মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই গুজরাটের একটি জাহাজ নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় ২৩ হাজার কোটি রুপির জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর এটিকে ভারতের ইতিহাসে 'বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি' বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলো বলছে, নরেন্দ্র মোদি সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের মদত ও যোগসাজসেই এত বড় মাপের আর্থিক কেলেঙ্কারি হতে পেরেছে - এবং প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী কেন এই দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলছেন না সে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। সিবিআই এই মামলায় এফআইআর রুজু করতেও দুবছরের বেশি সময় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে - যদিও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্য, এই ধরনের অন্য মামলার তুলনায় এক্ষেত্রে বেশ দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতের হীরা ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও মেহুল চোকসি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে ১৪ হাজার রুপি কোটি ঠকিয়েছিলেন, তারও আগে শিল্পপতি বিজয় মাল্যিয়া বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাৎ করে বিলেতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু গুজরাটের একটি জাহাজ নির্মাণ সংস্থা ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের একটি কনসর্শিয়াম-কে যে পরিমাণ অর্থ ঠকিয়েছে - তার তুলনায় ওই অঙ্কগুলোও এখন বেশ তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
গুজরাটের সুরাট ও দহেজে জাহাজ তৈরির কারখানা আছে এবিজি শিপইয়ার্ডের - সংস্থার প্রধান ঋষি কমলেশ আগরওয়াল ভারতের জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও পরিচিত মুখ। বর্তমানে রুগ্ন ওই সংস্থাটি দেশের মোট ২৮টি ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ২২ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ঠকিয়েছে - সিবিআই শনিবার এই মর্মে এফআইআর দায়ের করার পর রীতিমতো হুলুস্থূল পড়ে গেছে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বলছেন, "দেশের শাহেনশা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি উপহার দেবেন বলে কথা দিয়ে এর মধ্যেই ৫ ট্রিলিয়ন রুপির ধোঁকা দিয়ে ফেলেছেন।" "গত সাড়ে সাত বছরে দেশের ব্যাঙ্কিং খাত থেকে এই পরিমাণ অর্থ উধাও হয়ে গেছে, আর সরকারের তথ্যই বলছে জালিয়াতদের কাছ থেকে এক শতাংশ অর্থও উদ্ধার করা যায়নি।" "এখানেও দেখা যাচ্ছে, সরকার অফিস-অফিস-ফাইল-ফাইল খেলে সময় নষ্ট করছে, আর ধোঁকাবাজ পাঁচ বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের স্কিমটাই যেন, ব্যাঙ্ক লুঠ করো - আর তারপর দেশ থেকে পালাও!"
এবিজি শিপইয়ার্ডের কর্ণধার ঋষি আগরওয়ালেরও খোঁজ মিলছে না, তিনিও অনেক আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলছে, গুজরাটের সংস্থা বলেই কি সরকার এখানে অভিযুক্তদের ব্যাপারে নরম মনোভাব দেখিয়েছে?
শিবসেনা নেতা ও এমপি সঞ্জয় রাউত যেমন এদিন বলেন, "গুজরাটে দেশের সব চেয়ে বড় ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি ঘটার পরও কেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট সেখানে হানা দিচ্ছে না?" "কারা এই মামলায় দুবছরেরও বেশি সময় ধরে এফআইআর পর্যন্ত হতে দেয়নি? কার স্বার্থ ছিল এতে? জালিয়াতিতে প্রধান অভিযুক্ত কীভাবে পালাতে পারল তা নিয়েও তো গবেষণা হওয়া দরকার!"
এবিজি শিপইয়ার্ড ২০১২ থেকে ২০১৭র মধ্যে আইসিআইসিআই, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট ২৩ হাজার কোটি রুপি ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু ২০১৯র নভেম্বরেই স্টেট ব্যাঙ্ক সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানায় এই গোটা অর্থটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারও সোয়া দুবছর পর এসে সিবিআই এতদিনে আনুষ্ঠানিক এফআইআর রুজু করল - যদিও স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মানতে রাজি নন এটা তেমন কোনও দেরি হয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্বামীনাথন জানকীরামন বলছেন, "এত বড় অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করতে সিবিআইয়েরও বহু তথ্য প্রয়োজন হয়, তাদের নিজস্ব ফরেনসিক অডিট চালাতে হয়।" "পুরো ঘটনাক্রম উদ্ঘাটন করতে দু-এক বছর সময় লেগেই যায়, তারপরই কেবল এফআইআর রুজু করা যায়। ফলে আমি মনে করি না এখানে কোনও দেরি হয়েছে।"
এই দুর্নীতির ব্যাপারে সরকার হাত গুটিয়ে আছে, গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। মিস সীতারামন বলেন, "ব্যাঙ্কিং খাতের বিশেষজ্ঞ ও পেশাদাররা পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন, ঋণের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন - তাদের কাজটা তো আগে শেষ করতে দিতে হবে।" তিনি আরও দাবি করেন, একটা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ধরতে যেখানে গড়ে ৫২ থেকে ৫৬ সপ্তাহ লেগে যেত - মোদি সরকারের আমলে সেই সময়সীমা অনেক কমে এসেছে। কিন্তু ২৩ হাজার কোটি রুপির বিশাল অঙ্কের সামনে এই 'ডিফেন্স' খুবই দুর্বল শোনাচ্ছে - এবং বিজয় মাল্যিয়া, নীরব মোদির পর সরকারের নতুন অস্বস্তির নাম হয়ে উঠেছেন ঋষি আগরওয়াল। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।