বেইজিং জাতীয় স্টেডিয়ামে রোববার রাতে অলিম্পিকসের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই ভেন্যুতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিনিই উদ্বোধন করেছিলেন প্রতিযোগিতাটির।
এই বেইজিংয়েই ১৪ বছর আগে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের জমকালো আসর দেখেছিল বিশ্ব। এই প্রথম কোনো শহর গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন দুই রকম আসরই আয়োজন করল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতো সমাপনীও হলো মহামারীর বাস্তবতা মেনে। পরে বেইজিংয়ের মেয়র শেষ জিনিং অলিম্পিকের পতাকা তুলে দেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখের হাতে। শীতকালীন অলিম্পিকের পরবর্তী আসর বসবে মিলানে, ২০২৬ সালে। তার আগে ২০২৪ সালে প্যারিসে বসবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের আসর।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আধিপত্যের মাঝে অলিম্পিকসের মতো বিশাল এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারা চীনের জন্য সহজ ছিল না। তবে কঠোর সুরক্ষা বলয়ের কারণে আসরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারেনি, যা চীনের জিরো-কোভিড নীতিই প্রমাণ করে। সীমান্তগুলো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল তারা।
কোভিড পজিটিভ হওয়ায় অনেক ক্রীড়াবিদের অলিম্পিকসের স্বপ্ন অবশ্য ভেস্তে যায়। আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি তারা।
আসরে ১৫টি ডিসিপ্লিনে রেকর্ড ১০৯টি ইভেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার ক্রীড়াবিদ। চীনের ৯টি সোনার পদক যেন তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। তালিকায় তারা আছে তৃতীয় স্থানে।
মাত্র ৫৫ লাখ জনসংখ্যার নরওয়ে জিতেছে রেকর্ড ১৬ সোনা। সব মিলিয়ে ৩৭টি পদক জিতে প্রত্যাশিতভাবে সবার ওপরেই আছে শীতকালীন ক্রীড়ার শক্তিশালী দেশটি।
আসরে সবচেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দেয় ১৫ বছর বয়সী কামিলা ভালিভাকে ঘিরে বিতর্ক। চূড়ান্ত স্কেটে চাপের মধ্যে হোঁচট খান তিনি।
ডোপিংয়ের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার ক্রীড়াবিদরা দেশটির পতাকাতলে আসরে অংশ নিতে পারেনি। ভালিভা গত ডিসেম্বরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ডোপিং পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিন্তু ওই ফলাফল প্রকাশ হয় ৪ ফেব্রুয়ারি। এর একদিন পর এবারের অলিম্পিকসে তিনি জেতেন দলীয় পদক।
তবুও তাকে একক ইভেন্টে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চতুর্থ হন তিনি। তার পারফরম্যান্স নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান কোচ।
এবার মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে বাইরে ছিল আরেক খেলা, রাজনীতির খেলা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ও ইউক্রেইনে রাশিয়া আগ্রাসনে কূটনৈতিকভাবে আসর বয়কট করে। অর্থাৎ সেসব দেশের ক্রীড়াবিদরা অংশ নিলেও সরকারি কোনো প্রতিনিধি বেইজিংয়ে ছিলেন না।
তবু চীনের জন্য স্বস্তির, মুসলিম সংখ্যালঘু জাতিসত্তা উইঘুরদের ওপর দেশটির শাসকদের নির্যাতন চালানো নিয়ে ক্রীড়াবিদদের কোনোরকম প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হয়নি। হাজার হাজার বিদেশি সাংবাদিক একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আটকে ছিলেন। তাই আরও বিস্তারিতভাবে প্রতিবেদনও করতে পারেননি তারা।