নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের বাসে হামলার পর কেটে যাচ্ছে প্রায় এক যুগ। তবুও সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি পাকিস্তানের। এরপর থেকে নিরাপত্তার অজুহাতে দেশটি থেকে দীর্ঘ দিন নির্বাসিত ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ধীরে ধীরে সেই খরা কাটলেও নানান অজুহাতে বড় দলগুলোর পাকিস্তান সফরে থেকে গেছে অনীহা। দুই যুগ পর পাকিস্তানের মাটি ছুঁয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে যে ভেন্যুতে প্রথম টেস্ট খেলেছিল অজিরা সেই রাওয়ালপিন্ডিতে সেজেছে নতুন ইতিহাস তৈরির মঞ্চ। নতুন শুরুর যাত্রাটাও টেস্ট দিয়ে। আজ বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় পিন্ডি স্টেডিয়ামে শুরু হবে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। সিরিজের নামকরণও হয়েছে দুই দেশের দুই কিংবদন্তি লেগ স্পিনার রিচি বেনো ও আব্দুল কাদিরের নামে। বেনো-কাদির ট্রফি নামের সিরিজটি তাই নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাঁধে ‘পাকিস্তান নিরাপদ’ প্রমাণের মঞ্চও।
পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের দুই বড় শক্তি। এই দুই দেশের টেস্ট লড়াই সব সময়ই জন্ম দিয়েছে নানা রোমাঞ্চের। নতুন রোমাঞ্চের স্বাদ নেওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটপ্রেমীদের কৌতূহল পুরোনো দিনের গল্পে। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেবার ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে ফিরেছিল মার্ক টেলরের দল। এবার প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে পূর্ণশক্তির স্কোয়াড নিয়েই পাকিস্তানে অস্ট্রেলিয়া। কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া কেমন করবে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দল? তাদের আটকাতে কী ছক আঁকছে পাকিস্তান? এসব প্রশ্ন ছাপিয়ে ম্যাচে কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠতে পারে বৃষ্টি। রাওয়ালপিন্ডির আবহাওয়া দপ্তরের বরাত দিয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’ জানিয়েছে, টেস্টের প্রথম দুই দিন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও শেষ তিন দিন বৃষ্টি উৎপাত করতে পারে। এমনকি বৃষ্টির কারণে গতকাল একটুও অনুশীলন করতে পারেনি দু’দলের কেউই!
উপমহাদেশে খেলার সুবাদে পাকিস্তানের উইকেট, কন্ডিশন নিয়ে কিছুটা হলেও ধারণা আছে তাদের। এছাড়া আরব আমিরাতে গত ৮ বছরে দুইবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে অজিরা। স্কোয়াডে থাকা মার্নাস লাবুশেন, ট্রাভিস হেডের এশিয়ায় আছে এক টেস্টের অভিজ্ঞতা। ক্যামেরন গ্রিন আর মার্কাস হ্যারিস তো এশিয়াতে কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচই খেলেননি। পাকিস্তানের পরিবেশ তাদের একেবারেই অজানা, তাই প্রস্তুতিতেও ঘাটতি রাখছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। পাকিস্তানকে নিয়ে হোমওয়ার্কটা ভালোই এগিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৯ সালের অ্যাশেজের পর দেশের বাইরে এটিই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সিরিজ। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে অ্যাশেজে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ডকে তারা গুঁড়িয়ে দেয় ৪-০ তে। সেই আত্মবিশ^াসে না ডুবে নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান জর্জ বেইলি বলেছেন, পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা বেশ ঘাটাঘাটি করছেন। পাকিস্তানে যারা খেলেছেন তাদের কাছ থেকেও যতটা সম্ভব পরামর্শও নিচ্ছেন। মার্নাস লাবুশেন তো পাকিস্তানের স্পিনিং উইকেটের কথা মাথায় রেখে নিজের ঘরেই অনন্য এক অনুশীলন সেরেছেন।
প্রথম টেস্টের ভেন্যু পিন্ডির উইকেটে সেভাবে স্পিন ধরবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে রাওয়ালপিন্ডির শেষ কয়টা ম্যাচে চোখ বুলালে দেখা যায় পেসারারাই এগিয়ে ছিলেন। অজিরা চাইলে আরো একটু স্বস্তি খুঁজতে পারেন পাকিস্তানের স্পিনারদের দিকে তাকিয়ে। গত ৩ বছরে ঘরের মাঠের টেস্টে পেসাররাই এগিয়ে। পেসাররা নিয়েছেন ২৯.১ গড়ে ৮৯ উইকেট। ৩৯.৪১ গড়ে স্পিনারদের দখলে গেছে ৪৮ উইকেট। এছাড়া গত ৩ যুগেও ঘরের মাঠের টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিতে পারেননি কোনো পাকিস্তানি স্পিনার। সাধারণত ম্যাচের আগেরদিনই সেরা একাদশ ঘোষণা করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। অধিনায়ক কামিন্স জানিয়েছেন, টসের আগে উইকেট দেখেই তারা সেরা একাদশ ঘোষণা করবেন। আরো জানিয়েছেন, তিন পেসারের সাথে একজন বা দুইজন স্পিনারের কম্বিনেশনে একাদশ সাজাতে পারেন তারা।
ওদিকে ইঞ্জুরিতে পড়ে পাকিস্তান স্কোয়াড থেকে ছিটকে গেছেন হাসান আলী ও ফাহিম আশরাফ। তাদের জায়গায় স্কোয়াডে ঢুকেছেন ইফতিখার আহমেদ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। এদের মধ্যে ওয়াসিম জুনিয়রের হতে পারে টেস্ট অভিষেক। এছাড়া কোভিড পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছেন হারিস রউফ। ঐতিহাসিক এই টেস্টে পাকিস্তানের একাদশে দেখা যেতে পারে তিন পেসার। শাহীন শাহ আফ্রিদি, ওয়াসিম জুনিয়র ও নাসিম শাহ। অলরাউন্ডার ফাওয়াদ আলমও থাকবেন স্পিনার হিসেবে। পাকিস্তানের ম্যানেজমেন্ট বৈচিত্র্য চাইলে সাজিদ খানকেও অন্তর্ভূক্ত করতে পারে একাদশে। প্রথম টেস্টের ভেন্যু রাওয়ালপিন্ডি। এই ভেন্যু নিয়ে খানিকটা আশাবাদী হতেই পারে অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই মাঠে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দলের পেসাররা মিলে নিয়েছিলেন ২৪ উইকেট। ধারণা করা হচ্ছে পেস সহায়ক উইকেটেই হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক এই সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই মাঠের অতীত ইতিহাস পাকিস্তানকেও আশার যোগান দিবে। ১১ টেস্টের ৫টি জিতেছে পাকিস্তান। সাথে আছে সমান ৩টি করে পরাজয় ও ড্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।