Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কপিরাইট আইন সংশোধন নিয়ে সঙ্গীত প্রযোজকদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন আজ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে লেখক-শিল্পীদের পাশাপাশি প্রযোজক-পরিবেশকদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। প্রযোজকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ও উদ্যোগে দেশের সংস্কৃতি যখন বিশ্ব দরবারে পৌঁছতে শুরু করেছে, তখন তারা কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রযোজকরা মনে করছেন, সা¤প্রতিক সময়ে সংশোধিত কপিরাইট আইনে তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। আইনটি পরিবর্তন-পরিমার্জনে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। এর বাইরে বেশ কিছু বিধান নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। জানা যায়, ইতোমধ্যে কপিরাইট আইন ২০২১-এর খসড়া তৈরি হয়েছে, যা শিগগিরই পাশ হবে। তার আগেই এই আইন নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)-এর নেতা ও সদস্যরা। তাদের অভিমত, নতুন কপিরাইট আইনের মাধ্যমে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল মাধ্যমে নাটক, সিনেমা ও গান প্রকাশে তৈরি হবে নানা প্রতিবন্ধকতা। তারা মনে করছেন, কপিরাইট আইন- ২০২১-এ এমন কিছু আইন যুক্ত হচ্ছে, যা প্রযোজক-শিল্পী-সুরকার-গীতিকবিদের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট করবে। পর¯পরের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস, সেটিও নষ্ট হবে। এই আইনের মাধ্যমে একজন শিল্পী-সুরকার-গীতিকার-নির্মাতা চাইলে তার সৃষ্টি কোনও প্রযোজকের কাছে এককালীন বিক্রি বা বিপণনের সুযোগ পাচ্ছে না। তারচেয়েও বড় বিষয়, শিল্পী-প্রযোজকদের যৌথ সম্মতিতে যে চুক্তিই হোক না কেন, সেটি যেকোন সময় বাতিল করার অধিকার রাখবে কপিরাইট বোর্ড। নতুন এই আইনের কারণে কোনও প্রযোজক নাটক বা সিনেমা ক্রয় করার পর সেটির গান বা ক্লিপ আলাদাভাবে পরিবেশন করতে পারবে। এটি প্রযোজকদের হাত-পা বেঁধে সামুদ্রে ফেলে দেয়ার মতোই মনে করছেন প্রযোজকরা। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)-এর প্রধান এবং লেজার ভিশনের অন্যতম কর্ণধার একেএম আরিফুর রহমান বলেন, আমরা যারা নিয়মিত কাজ করছি, তাদের সবকিছুই চলমান কপিরাইট আইনের ভিত্তিতে চলছে। কিন্তু আপত্তিটা নতুন আইনের কিছু সংশোধনী নিয়ে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার কথা, যার বা যাদের গান তারা যদি প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিপত্রে হাসিমুখে স্বাক্ষর করেন, সেটিতে অন্য পক্ষের হস্তক্ষেপ কেন থাকবে? আমি মনে করি, নতুন যে আইনটি হচ্ছে, সেটি আরও ¯পষ্ট ও সংস্কৃতিবান্ধব হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সংস্কৃতি এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সেই সময়ে এসে আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে আইনের মারপ্যাঁচে জড়িয়ে ফেলছি, যা খুবই দুঃখজনক। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেকের কর্ণধার সুলতান মাহমুদ বাবুল বলেন, এই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছি। নতুন আইন পাশ হলে মামলা আমাদের পেছন ছাড়বে না। এভাবে এই আইন পাশ হলে আমাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, নতুন আইনের মাধ্যমে পুরনো প্রযোজকরা ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হবে। বিপরীতে নতুন কোনও ইনভেস্টর এই ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হবে না। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ ঐতিহাসিক এই গানের রচয়িতা, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনাসুর-এর কর্ণধার ও এমআইবি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসান মতিউর রহমান নতুন কপিরাইট আইন প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের অর্থায়নেই গড়ে উঠেছে অডিও শিল্প। তবুও আমরা কখনো বলিনি সবকিছু আমাদের দিয়ে দিন। বরাবরই চেয়েছি, একসঙ্গে থেকে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে যেতে। কিন্তু বার বার সেই অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুঃখের বিষয়, এমন একটি আইন হচ্ছে, যেটা স¤পর্কে আমরা এখনও পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। আমরা জানি না, এই আইনে আসলে কী আছে, কী নেই। আইনটি চ‚ড়ান্ত অনুমোদনের আগে আমরা এটি স¤পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। এদিকে কপিরাইট আইন-২০২১ প্রণয়ন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশের আরেক অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েসের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম সোহেল। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে আমার মতো শত শত প্রযোজক প্রাণের টানে এই অঙ্গনে এসেছেন, আবার নিঃস্ব হয়ে ফিরে গেছেন। আমরা এখনও যে কজন টিকে আছি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছি। নতুন আইন হলে এই কয়েকজনকেও ফিরে যেতে হবে। তাই আমি মনে করি, আইনটি চ‚ড়ান্ত করার আগে সবার মতামত নেয়া উচিৎ। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রæব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রæব গুহ বলেন, নতুন আইনের কারণে যদি প্রযোজক-পরিবেশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে পুরো ইন্ডাস্ট্রিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, যেকোনও নাটক, সিনেমা ও গান তৈরি এবং পরিবেশনার পেছনে একজন প্রযোজকের কনট্রিবিউশন ভুলে গেলে চলবে না। নতুন কপিরাইট আইনের কিছু ধারার বিষয়ে আমরা জানতে পারছি। এতে শিল্পী-প্রযোজকদের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিশৃঙ্খলা বাড়বে বলে মনে করি। তাই এ ধরনের আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতামত ও বক্তব্য নেয়া জরুরি। চলচ্চিত্রভিত্তিক দেশের প্রাচীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়র কর্ণধার ও এমআইবি’র সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন নতুন কপিরাইট আইন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, চার দশকের প্রতিষ্ঠান আমার। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও গানের বিকাশে কাজ করার। অথচ এই পর্যায়ে এসে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। বর্তমানে যে আইন হচ্ছে, তাতে গান করার ইচ্ছা শক্তি হারিয়ে ফেলছি। তিনি বলেন, যারা এই মাধ্যমটির অপরিহার্য অংশ, তাদের ছাড়া কিভাবে কপিরাইট আইনের সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সকল পক্ষকে নিয়ে একটি ভারসাম্যমূলক আইন তৈরি করা দরকার। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঈগল মিউজিকের কর্ণধার কচি আহমেদ বলেন, ধরুন, আমি একটি গান প্রযোজনা ও পরিবেশনার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে চুক্তি করলাম। কিন্তু কপিরাইট বোর্ড চাইলে আমাদের সেই যৌথ চুক্তি বাতিল করতে পারবে। এটা কেমন কথা! এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের কারও কোনও মতের বা স্বাধীনতার গুরুত্ব থাকছে না। শুনছি নতুন কপিরাইট আইনে এমন কিছু ধারা যুক্ত হচ্ছে, যে আইনগুলো আমাদের মতো মানুষগুলোকে নিরুৎসাহিত করবে। প্রযোজকরা দাবী করেন, এই আইন প্রণয়নের আগে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে যেন চ‚ড়ান্ত করা হয়।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ