চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ফিতনা’ শব্দটি আরবি ভাষার। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। ফিতনা শব্দের আরেক অর্থ পরীক্ষা করা। এই পরীক্ষা প্রচণ্ড আকর্ষণীয় কোন কিছু (যেমন সম্পদ, সন্তান, নারী) দিয়ে হতে পারে, আবার হতে পারে প্রচন্ড অপছন্দনীয় কিছু দিয়ে (যেমন অকস্মাৎ বিপদ, গৃহযুদ্ধ, বিশৃংখলা, অত্যাচারী শাসক ইত্যাদি)। ইবনুল আরাবী ফিতনার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে: ফিতনা মানে পরীক্ষা, ফিতনা মানে দুর্যোগ, ফিতনা মানে সম্পদ, ফিতনা মানে সন্তান, ফিতনা মানে কুফর, ফিতনা মানে মতপার্থক্য, ফিতনা মানে আগুনে জ্বলা। (লিসান আল আরব-ইবনে মঞ্জুর)।
পবিত্র হাদিসে মোবারাকায় বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরশাদ করেন, দুনিয়া হলো সুস্বাদু এবং সবুজ শ্যামলিয়া। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে এতে প্রতিনিধি করবেন। যাতে করে মহান রব্বুল আলামীন তিনি দেখেন যে, মানুষরা কিভাবে কার্য সম্পাদন করে থাকে। অতএব, তোমরা দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও আর সতর্ক হও নারী জাতি সম্পর্কে। কেননা বনী ইসরাইলের প্রতি যে প্রথম বিপদ বা ফিতনা এসেছিল, তা নারীদের মাধ্যমেই এসেছিল।’ (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)।
বর্তমান সমাজ ও যে কোনো প্রেক্ষাপট দেখলেই আমরা তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, যত ধরনের ফিতনা-ফাসাদ সমাজে দেখা যায় তার মূলে রয়েছে বেপর্দা ও বেহায়া নারীরা। আর এই নারীরা কখন সমাজে, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ফিতনা সৃষ্টি করে? যখন মহামূল্যবান এই সম্মানিতা নারীরা বেপর্দা হয়ে বেহায়াপনা করে, তাদের নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রদর্শন করে ঘুরে বেড়ায় তখনই তাদের দ্বারা ফিতনা সৃষ্টি হয়। আর এই ফিতনা এক পর্যায়ে চরম আকার ধারণ করে। শুরু হয় বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। শ্লীলতাহানি, এসিড নিক্ষেপ, নারী ইভটিজিং মতো জঘন্যতম ঘটনাগুলো এখন সমাজের একটি পরিচিত রূপ। এই ঘটনাগুলো নিয়ে সমাজের মানুষগুলোর মধ্যে নানা প্রকার চিন্তা-ভাবনাও দেখা যায়।
সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গরা সবসময় এই অপকর্মগুলোর দায়ভার পুরুষ সমাজের উপর চাপিয়ে দেয়। ছেলেগুলোকে পুলিশ দ্বারা হয়রানি, জেল-জরিমানার ভয় দেখানো ইত্যাদি করে সমাজের ফিতনা-ফাসাদ থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে চায় তথাকথিত সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু এতে করে কি আদৌ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে নারী নির্যাতন, নারী ইভটিজিং , হত্যা, সম্ভ্রমহরণ ইত্যাদি অপকর্মগুলোর? সম্ভব হয়নি। কারণ মূল যে কারণ তাহলো বেপর্দা নারী। আর এই চিন্তা-ভাবনা থেকে তথাকথিত সমাজবাদীরা অনেক দূরে। আর যতদিন পর্যন্ত বেপর্দা নারীরা পর্দায় না আসবে ততদিন পর্যন্তই সমাজে ফিতনা-ফাসাদ চলতেই থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে। ’ (সূরা আনফাল : আয়াত ২৮)।
একজন মানুষের জন্য দীন পালন এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার মধ্যে অর্থলোভ এবং সন্তানদের প্রতি মায়া-মমতা ভালোবাসা অন্যতম। এ দুটোকে কেন্দ্র করেই মানুষ যত ধরনের অপরাধ করে বসে। তাই আল্লাহতায়ালা বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন, বান্দা! এসব বিষয় তো তোমার জন্য পরীক্ষার একেকটি বিষয় মাত্র। এ ধরনের প্রতিটি বিষয়ে তোমাকে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য লাভ করতে হবে। তবেই তুমি আল্লাহর কাছে থাকা প্রতিদান ভাণ্ডার থেকে বেহিসাব নেয়ামত লাভ করতে পারবে। ইবনে কাসির বলেন, সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়।
আল্লাহপাক মানুষকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেন সে কি আমার শোকরিয়া আদায় করে নাকি সন্তান পেয়ে আমার নাফরমানি করে। সন্তানকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে পারলেই বান্দা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে পরিগণিত হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি বলেন, সন্তান ও অর্থ-সম্পদ মানুষকে আখিরাতের কর্ম থেকে বিরত রাখে। তাই আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিচ্ছেন দুনিয়ার এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। আখিরাতে অনন্তপথের যাত্রাকে অমঙ্গল কর না। (তাফসিরে জালালাইন)।
ফিতনা পতিত হওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যম : ১.আল্লাহভীতি: আল্লাহভীতি হলো সৎকর্মের ভিত্তি ও উৎস। সুতরাং ফিতনা থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহভীতি হলো সবচেয়ে বড় মাধ্যম। ২. সন্দিহান না হওয়া : যে ব্যক্তি সন্দেহ পতিত হয় না সে সাধারণত ফিতনায়ও পতিত হয় না। যা দ্বারা মানুষ ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে বেচেঁ থাকার আশা করতে পারে। ৩. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস : মুমিন ফিতনায় পতিত হয় না। কাফের ফিতনায় পতিত কারণ কুফরের সত্তাটাই হলো ফিতনা। সুতরাং আল্লাহ প্রতি বিশ্বাস ফিতনা -ফাসাদ থেকে বেচেঁ থাকার বিরাট মূল উৎস। ফিতনা মানবজাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বিষয়। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফিতনা - ফাসাদ বা দাঙ্গা -হাঙ্গামা থেকে বেচেঁ থাকা এবং সৎকর্ম দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করা আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।