পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ‘নির্বাচন কমিশন শূন্য থাকলেও এতে সাংবিধানিক সঙ্কটের সৃষ্টি হবে না’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এমন দাবির মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সার্চ কমিটি আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০ জনের নাম তালিকা চূড়ান্ত করে ইসিতে নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে। এর আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপ, ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন, নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে নাম চেয়ে প্রস্তাব, তিন দফায় বিশিষ্টজন ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ ইত্যাদির মাধ্যমে সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। সার্চ কমিটি কার কার নাম প্রেসিডেন্টের কাছে প্রস্তাব করেন সেটা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন। অথচ সার্চ কমিটির কার্যক্রম নিয়ে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাসের দেয়াল। সার্চ কমিটির ওপর এই অবিশ্বাস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দল বিএনপির শুধু নয়; এটা সুশীলসমাজ থেকে শুরু করে ইসির জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের অনেকের মধ্যেও রয়েছে। ফলে অনেককেই নানাভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা কোনো ডাকেই সারা দেননি।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাবিত তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। গত মঙ্গলবার সার্চ কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে তিনি নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পদের জন্য আমি আমার নাম প্রস্তাব করিনি। তালিকায় কেন আমার নাম এলো, নিশ্চিত নই। আমার নাম কে প্রস্তাব করেছেন, তাও জানি না। তাই নাম প্রত্যাহারের জন্য আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ই-মেইল করেছি। নির্বাচন কমিশনে কোনো পদেই নাম বিবেচনায় না নেয়ার জন্য তিনি আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছেন। এমনকি সরকারের অনুগত বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও ইসিতে থাকতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ইসির জন্য সার্চ কমিটিতে যারা আমার নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে আমি সেখানে যেতে চাই না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি সার্চ কমিটির সম্ভাব্য ১০ জনের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর আগেই বঙ্গভবনে চিঠি দিয়ে প্রস্তাবিত নামগুলো জনসম্মখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। সরকারি দলের একান্ত অনুগত দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ইসি গঠন নিয়ে আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এবার যেন দলীয় চামচাদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হয়। সম্প্রতি বিদায় নেয়া ইসি সরকারের তল্পিবাহক ছিলেন জানিয়ে বলা হয় ওই ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সার্চ কমিটি নতুন ইসি নামে কি প্রসব করবে তা সবার জানা। ফলে সার্চ কমিটিতে নাম দেয়া না দেয়ায় কিছুই আসে যায় না।
কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ ও কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন দু’টি নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ববিদ্ধ করেছে। ফলে নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অবিশ্বাসের দেয়াল তৈরি হয়েছে সেটা প্রেসিডেন্টের সংলাপ বর্জনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। ধারাবাহিকভাবে সংলাপে অংশ নিতে ইসিতে নিবন্ধিত ৩২টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অর্ধেক দলই সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপের খতিয়ানে দেখা যায় বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জোট (জাসদ-ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে আমন্ত্রণ পাওয়া দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জেএসডি (রব), জাগপা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুসলিম লীগসহ ১৫টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি।
যেসব দল সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে সে দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন আইন করাসহ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জটিলতা ও অবিশ্বাস দূর করতে আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের সংলাপে অংশ না নেয়া দলগুলো এ আলোচনা প্রক্রিয়াকে ‘লোক দেখানো’ এবং সার্চ কমিটিকে আওয়ামী লীগের ‘আজ্ঞাবহ’ হিসেবে অবহিত করেছে। ফলে সার্চ কমিটিতে দেয়া প্রকাশিত তালিকায় আসা অনেকেই ইসিতে গিয়ে নিজেকে বিতর্কিত করতে নারাজ। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির আগেই নিজেদের নাম না রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ইসিতে যেতে অনাগ্রহের কথা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, যিনি বা যারা আমার নাম সার্চ কমিটির কাছে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে আমি এ বিষয়গুলো (ইসি) নিয়ে ভাবছি না। শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষকতাই আমার পেশা। এ পেশা ছেড়ে অন্য কোথাও (নির্বাচন কমিশন) যেতে চাই না।
বিতর্কের মধ্যেই গঠিত ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি কার্যক্রম শুরুর পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সংগঠনের নামে ১০ জন করে ব্যক্তির নামের তালিকা আহ্বান করা হয়। একই সঙ্গে দেশের ৬০ বিশিষ্টজন ও ১০ জন সাংবাদিককে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায় সার্চ কমিটি। সেখানেও আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোটের শরিক, জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সুবিধাভোগী দলগুলো কিছু ব্যক্তির নামের তালিকা সার্চ কমিটিতে আলোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়। কিন্তু বিএনপি, সিপিবি, জাসদ, বাসদ, জাগপাসহ অনেকগুলো দল নাম পাঠাননি। তারা এই সার্চ কমিটির ওপর অবিশ্বাসের কথা জানিয়ে বলেছেন, নাম দেয়ার প্রয়োজন নেই। এটা মূলত নাটক। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী এই সার্চ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন। সার্চ কমিটি দেশের যে ৬০ জন বিশিষ্টজনের মতামত জানতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল; তাদের নিয়ে তিন দফায় বৈঠকে ৫১ জন উপস্থিত হন। বৈঠকে অংশ নেয়া বেশির ভাগ ব্যক্তিই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের কাছে নাম পাঠানোর আগে জনসম্মখে নামগুলো প্রকাশ করা উচিত। আর যারা সার্চ কমিটির বৈঠকে যাননি তাদের বক্তব্য এই সার্চ কমিটি সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশিদের বর্তমান সরকার তথাকথিত নিরপেক্ষতা দেখানোর জন্য সংলাপের নামে নাটক করা হচ্ছে। সরকারের এই পাতানো ফাঁদে পা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ ছাড়াও যে ১০ সিনিয়র সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তার মধ্যে সরকার অনুগত মাত্র ৪ জন আলোচনায় অংশ নিলেও ৬ জন দাওয়াত গ্রহণ করেননি। তারা মনে করেন সংলাপে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা পাঠানো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সার্চ কমিটিতে যাতে বিএনপি নামের তালিকা পাঠায় সে জন্য আরো একদিন সময় বৃদ্ধি করা হয়। তাতেও বিএনপি ও অন্যান্য দল সাড়া দেয়নি।
অবিশ্বাসের এখানেই শেষ নয়। নতুন ইসির জন্য যাদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে; তাদের কেউ কেউ পদ পেতে তদবির করলেও অনেকেই ইসিতে না থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিতরাও সংলাপে ইসির প্রতি মানুষের অবিশ্বাসের কথাও জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে নির্বাচনী ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সোচ্চার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি তো ওনাদের (সার্চ কমিটি) লিখিতভাবেই জানিয়ে দিয়েছি যে, আমি আগ্রহী নই। আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, জানি না কে আমার নাম নতুন ইসির জন্য সার্চ কমিটিতে প্রস্তাব করেছে। আমি এগুলো নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না।
সাবেক তথ্য কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, যারা আমার নাম দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এমন দায়িত্ব যদি আমাকে দেয়া হয়, নিশ্চয়ই তার আগে আমার সঙ্গে কথা বলে নেবেন। তাই আমি এ মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান সাবেক চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। এটা আমার নিজের বুঝতে হবে, তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারব এবং আপনাদের জানাতে পারব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে চাই না। এ বিষয়ে এখনই কথা বলা ঠিক হবে না।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ) নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, গতবার আমার নাম ১০ জনের তালিকায় ছিল। তবে তখনও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পাইনি বলে দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরে যেহেতু আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছি, তাই এবার আমার মধ্যে দ্বিধা নেই। মহামান্য প্রেসিডেন্ট যদি আমাকে নিয়োগ দেন তাহলে আমি নিশ্চয়ই গ্রহণ করব। কারণ এই দায়িত্বের জন্য আমি খুবই দক্ষ। দেশ-বিদেশে গত ৩০ বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা তা জাতির এই ক্রান্তিকালে কাজে লাগাতে চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।