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্লু-ইকোনমির ­সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে : এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ব্লু-ইকোনমির সম্ভাবনা অন্বেষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সমুদ্র সম্পদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ব্লু ইকোনমি নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছি এবং এই সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে যেন আরো গতিশীল করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচ ক্যাডেটদের মুজিববর্ষ পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।
বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। এখানে যেমন মৎস্য সম্পদ আছে তেমনি অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদও আছে। সেগুলো আহরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি, কাজেই এই মাছ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যে সম্পদ আমাদের শুধু পুষ্টি জোগায় না এই সম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করেও আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেজন্য মৎস্য উৎপাদনে আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং অনেক সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু, সমুদ্র সম্পদ আহরণে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা সেটা করবো বলেই বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি যেমন সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে তেমনি এসডিজিও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনার কারণে এই অগ্রগতি কিছুটা বাধার সম্মুখীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে এসডিজি-১৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, আমি চাইবো, তোমরা সবসময় সাহসের সাথে কাজ করবে এবং তোমাদের লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে আরো বেশি সহায়ক হবে বলে আমি বিশ^াস করি। আমি আশা করি, আমাদের সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তোমাদের ভূমিকা থাকবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। তোমরাই হবে আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কর্ণধার।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ পদক বিতরণ করেন। এইচ এম বেনজীর আহমেদ সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারি চৌকষ ক্যাডেট হিসেবে ‘বেস্ট অলরাউন্ডার গোল্ড মেডেল’ লাভ করেন। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মেরিন ফিসারিজ একডেমির কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদফতর, মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট, বিএসসি, শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধি, আমন্ত্রিত অতিথি, ক্যাডেটদের অভিভাবকেরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ