পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অমর একুশের প্রথম প্রহর থেকেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সাথে সাথে শুরু হয় ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার অভিমুখি গণমানুষের জনস্রোত। রাত পেরিয়ে বেলা পোহালে সেই স্রোত গিয়ে মিশে বইমেলায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহীদ মিনার ও বইমেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে দেখা যায় জনস্রোত। শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে ছাত্রনেতা, তরুণ তরুণী থেকে বৃদ্ধরাও বাদ যাননি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে।
গতকাল অমর একুশে বইমেলা পার করে একটি বিশেষ দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরেই মূলত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা। গতকাল সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হয় মেলা। সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায় সাদা কালো পাঞ্জাবী আর শাড়িতে সেজে বাহারী রঙের ফুলের মালা মাথায় অসংখ্য তরুণ তরুণী। বাবা মায়ের সঙ্গে আসা শিশুদের হাতে ও মুখে ছিল বর্ণমালা আর শহীদ মিনারের আল্পনা। যেন মনে হচ্ছিল প্রভাতফেরীর স্রোত মিশছে বইমেলাতে এসে। সকলের চোখে মুখে ছিল বিজয়ের উচ্ছাস। মায়ের ভাষার অধিকার আদায়ের আনন্দ। বর্ণমালার সাজে সেজে মাথায় টায়রা লাগিয়ে তরুণীরা যেন একুশের চিত্রই ধারণ করছিলেন নিজেদের অঙ্গে। তরুণরাও বর্ণমালা খচিত পাঞ্জাবীতে রাঙ্গিয়েছেন নিজেদের। তাদের এই উচ্ছাস আর আনন্দের চিত্র যেন জানান দিচ্ছিল একুশ আমাদের। এটি আমাদের আত্ম পরিচয়ের দিন। আমাদের গর্বের দিন। স্টলগুলোর বিক্রয় কর্মীরাও সেজেছিলেন একুশের সাজে। সরাসরি একুশের বইমেলার অংশ হতে পেরে তারা প্রকাশ করছিলেন তাদের আনন্দ আর গর্বের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাম্রলিপির বিক্রয়কর্মী আব্দুল হামিদ ও জাকিয়া তারাও সেজে এসেছিলেন একুশের সাজে। তাদের পড়নে ছিল বর্ণমালা খচিত সাদা পাঞ্জাবী ও কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। তারা বলেন, আসলে একুশ ব্যাপারটা মনের মাঝে একটি অন্যরকম দোলা দেয়। এই দিন এলে মনে হয় আমরা বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি। যে জাতি তার মায়ের ভাষার প্রতি বিন্দুমাত্র কোন আপোষ করেনি। তারসাথে এই একুশের বইমেলার অংশ হতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমিই একুশ।
ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আসিক মনজু বলেন, একুশের চেতনা টা আসলে শুধু এই ফেব্রয়ারি মাস, শহীদ মিনার আর বইমেলায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। একুশ ধারণ করতে হবে আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে, আমাদের দৈনন্দিন কথায়। সেক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিদেশী শব্দের ব্যবহার বর্জন করতে হবে সবার আগে। যেই শব্দগুলোর বাংলা পরিভাষা আছে সেই শব্দগুলো যাতে সর্বত্র বাংলাতেই ব্যবহার করা হয় সেই দিকে নজর দিতে হবে সবার।
আবরার প্রকাশনির একাউন্ট ম্যানেজার জামাল হোসেন বলেন, আমরা যারা প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটা বিশেষ মাহাত্ম বহন করে। আজকের দিনেই মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন অনেকে। এ দিনকে সামনে রেখেই মেলা শুরু হয়। আজকে সকাল ৮টা থেকে মেলা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে লোক সমাগমও হয়েছে অনেক। বিক্রি ও হয়েছে অনেক।
বয়সের হিসেবে ১৩ বছরের শিশু জাওয়াদ এসেছেন বাবা শফিকের সাথে। সে জানায়, সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি এরপর বাবার সাথে বইমেলায় এসেছি। জিতু সিরিজের বই কিনেছি,অনেক ভালো লাগছে। সবাই মিলে একসাথে অনেক আনন্দ করেছি।
মেলায় ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাকিল আহমেদ জানান, আগেও এসেছি বইমেলায়, তবে আজকের মেলাটা অন্যরকম। একটু জমজমাট। সবার মাঝে একটা উদ্দীপনা কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিমা তারিন বলেন, আসলে একুশের বইমেলাটা আজকে একটু স্পেশাল যেহেতু আজকেই সেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই আজকে বইমেলায় আসতেই হতো প্রাণের টানে তাই চলে আসলাম। আর বেশ কয়েকটি বইও কিনেছি।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২২৪টি। শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ফিরে দেখা : আমাদের ভাষা আন্দোলন শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।