Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসি নয় দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের দাবি নির্বাচন কমিশন নয়, সার্চ কমিটি নয়; তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগই যদি সরকারে থাকে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগেই বলেছি, এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মাথা ব্যথা এটা নিয়ে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে কারা থাকবে? যদি আওয়ামী লীগ সরকারে থাকে, নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ তারা আবার তাদের মত করে একই কায়দায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে; আর আমরা বসে বসে দেখব। আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ওই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচন কমিশন তৈরি করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নতুন কমিশন সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, তাদের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের জনগণের ভোটের যে অধিকার, ভোটের অধিকার তাকে সুনির্দিষ্ট করা, তারা যেন ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এটা তাদের দায়িত্ব এবং একটা প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে- এ রকম একটা পার্লামেন্ট, এ রকম একটা সরকার গঠন করা। কিন্তু আমরা কী দেখেছি- ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ ওই ব্যবস্থাটাকে ধবংস করে দিয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগের আন্দোলন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দাবিটা তাদেরই ছিল- এই কথাটা আপনারা বলেন। আমরা এটা মেনে নিয়েছিলাম যে, এটা জনগণের একটা আকাক্সক্ষা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনও জনগণের বিরুদ্ধে যাননি, তিনি এটাকে মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন, তার অধীনে তিনটা নির্বাচন হয়েছে- একটা প্রশ্ন করেনি। যখনই তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় এল, দেখলো যে কিছুতেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যদি থাকে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না, জনগণ তাদের আর ভোট দেবে না।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি মানুষ, এই যে রিকশাওয়ালা, এই যে ফল বিক্রি করছে, এই যে মাছ বিক্রি করছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন- তারা বলে এই আওয়ামী লীগের হাত থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব? গোটা সমাজকে তারা ধবংস করে দিয়েছে, গোটা সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্ট করেছে। যেখানে যাবেন ভাগ ভাগ ভাগ। চাকরি পাবেন না যদি আওয়ামী লীগের ছাপ না থাকে। নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। আমরা আগেই বলেছি এই সম্পর্কে কেনো আমাদের ওপর চাপ দেন? এই কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

সংগঠনের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সদস্য দেবাশীষ রায় মধুর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, সুশীল বড়ুয়া বক্তব্য দেন।

এদিকে বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ নির্বাচন : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের রোল মডেল’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব ৯১ সালের মতো ‘নির্দলীয় সরকার’ এর অধীনেই নির্বাচন দাবি করেন। তিনি বলেন, দেশে যে সংকট চলছে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের কোনো বিকল্প নেই সংগ্রাম-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগ করতে। তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের মতো তাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিশীল একটা পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠন করা। তাহলে শুধুমাত্র এই সংকট উত্তরণ করা সম্ভব হবে।

দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আর কোনো দ্বিধা নয়, দ্বন্দ্ব নয়। এই দেশকে রক্ষা করবার জন্যে, গণতন্ত্র, ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করার জন্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আজকে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দূর্বার সংগ্রাম করি, যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার গঠন করতে পারি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কোনো দেশের স্বৈরাচার কোনো গণআন্দোলন ছাড়া ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চায় না। আমরা বিশ্বাস করি, এই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই আজকের এই দিনটিকে সামনে রেখে আমাদেরকে নব্বইয়ের মতো গণআন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অখ্যাত-কুখ্যাত একজন লোক তাকে দেয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে। হাবিবুল আউয়াল সম্ভবত। কখনো নাম শুনিনি। এই সমস্ত অখ্যাত-কুখ্যাত লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা সেই ব্যাপার আগ্রহী নই। কিন্তু খুবই খারাপ লাগে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য একদল জল্লাদ নিয়োগ করেছে, নির্বাচন কমিশন নয়।

জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন কমিশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ