পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ হাজার (৫৮৮২ কি.মি) দূরে ইউক্রেনে ভøাদিমির পুতিনের সামরিক হামলার ঘোষণায় দ্রুতই বদলে যাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। হঠাৎ এ সঙ্কটে বাংলাদেশ কোথায়? আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর এসেছে ইউক্রেনে হাজার বাংলাদেশি চরম সঙ্কটে রয়েছেন। যদিও তাদের পাশের দেশ পেল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে গেছে হু হু করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্যাংশন আরোপ করেছে। কিন্তু এ স্যাংশনের প্রভাব বাংলাদেশে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে কথা বলেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান। তার আশঙ্কা পুতিনের এ যুদ্ধবাজ খেলায় বাংলাদেশ বেশকিছু সঙ্কটে পড়বে এই ইস্যুতে। তার মধ্যে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বাংলাদেশে চলমান রাশিয়ার প্রকল্পগুলোর কী হবে, পণ্য সরবরাহ চেইন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে কারেন্সির বাজার দরে অস্থিরতায় কোন পক্ষে যাবে বাংলাদেশ।
গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, আমাদের জ্বালানি আমদানি করে আনতে হয় বিদেশ থেকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা শুরু হওয়ায় জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আমরা দেখেছি তা ১০০ ডলারে পৌঁছে গেছে। এটা বাড়তেই থাকবে। এটা যত বৃদ্ধি পাবে এর যে নানাবিধ প্রভাব আমাদের সামনে আসবে। শুধু জ্বালানির মূল্য নয় এর সঙ্গে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বেড়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেন, বেলারুশ এবং রাশিয়া সংলগ্ন ওই অঞ্চল থেকে পৃথিবীর একটি বড় অংশে গম রফতানি হয়। বাংলাদেশে আমদানি করা গমের একটি বড় অংশ এই অঞ্চল থেকে আসে। যুদ্ধের ফলে এসব অঞ্চল থেকে গম রফতানি হবে না বা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিশ্বের খাদ্যবাজার অস্থির হয়ে যাবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। যেটার সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপরে এসে পড়বে।
তৃতীয়ত, এই হামলার কারণে সারা পৃথিবীতে যে সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ রুট) রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বিঘিœত হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিঘিœত হওয়ার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের পণ্য বা পোশাক রফতানি করার যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেটা অনেক ক্ষেত্রে বিঘিœত হয়ে যাবে। আমরা জানি যে, আমাদের তৈরি পোশাকের যে রফতানি হয় সেক্ষেত্রে সরবরাহের একটি সময়সীমা বা ডেডলাইন দেয়া থাকে। অর্ডারের শিপমেন্ট যদি ৭ দিন পিছিয়ে যায় তাহলে সেই সিজনটি ক্রেতারা আর ধরতে পারে না। সেক্ষেত্রে অর্ডারও বাতিল হয়ে যাবে। সাপ্লাই চেইন বিঘিœত হওয়ার কারণে আমাদের পণ্য রফতানি করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার বিশেষত জাহাজ বা অন্যান্য যে পদ্ধতি রয়েছে তা যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এর সরাসরি প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়বে এবং এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপরও।
চতুর্থত, আমাদের খুব বড় একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে রূপপুরে। যেটা রাশিয়ার রোসাটন স্টেট এজেন্সি দ্বারা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে, রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে। যদি এ ধরনের স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তাহলে আমাদের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পের চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। অন্যদিকে যদি স্যাংশনের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পড়ে যায় তাহলে এই প্রকল্প স্থগিতও হয়ে যেতে পারে।
পঞ্চমত, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর কাছে বিভিন্ন ধরনের রাশিয়ার তৈরি সরঞ্জামাদি আছে যেমন, মিগ-২৯, এম আই-১৭ হেলিকপ্টার এবং অতি স¤প্রতি এটাচ হেলিকপ্টারের অর্ডার দেয়া হয়েছে রাশিয়াকে। সশস্ত্র বাহিনীর কাছে রাশিয়ার তৈরি সেসব সরঞ্জামাদি আছে এগুলোকে চলমান রাখা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্প‚র্ণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এগুলোর যদি স্পেয়ারস না পাওয়া যায়, এগুলো যদি মেইনটেন্যান্স না করা যায় তাহলে তো এগুলো অকেজো হয়ে যাবে, এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
ষষ্ঠত, এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা যেভাবে বিঘিœত হচ্ছে সেটার প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। অর্থনৈতিকভাবে যেকোনো সময় পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে সংঘাত হলে আন্তর্জাতিক চলাচল, আমদানি-রফতানির ওপর যে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বা বীমার মূল্য থাকে তা বহুলাংশে বেড়ে যায়। তার কারণে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা পণ্য আমদানি ও রফতানি যে মূল্যে আমরা পৌঁছাব তাতে পণ্যমূল্যের দাম অনেক অংশে বেড়ে যাবে এবং এর প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর পড়বে। বীমার মূল্য বাড়লে সবকিছুর বাজার দরও বেড়ে যাবে।
সপ্তমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার বা কারেন্সি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রা বাজার ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। মুদ্রাবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের ওপর এসে সরসারি পড়বে।
অষ্টমত, ক‚টনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, রাশিয়ার এই হামলার ফলে বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের ওপর চাপ আসবে যেকোনো একটি পক্ষ নেয়ার। অথবা জাতিসংঘ যদি এই ইস্যুতে ভোটে যায় তাহলে চাপ আসবে সে ক্ষেত্রেও। ক‚টনৈতিক মধ্যস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।
নবমত, আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্ররাষ্ট্রের নিরাপত্তা। যেসব দেশ খুব বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্ধারা পরিবেষ্টিত থাকে, সেসব দেশে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কীভাবে বজায় রাখবে সেটার বিষয়ে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এখানে বিশেষ করে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বর্তমানে যে রাজনৈতিক, ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা, বিভিন্ন দেশের সৃষ্টি হয়েছে; যার ওপর দাঁড়িয়ে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা বজায় আছে, সেটা যদি সম্পূর্ণভাবে বিঘিœত হয়ে যায় তাহলে এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারছি না।
দশম, এ যুদ্ধের মাধ্যমে কতগুলো নতুন ধরনের পন্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তার মধ্যে উল্লেখ করার মতো যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, যেকোনো দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী সেটা এথনিক মাইনোরিটি বা রিলিজিয়াস মাইনোরিটি হতে পারে তাদের এমনভাবে উইপেনাইজ করা হচ্ছে যে, তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণœ করার জন্য এক ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে। যেমন- বর্তমান এ সঙ্কটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, দু’টি রিপাবলিকানকে রাশিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলো এবং তাদেরকে দিয়েই আগে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড় করিয়ে, স্বীকৃতি দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হলো যে রাশিয়া তাদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিলো।
এটাকে ইংরেজিতে বললে দাঁড়ায়, ‘উইপেনাইজেশন অফ এথনিক অ্যান্ড রিলিজিয়াস মাইনোরিটি ইন অ্যা স্টেট টু সাভার্ড ন্যাশনাল সভরেন্টি।’ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অথবা ধর্মীয় মাইনোরিটিকে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া এবং পরবর্তীতে তাদের সাহায্যে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।