বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনা ও অমিক্রণ পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে প্রায় বিগত ২ বছর ধরে। তবে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদানসহ শিক্ষকদের অফিস চালু রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গুতিয়াবো এলাকার প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম মাস্টার ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্কুলের অবকাঠানো উন্নয়ন ও পাঠদান ব্যহত করে রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম মাস্টার নানা অযুহাতে স্কুল ফাঁকি দিয়ে, অফিস কক্ষ বন্ধ রেখে এমনকি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়া কিংবা পাঠ্য বিষয় পরিবর্তন, কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ফরম ফিলাপের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতে সক্রিয় ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানের কাজের নামে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে মনগড়া শিক্ষক প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেও অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে রয়েছে অভিযোগ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি করোনা মহামারীকালে সরকারের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষ চালু রাখার নির্দেশনা থাকলো গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এমনকি ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রূপগঞ্জের প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ ছিলো তালাবদ্ধ। আর পতাকার স্যান্ড দাড় করিয়ে রাখলেও ছিলো না জাতীয় পতাকা। এমন চিত্র বিষয়ে আশপাশে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, করোনাকালীন প্রায় সব সময় এভাবেই স্কুল কক্ষে তালা ঝুলে থাকে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে। তবে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সময় আর বই বিতরণের সময় খোলা থাকে। তাদের অভিযোগ, দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুল করেন না। আর ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে স্কুলের টাকা আত্মসাত করাসহ শিক্ষকদের কাছে থেকেও এমপিওসহ নানা কাজের কথা বলে আদায় করেন ঘুষ। এভাবে নানা দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে দাবি তাদের।
সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রগতি জুনিয়র স্কুল। তবে ২০০০ সালের দিকে এ বিদ্যালয়টিতে ক্রমেই বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী। পরে ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। এতোদিন বিদ্যালয়ের নামে কোনো জমি বরাদ্দ না থাকায় এবং পূর্বাচল নতুন শহর ওই বিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ করায় ভবন পায়নি বিদ্যালয়টি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে পূর্বাচলের ৩ নং সেক্টর এলাকায় ৯৮.১৭ কাঠা জমি বরাদ্দ দেন। শুধু তাই নয়, ওই বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ৬ তলা ভবনের জন্য ৫ কোটি ২৬ লাখ ২০ হাজার বরাদ্দ পায়। যার কাজ চলমান রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ভালো নেই। ভালো ফলাফলে কোনো বছরই উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও কোনো অবস্থান দখল করেনি। এমনকি শতভাগ পাশ নেই কোনো বছর। বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যাও নেই তেমন। তবু আশপাশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে পাঠদান করছেন।
২০২১ সালে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় কেয়ারিয়া এলাকার শিক্ষার্থী রাতুল। অভিযোগ করে ওই শিক্ষার্থী জানায়, তার মুল বিষয় কৃষি থাকলেও বিজ্ঞানে পড়ার কারণে পছন্দ ছিলো উচ্চতর গণিত। তাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিমকে তার আবেদনের কথা জানালে, বিষয় পরিবর্তনের জন্য ৯ হাজার টাকা দাবি করে। ওই দাবিকৃত টাকা থেকে রাতুল ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল মিয়ার মাধ্যমে ৬ হাজার টাকা প্রদান করে। তবে ওই টাকা দেয়ার পরও বিষয় পরিবর্তন না করলে টাকা ফেরত চায় সে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য দুলাল মিয়া ওই শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দেয়। রাতুল জানায়, তার মতো আরো ৮ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একই বছর টাকা নিয়েছিলো ওই শিক্ষক। এভাবে প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা সুবিধা দেয়ার কথা বলে আদায় করে টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন কাজের কথা বলে মনগড়া ভাউচার তৈরি করতেন। বই প্রাপ্তি, স্কুলের নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজের নামে প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আব্দুল করিম মাস্টার। কাগজপত্রে মিল রাখা ও সম্মতি দানের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের তার পছন্দের শিক্ষকদের রেখেছেন প্রতিনিধির তালিকায়। ফলে কোনো প্রকার অভিযোগ করার কেউ ছিলো না। সম্প্রতি রাজউকের করা ভবন তদারকি ও দেখভালের নামে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে গোপন আতার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নোট গাইডকে নির্ধারণ করে কমিশন হাতিয়ে নিয়েছেন।
এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, কোনো প্রকার অনিয়মে জড়িত নই। তবে স্কুলের কাজেই উপজেলা ও বোর্ডে দৌঁড়াতে হয়, তাই অফিসে মাঝে মাঝে থাকা হয়না। নোট গাইড সিন্ডিকেটে আমি নই অন্য কোনো শিক্ষক জড়িত থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দুলাল মিয়ার মাধ্যমে কতিপয় শিক্ষার্থী লেনাদেনা করেছেন শুনেছি। তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান জানান, আমি পদাধিকার বলে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে আছি। সেখানে কোনো প্রকার অনিয়ম পেলে ছাড় দেয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করা হবে । প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।