নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন, গৌহাটি (ভারত) থেকে : বছর খানেক ধরে ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে পালা করেই ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ও অলিম্পিক ফুটবল দল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব, সাফ সুজুকি কাপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পর আবারো দেশের ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করলো লাল-সবুজরা। এবার জাতিকে লজ্জা দিলো বাংলাদেশ অলিম্পিক দল। গৌহাটি-শিলং সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস পুরুষ ফুটবলের সেমিফাইনালে খেললেও স্বাগতিক ভারত বাধা টপকাতে পারলো না তারা। গতকাল দুপুরে গৌহাটির ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে এসএ গেমস ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত ৩-০ গোলে বাংলাদেশকে হারায়। এই হারের ফলে গেমসে স্বর্ণ বা রৌপ্যপদক জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো লাল-সবুজদের। এখন বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের লড়তে হবে ব্রোঞ্জপদকের জন্য।
ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়ামে থাকা এসএ গেমসের প্রজ্জলতি মশাল থেকে বের হচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা। সেই শিখা থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া আকাশের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। গৌহাটির পাহাড়ের কোল ঘেষা স্টেডিয়ামে শেষ বিকেলে বাংলাদেশের ফুটবলও যেন ধোয়ায় আচ্ছন্ন। স্বাগতিকদের কাছে হেরে মাথা নত করেই মাঠ ছাড়ছেন রেজাউল করিম, জামাল ভুইয়া, নাবিব নেওয়াজ জীবনরা। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে ওয়ালি ফয়সাল-মামুনুল-এমিলিরা যা করে দেখিয়েছিলেন তা কাল মিইয়ে দিলেন রায়হান-তুপ বর্মনরা।
দেশের ফুটবলে ধারাবাহিক ব্যর্থতার গøানি ভুলে ভারতের ঐতিহাসিক মন্দির কামরুক কামাক্ষার শহরে নতুন দিগন্তের সূচনার প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু তা আর হয়নি। প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে হেমন্ত-জীবনরা নীড়হারা পাখির মতোই এদিক-সেদিক ছটফট করেছেন। ভাগ্য সহায় ছিলো বলেই শেষ পর্যন্ত ড্র করে মান বাঁচিয়েছিলেন তারা। গ্রæপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে জয় আসলেও বাংলাদেশের খেলায় কোনো শিল্পের ছোঁয়া ছিল না। এতো কিছুর পরও কাল প্রথম সেমিফাইনালের ইতিহাসই প্রেরণা ছিল স্প্যানিশ কোচ গঞ্জালো সানচেজ মরেনোর দলের। ঢাকা এসএ গেমসের শেষ চারে এই ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে ওঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বার বার ঘটেনা। ঘরের মাঠে ভারত দুর্দান্ত। তাই ম্যাচের শুরু থেকেই তারা আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে কোণঠাসা করে রাখে বাংলাদেশকে। অবশ্য নিজেদের ভালো খেলার পাশাপাশি রেফারিকেও আপন করে পেয়েছিলো ভারতীয়রা। নেপালী রেফারি লাব্বা খাত্রির বির্তকিত দু’টি সিদ্ধান্ত মানসিকভাবে পিছিয়ে দেয় বাংলাদেশের ফুটবলারদের।
অবশ্য বিতর্কিত ঘটনা ঘটার আগে থেকেই পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা ছিলেন অচেনা। রক্ষণ, মধ্যমাঠ কিংবা আক্রমণভাগ, সব বিভাগেই অগোছালো ফুটবল খেলেছেন তারা। বল নিয়ে ভারতের ডি-বক্সের সামনে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলে রেজাউল করিম বাহিনী। আক্রমণভাগে স্পষ্ট দেখা গেছে জীবন-সোহেল রানারা যেন ভুলে গেছেন বল রিসিভ করতে। অন্যদিকে রক্ষণভাগে যাচ্ছে তাই খেলেছেন তপু-রেজাউলরা। ভারতের আক্রমণের সামনে অনেকটাই অসহায় ছিলো বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। এই সুযোগটাই কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেয় স্বাগতিক দল। প্রতিশোধ তুলে নেয় গত এসএ গেমসে হারের। স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে উপস্থিত হাজার তিনেক সমর্থকদের উৎসাহে উজ্জীবিত ভারত বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা করে। ম্যাচের ২১ মিনিটে প্রথম গোল পায় ভারত। এসময় বাংলাদেশ অধিনায়কের ভুলের খেসারত দিতে হয় লাল-সবুজদের। ডি-বক্সের ভেতরে বল ক্লিয়ার করতে পারেননি রেজাউল। তার সামনে থেকে বল নিয়ে প্লেসিং শটে গোল করেন ভারতের ফরোয়ার্ড কুমান উদান্তা সিং (১-০)। গোল হজম করার পর ম্যাচে ফেরার চমৎকার সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। ২৫ মিনিটে গোলের সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। এ সময় তপু বর্মনের থ্রো’র বল ডি-বক্সের ভেতর পান ফরোয়ার্ড নাবিব নেওয়াজ জীবন। তার হেড ভারতীয় ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সোহেল রানা শট নিলে তা ভারতীয় গোলরক্ষক রেহেনিশ গ্রিপে নেন। ম্যাচের ৪১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয় স্বাগতিকরা। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পান ভারতের মিডফিল্ডার গারমানপ্রিত সিং। তার মাইনাস থেকে পাওয়া বল ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে জোরালো শটে বল জালে পাঠান ভারতীয় ফরোয়ার্ড মাউইহিমিংতাঙ্গা (২-০)।
দুই গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে একটা নিশ্চিত গোল থেকে লাল-সবুজদের বঞ্চিত করেন রেফারী। ৫৯ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতরে ভারতের এক খেলোয়াড় নাবিব নেওয়াজ জীবনকে ফেলে দেন। ফুটবলের আইনে যেটা নিশ্চিত পেনাল্টি। কিন্তু নেপালী রেফারি লাব্বা খাত্রি দেখেও তা না দেখার ভান করে এড়িয়ে যান। এ ঘটনার পর ডাগ আউটে দাঁড়ানো বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের কোচ গঞ্জালো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এদিক-সেদিক লাফালাফি করে চিৎকার দেন। তা দেখে সহকারী রেফারি গঞ্জালোকে সতর্ক করেন। গঞ্জালোর ক্ষুব্ধ আচরণ দেখে শেষ পর্যন্ত রেফারি তাকে মাঠ থেকে বের করে দেন। এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পাঁচ মিনিটের মধ্যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল আরেকটি বির্তকিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ভারত যে গোলটি করে সেটি পরিষ্কার অফসাইড গোল ছিলো। কিন্তু রেফারী তা এড়িয়ে যান। অফসাইড জাল ভেদ করে হালিচরণের মাইনাস থেকে ভারতের পক্ষে তৃতীয় গোল আদায় করে নেন জয়েশ দিলিপ রানে (৩-০)। কিন্তু গোল বাতিলের দাবিতে লাইন্সম্যানের দ্বারস্থ হলেও রায়হানদের ফিরিয়ে দেন রেফারি। ম্যাচের বাকি সময়ও বল দখলের লড়াইয়ে ভারতী দের সঙ্গে পেরে ওঠেননি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু ভাগ্য ভালো আর কোন গোল হজম করতে হয়নি তাদের। তাই শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলে হারের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।