পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আইন আছে। কার্যকর প্রয়োগ নেই। ফলে নকল হচ্ছে সৃজনশীল কর্ম। মূল্যায়ন পাচ্ছেন না সৃজনশীল লেখক, শিল্পী ও মেধাবীরা। আইনজ্ঞরা বলছেন, আইনটির সম্পর্কে না জানা, আইনের আশ্রয় গ্রহণে অনাগ্রহ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নানা দুর্বলতার কারণেই সুফল মিলছে না গুরুত্বপূর্ণ এ আইনটির। এতে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় সংগীত, চলচ্চিত্র শিল্পসহ বহু সৃজনশীল কর্ম।
সৃজনশীলদের স্বীকৃতি, স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় ১৯৮৬ সালে ‘বার্ন কনভেনশনের মাধ্যমে ‘ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইট’ বা ‘মেধাস্বত্ব স্বীকৃতি’ দেয়া হয়। পরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপ চুক্তিতে এই কনভেনশনকে যুক্ত করা হয়। বাংলাদেশও এই কনভেনশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রণীত হয় ‘কপি রাইট আইন’। তবে আইনের দুর্বলতা এবং প্রায়োগিক ত্রæটি-বিচ্যুতির কারণে বাংলাদেশের সৃজনশীলরা আইনটির সুফল এখনো পাচ্ছেন না। সৃজনশীলদের উদাসীনতার কারণে তারাও আইনটির আওতায় থেকে সুবিধা গ্রহণে অনাগ্রহী। অথচ একজনের সৃষ্টিকর্ম অন্যজনের চুরি করার অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। পাইরেসির কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের অডিও ক্যাসেট শিল্প। ক্ষয়িষ্ণু শিল্পে পরিণত হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রও। সংগীতশিল্পী সন্দীপন বলেন, মেধাস্বত্ব আইনের কার্যকরিতা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীরা সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রিলিজড হওয়ার পর গানের ওপর শিল্পী, গীতিকার বা সুরকারের কোনো অধিকার থাকছে না। তাই মেধাস্বত্ব আইনের কার্যকর প্রয়োগ উঠতি শিল্পীদের জন্য বেশি জরুরি।
আইনটির অপরিহার্যতা :
মৌলিক যে কোনো সৃজনশীল কর্ম যদি আইনদ্বারা সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে এটি নকল কিংবা চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। অতীতে বহু শিল্পী, সাহিত্যিক, মনীষীদের সৃষ্টি কর্ম চৌর্যবৃত্তির শিকার হয়েছে। কপি রাইট আইনের মাধ্যমে লেখকের মৌলিক সৃষ্টিকর্মের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের একচ্ছত্র অধিকার দেয়া হয়েছে। কপিরাইট মূলত: লেখকের মৌলিক রচনার জন্য স্বত্ব প্রদান এবং বিনা অনুমতিতে যেকোনো ধরনের পুনঃমুদ্রণ, অনুবাদ বা অনুলিপি নিবৃত্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা। শুধু সাহিত্যকর্মই নয়Ñ গ্রন্থ, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, চিত্রকলার মতো মৌলিক ডিজাইন, কম্পিউটার সফটওয়্যার, প্রকাশ, অনুবাদ, অভিযোজন, ভাড়া দেয়া এবং বিক্রয় করার অধিকার সংরক্ষণের জন্যই প্রণীত হয় কপিরাইট আইন। কপিরাইটের মেয়াদ স্বত্বাধিকারীর মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এ আইনের আওতায় কপিরাইটের মালিক তার মেধাস্বত্ব কপিরাইট সংস্থায় নিবন্ধন করতে পারেন। কখনো বা অন্যকে কপি করার অধিকারও দিতে পারেন। কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী জীবিত না থাকলে এ আইনের অধীনে পরিচালিত ‘কপিরাইট বোর্ড’ লাইসেন্স দিতে পারে। আইনের লঙ্ঘন হলে ভুক্তভোগী দেওয়ানি এবং ফৌজদারি আইনে প্রতিকার চাইতে পারেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধী বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি কিংবা অর্থদÐে দÐিত হতে পারেন। চলচ্চিত্র ছাড়া অন্য মাধ্যমের কপিরাইট লঙ্ঘনের শাস্তি অনূর্ধ্ব ৪ বছর কারাদÐ এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা। চলচ্চিত্রের কপিরাইট লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব ৫ বছরর কারাদÐ। ৫ লাখ টাকা জরিমানা। তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কপিরাইটের লঙ্ঘন না হলে আদালত দÐের পরিমাণ কমাতে পারেন।
বাধ্য-বাধকতা নেই আইনের :
গুরুত্বপূর্ণ ‘কপিরাইট আইন’র বড় দুর্বলতা হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক দেশেই ‘শিল্পসম্পদ’ রক্ষায় কপিরাইট আইন প্রতিপালন সৃজনশীলদের জন্য বাধ্যতামূলক। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিপালন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এছাড়া বহু সৃষ্টিকর্ম কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের বাইরে রাখা হয়েছে। যেমন : ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বিষয়ে গবেষণা, ব্যক্তিগত ব্যবহার, সমালোচনা, পর্যালোচনা, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন কিংবা সাময়িকীতে প্রকাশ, যুক্তিসঙ্গত উদ্ধৃতিসহ জনসমক্ষে আবৃত্তি, বিনামূল্যের গ্রন্থাগারে পাওয়া যায় নাÑ এমন বিদেশি গ্রন্থের অনধিক তিন কপি অনুলিপি কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয় না। এছাড়া ভাষ্য সহকারে পুনর্মূদ্রণ হয়েছে এমন কোনো আইন এবং জনসাধারণের প্রবেশাধিকার আছে এমন স্থানে স্থায়ীভাবে অবস্থিত স্থাপত্য বা শিল্পকর্মের চিত্রাঙ্কন, রেখাচিত্র, খোদাই কিংবা আলোকচিত্র তৈরিকেও ‘কপিরাইট লঙ্ঘন’ বলে পরিগণিত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন চৌধুরী রিগ্যানের মতে, বাংলাদেশের কপিরাইট আইন এখন পর্যন্ত একটি ‘অলংকারি আইন’ হিসেবেই শোভিত হচ্ছে। আইনটির পক্ষে নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। অধিকাংশ লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চিত্রকর এমনকি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পমালিক এবং ব্যবসায়ীগণও আইনটির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ আইনটির অনুশীলন তুলনামূলক কম। ফলে যখনই তারা কপিরাইট সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হনÑ তখন আইনের সুবিধাও তারা সেভাবে পান না। এতে মৌলিক সৃজনকর্ম অহরহ কপি কিংবা চুরির অভিযোগ উঠলেও দেশে বিদ্যমান আইনে প্রতিকার পাচ্ছেন না সৃজনশীল এবং শিল্পোদ্যোক্তারা।
আইরকে আইনজীবী আজিজুর রহমান মনে করেন, শুধু একটি আইন করে বসে থাকলেই হবে না। মেধাস্বত্ব সম্পর্কে সকল পক্ষের মধ্যে স্পষ্ট ধারণার বিস্তার ও বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। আইন সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের উপলব্ধি ও বাস্তবায়নের সদিচ্ছা থাকতে হবে। পাইরেসির বিরুদ্ধে অভিযান, পৃথক আইপি আদালত গঠন ও দ্রæততম সময়ে সুবিচার নিশ্চিতকরণ (৭) মেধাস্বত্ব সুরক্ষার সুফল পেতে সব উপকারভোগীর মধ্যে আইনের কপি বিতরণ, প্রতিক্ষেত্রে ক্ষেত্রে কপিরাইট সোসাইটি গঠন করতে হবে। দুর্বলতা দূরীকরণে কতিপয় প্রস্তাবনাও রাখেন এই আইনজীবী। তার মতে, কপিরাইট বিষয়ে উদ্ভূত বিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতার কার্যক্রম পরিচালনার বিধান রাখা যেতে পারে। রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটকে রিভিউ ক্ষমতা প্রদান, প্রতিটি সৃজনশীল কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন দেয়ার আগে কর্মটির মৌলিকত্ব যাচাই পদ্ধতি নির্ধারণ, ডিজিটাল কর্মের কপিরাইট সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বিধান আইনে সংযোজন এবং কপিরাইট আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা। কপিরাইট টাস্কফোর্সকে কপিরাইট আইনে যুক্ত করে কপিরাইট লঙ্ঘন এবং পাইরেসির শাস্তির পরিধি বাড়াতে হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস’র রেজিস্ট্রার মো: দাউদ মিয়া জানান, কপিরাইট নিবন্ধনকে এখনও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বিষয়টি ‘ঐচ্ছিক’ করে রাখায় সৃজনশীলরা সৃজিত কর্মের রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী নন। দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত মাত্র ৭২টি চলচ্চিত্রের কপিরাইট নিবন্ধন হয়েছে। ১৯৬২ সালে কপিরাইট অফিস চালু হলেও এখানে মেধাসম্পদের নিবন্ধন হয়েছে ১৬ হাজারের মতো। আইন সম্পর্কে মানুূষ সচেতন না হওয়ায় কপিরাইট আইনের আশানুরূপ সুফলও আমরা পাচ্ছি না। সীমাবদ্ধতার ভেতর আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আইনের প্রতিফলন ঘটাতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।