Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্টেই পাওয়া যায়

অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে তার অবদানকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই ও তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যে রিপোর্ট দিত সেগুলোতে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ভাষার জন্য রক্তদানের মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, মাতৃভাষায় কথা বলার সুযোগটিও পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। অনেক আঘাত ও বাধা এসেছে। সব অতিক্রম করে বাংরাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনক বলতেন, জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জনের জন্যই ছিল আমাদের সংগ্রাম।

গতকাল গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিতে যুক্ত হয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। সেটাতে প্রবেশ করতে হবে সত্যি; কিন্তু বইয়ের পাতা উল্টে পড়ায় বেশি আনন্দ। প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, কিন্তু মেলাটা আরও সুন্দর হোক সেটাই চাই। এবারে মেলার মূল যে প্রতিপাদ্য এটা ভিন্ন মাত্রা দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বইমেলা দেরিতে শুরু করতে হলো। প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো। এ কারণে দেরি করে শুরু করতে হলো। আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করতে পারছি সেটাই বড় কথা।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা, কথা বলার অধিকার। এই ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। করাচি সাহিত্য সম্মেলনে ৪৭-এ ঘোষণা হয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। তখনই প্রতিবাদ জানানো হয়। ৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন তিনি। অন্যান্য সংগঠন নিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। সেই পথ বেয়ে ৫২-তে প্রাদেশিক পরিষদের সভা ছিল। বাজেট সেশনে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তটাও তার দেওয়া ছিল। রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা আদায় করতে হয় আমাদের। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাণের মেলা। সেটা না হতে পারলে সবার মন খারাপ হয়। আমাদের ভাষার অধিকারে বারবার আঘাত এসেছে। আরবি অক্ষরে বাংলা ভাষা, রোমান হরফে বাংলা লেখার বিষয়টি এলো। বারবারই প্রতিবাদ করা হয়েছে। একটি জাতি সবসময় উন্নতি করতে পারে ভাষা সংস্কৃতির উন্নতি হলে। প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে সংস্কৃতিসেবীদের ভূমিকা রয়েছে।

অনুবাদের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষার গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল নিজের ভাষাকে গুরুত্ব দিলেই হবে না। অনুবাদ সাহিত্য যেন আরও ভালো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের বাংলা সাহিত্য যেন অন্য ভাষাভাষীরা জানতে পারে, সেদিকে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনই অন্য ভাষার সাহিত্যও আমাদের জানতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার জন্মদিন ১৭ মার্চ পর্যন্ত অমর একুশে বই মেলার মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে বাংলা একাডেমি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অতীতে দেশের প্রত্যেক জেলা বা মহকুমায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হোত, সহিত্য চর্চা হোত, সাহিত্য সম্মেলন হোত, আলোচনা হোত যে চর্চাটা অনেকটা কমে গেছে। এটাকে আবার একটু চালু করা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি জেলার পাশাপাশি এখন উপজেলা পর্যায়েও শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে এবং আমাদের এই বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকেও আপনারা যদি একটু উদ্যোগ নেন তাহলে আপনারা দেখবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক মেধাবী কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী আমরা পাব। আমি মনে করি যে, এই বই মেলাটা আমরা এক মাস চালাতে পারি। তবে, সেটা আপনারা নিজেরাও ভেবে দেখবেন কারণ, আমি একাতো আর কিছু বলতে পারবো না। আর এই বই মেলাটো শুধু বই মেলা নয় সকলের মিলন মেলা, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সংস্কৃতিক জগৎ বা আমাদের শিল্প সাহিত্য জগৎ বা এই ধরনের মেলা যদি হয় বা অনুষ্ঠানগুলো যদি হয় তাহলে কিন্তু আমাদের যারা যুব সমাজ রয়েছে তারাও ভিন্ন পথে যাবে না। তারা বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য এবং বাংলা সংস্কৃতির প্রতিও আন্তরিক থাকবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়ারও প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি।

করোনার কারণে এবারের বই মেলায় আসতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী তার শিক্ষা জীবনে দিনভর বই মেলায় ঘুরে রেড়ানোর স্মৃতি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলে থাকার সময়ও তিনি বই মেলাতে গিয়েছেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবার পর নিরাপত্তার অজুহাতে পায়ে ‘শেকল পরা’তে তা আর সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে বিশষ অতিথি হিসেবে ১৫ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার বিজয়ী প্রত্যেক ৩ লাখ টাকার চেক এবং ক্রেস্ট লাভ করেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। আরো বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, কবিতায় আসাদ মান্নান ও বিমল গুহ; কথাসাহিত্যে ঝর্না রহমান ও বিশ্বজিৎ চৌধুরী, প্রবন্ধ/গবেষণায় হোসেনউদ্দীন হোসেন, অনুবাদে আমিনুর রহমান ও রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, নাটকে সাধনা আহমেদ, শিশুসাহিত্যে রফিকুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় পান্না কায়সার, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় হারুন-অর-রশিদ, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে শুভাগত চৌধুরী। আরও পুরস্কার পেয়েছেন আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে সুফিয়া খাতুন ও হায়দার আকবর খান রনো এবং ফোকলোরে পুরস্কার পেয়েছেন আমিনুর রহমান সুলতান।

আওয়ামী লীগ সবসময় পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসে আন্তরিক :
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা আমরা সবসময় পার্লামেন্ট প্র্যাকটিসে আন্তরিক ছিলাম। আমরা নিয়মিত হাউজে উপস্থিত থাকতাম। আর বিএনপির যারা সদস্য জামায়াত ও বিএনপি মিলে সরকার গঠন করেছিল, তারা সংসদে খুব একটা উপস্থিত থাকত না। গতকাল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের নিজস্ব জনবল নিয়োগ কার্যক্রম এবং ফোর্স পুনর্গঠনের মাধ্যমে এ বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লু-ইকোনমি ও গভীর সমুদ্র্রে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এ বাহিনীর রূপকল্প-২০৩০ ও ২০৪১ অনুযায়ী জাহাজ, সরঞ্জামাদি ও জনবল আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে আরো বিকশিত করার জন্য তার সরকারের দক্ষিণাঞ্চলে আরো একাটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী ভাষণে উল্লেখ করেন।

সরকার প্রধান বলেন, নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক সেটাও আমরা নৌবাহিনীর হাতে সমর্পণ করেছি। ভবিষ্যতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরো একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের আছে। আশা করছি, আমরা তা করতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা জায়গা পছন্দ করে রেখেছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শে অলাভজনক উল্লেখ করে খুলনা শিপইয়ার্ড ও বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর এই শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে অর্পণ করি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৩ বছরে কোস্ট গার্ডের জন্য বিভিন্ন আকারের ৭৭টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে কোস্ট গার্ডের জন্য দু’টি ইনশোর প্যাট্রোল ভেসেল, একটি ফ্লোটিং ক্রেন, দু’টি টাগ বোট এবং ১৬টি বোট তৈরি করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের ভেসেল ও জাহাজসমুহ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণর জন্য গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে। নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল চার কোস্ট গার্ড সদস্যকে তাদের সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বের জন্য পদক তুলে দেন।



 

Show all comments
  • অমিত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৫১ এএম says : 0
    যাক, নতুন ইতিহাস জানলাম
    Total Reply(0) Reply
  • Sajib Ahmed ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২৩ এএম says : 0
    অথচ আমি জানতাম তমদ্দুন মজলিস প্রথমে রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথা বলেছিল। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিকটা তুলে ধরার জন্য। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২৭ এএম says : 0
    সংস্কৃতিক জগৎ বা আমাদের শিল্প সাহিত্য জগৎ বা এই ধরনের মেলা যদি হয় বা অনুষ্ঠানগুলো যদি হয় তাহলে কিন্তু আমাদের যারা যুব সমাজ রয়েছে তারাও ভিন্ন পথে যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ujjal Siddeki ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২৮ এএম says : 0
    ভাষার গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল নিজের ভাষাকে গুরুত্ব দিলেই হবে না। অনুবাদ সাহিত্য যেন আরও ভালো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Kibria ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২৯ এএম says : 0
    একটি জাতি সবসময় উন্নতি করতে পারে ভাষা সংস্কৃতির উন্নতি হলে। প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে সংস্কৃতিসেবীদের ভূমিকা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ