Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ‘বইঘর’!

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ৪:৫৩ পিএম

কলকাতা বইমেলা শুরু হয়ে গেছে। কোভিডের কারণে এবারের মেলা হচ্ছে পাক্কা দু’বছর পর। বহুদিন পর শুধু বইয়ের জন্য একমাঠ মানুষের ভিড়! ফের ভেসে উঠছে মেলা প্রাঙ্গণের চেনা ছবি- প্রেম-আনন্দ-বইচই! সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটের যুগে যা আনন্দ দিচ্ছে খাঁটি বইপ্রেমীদের। তবু, এরাজ্যের (হয়তো বা গোটা দেশেই) গ্রন্থাগারগুলির ভগ্নদশা দেখে মন খারাপ হতে বাধ্য।

অনেকেই বলছেন, ইনটারনেটের তথ্য ভাণ্ডারেই খুশি নবীন প্রজন্ম, সাহিত্য নিয়ে উৎসাহ কমছে, যদি না চমকদার কিছু হয়। এই হিসেবকেই মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে কেরলের গ্রাম পেরুমকুলম। যার ডাকনাম ‘বইগ্রাম’। কীভাবে ‘বইগ্রাম’ হয়ে উঠল পেরুমকুলম? সে অনেক কাল আগের কথা, সে ছিল ঘোর কালো দিন। দিনটা ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি। উগ্রহিন্দুত্ববাদী নাথুরম গডসের গুলিতে প্রাণ হারালেন মহাত্মা গান্ধী। আচমকা শোকসংবাদে বিষাদগ্রস্ত গোটা দেশ৷ তীব্র মন খারাপ হয় কেরলের ছোট্ট গ্রাম পেরুমকুলমেরও। কিন্তু কেবল মন খারাপ করে বসে থাকলেন না এই গ্রামের যুবকরা। ঠিক করলেন পালটা কিছু করতে হবে। এমন কাজ- যাতে করে মহান দেশনায়ককে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও করা যাবে, এইসঙ্গে উপকৃত হবে সমাজ ও সভ্যতা৷

অতএব, পেরুমকুলমের বাসিন্দা কৃষ্ণা পিল্লাই নামের এক যুবক ও আরও কয়েকজন মিলে বেশ কিছু বই কিনে ফেললেন। গ্রামবাসীদের থেকে সংগ্রহ করলেন আরও কিছু বই৷ সব মিলিয়ে শ-খানেক বই হল। সেই বই রাখা হল পিল্লাই পরিবারেরই একটি ঘরে৷ এভাবেই স্থাপিত হল পেরুমকুলমের প্রথম গ্রন্থাগার৷ গ্রন্থাগারের নাম দেওয়া হল ‘বাপুজি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’৷ কিন্তু একটি মাত্র গ্রন্থাগারের জন্য তো ‘বইগ্রাম’ হয়ে উঠতে পারে না কোনও গ্রাম। কীভাবে এল সেই স্বীকৃতি?

কাট টু ২০১৬ সাল৷ মাঝে গড়িয়ে গিয়েছে ৬৯ বছর। এতদিনে বাপুজি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি হয়ে উঠেছে অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাগার৷ বইয়ের প্রচার ও প্রসারে মিলছে বিবিধ অনুদান। আজকের প্রজন্ম ঠিক করল, গোটা পেরুমকুলমকেই এবার ‘গ্রন্থাগার’ করে গড়ে তোলা হবে৷ কীভাবে তা হবে?

গ্রামের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছোটো ছোটো ‘বইঘর’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হল৷ কাজও হল সেইমতো। আসলে রাস্তার পাশে গড়ে তোলা হল ছোট সাইজের বুকসেল্ফ৷ ওই বুকসেল্ফের দরজা খুলে বই নেওয়া যায়, ফের বন্ধ করে দিলেই ভেতরে নিরাপদ বই৷ কাঠের বাক্সের আকারের বুকসেল্ফটি যাতে করে বৃষ্টিতে ভিজে না যায়, যাতে করে বইয়ের ক্ষতি না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা হল উপযুক্ত আচ্ছাদনেরও৷ পেরুমকুলমের পথের পাশের একেকটি বইঘরে থাকে ৫০টি করে বই৷ পথ-গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে পড়ার এক অভিনব নিয়মও রয়েছে৷ এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পয়সাও লাগে না ৷ পুরো ফ্রি। তবে বইঘরে নিজের একটি বই রাখলে তবেই সেখানে থেকে পাঠক সংগ্রহ করতে পারেন একটি বই।

নিঃসঙ্গ নয় কেরলের পেরুমকুলম, মহারাষ্ট্রের ভিলহারও নিজেকে ‘বইগ্রাম’ হিসেবে প্রমাণ করেছে। যদিও সেখানে বইঘরের মতো অভিনব কাণ্ড ঘটেনি। তবে আসল জায়গায় রয়েছে মিল। মোদ্দা কথা তো বইকে ভালবাসা, আলোর জানলা খোলার মতো করে বইয়ের মলাট খুলে বসা! ভিলহারের মানুষ তাই করে। এই গ্রামের প্রায় সকলেই বইপ্রেমী, গভীর পাঠক। ফেসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকাণ্ড দাপটের যুগেও! সূত্র: টাইমস নাউ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ