Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙছে পরিবারের স্বপ্ন

বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা করোনাকালে ১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা দেশে প্রতিদিন এই পথ বেছে নিচ্ছে ১৩ জন : বিবিএস হতাশাগ্রস্তদের জীবনের মূল্য বোঝাতে হবে : প্রফেসর সালমা আক্তার প

খলিলুর রহমান ও রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:১০ এএম

নাজমুল আলম শাহ সেজান। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার নুরেরচালা এলাকায় তার বান্ধবীর বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সেজানের বাবা সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি সেজানকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। আমার ছেলেকে তারা মেরে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে বলছে আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ৩ ছেলের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। আমাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। সেজান ভাটারার কালাচাঁদপুর এলাকায় থাকত। সে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষ করে একজন ব্যবসায়ী হবে। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি সেই স্বপ্নটি নিভে গেছে।

শুধু সেজানের পরিবারের স্বপ্নই নিভে যায়নি। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, করোনাকালীন প্রথম ১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী যে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ৪২ জন শিক্ষার্থীই সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের, ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজের শিক্ষার্থী, ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। যারা এমন অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন তাদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আছেন সাতজন শিক্ষার্থী। কর্মসংস্থানের অভাব, পারিবারিককলহ, ব্যক্তিগত নানা কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করছেন বলে আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে।

শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, প্রতিদিনই নানা বয়সি নারী-পুরুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বছরে আত্মহত্যা করছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে যেমন শিক্ষার্থী আছে, আছেন বিত্তবানরাও। সম্প্রতি ঢাকায় ফেইসবুক লাইফে এসে আবু মহসিন খান নামের এক ব্যবসায়ীর নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। আত্মহত্যার আগে লাইভে যেসব কথা বলেছেন সেখানে উঠে এসেছে নগর জীবনের নিঃসঙ্গতার কথাও। একইভাবে গত বছরের ১৭ আগস্ট মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়ঘর এলাকায় সুমন নামের এক যুবক ফেইসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে ফেইসবুক লাইভে এসে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন পুবাইলের স্বপন চন্দ্র দাস নামের এক ব্যবসায়ী। ৭ ডিসেম্বর সবুজ সরকার নামে কুমিল্লার এক তরুণ ফেইসবুক লাইভে এসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

পুলিশ সদর দফতরের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় আত্মহত্যাজনিত অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ২ হাজার ১৬৬টি। বিবিএস বলছে, করোনার প্রথম বছর আত্মহত্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মোট আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৪ হাজার ৪৩৬টি। করোনার সময় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম মনে করেন আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। আর এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বের চিত্র। এর বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণেও মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিজেকে যখন কেউ অপ্রয়োজনীয় মনে করেন, জীবন অর্থহীন মনে করেন তখন আত্মঘাতী হন। তবে এইসব কারণের মূল উপাদান রাষ্ট্র ও সমাজেই বেশি। তিনি বলেন, এই করোনায় মানুষের সংকট বেড়েছে। বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে। জীবন নিয়ে সংশয় বেড়েছে। বেড়েছে দারিদ্র্য, হতাশা, শূন্যতা। এটা দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র নেয়নি। যার ফল আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়া। পরিবার রাষ্ট্র ও সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। কাউন্সেলিং-এর সুবিধা বাড়াতে হবে। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রধান তানসেন রোজ জানান, করোনার সময় তরুণদের মধ্যে বিচ্ছন্নতা, ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। আর পরিবারগুলো যারা আর্থিক চাপে পড়েছে তাদের চাপ পড়েছে পরিবারের তরুণ সদস্যদের ওপর। একাকিত্বে প্রযুক্তির অপব্যবহার তাদের চরম হতাশার মধ্যে ফেলেছে। যার নির্মম পরিণতি আমরা দেখেছি। এজন্য তরুণদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কউন্সেলিং ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। আর তাদের হতাশার জায়গাগুলো দূর করে তাদের সাহসি এবং আত্মবিশ্বাসী করতে হবে। তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী শুভজ্যোতি আত্মহত্যা করেছিলেন। ওইদিন রাজধানীর আদাবর মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১৪১ নম্বর বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুভজ্যোতির বোন তাপসী মণ্ডল ইনকিলাবকে বলেন, শুভজ্যোতির অনেক স্বপ্ন ছিল। সে বিসিএস ক্যাডার হয়ে চাকরি করবে; এমন স্বপ্ন নিয়েই লেখাপড়া করছিল। তবে হঠাৎ করে সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু বাহ্যিকভাবে সেটা দেখা যেত না। কয়েকজন ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ট্রিটমেন্টও করা হয়েছিল। কিন্তু ১৪ অক্টোবর সে আত্মহত্যা করে।

এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের ২৫তম ব্যাচের ছাত্র প্রীতম কুমার সিংহ আত্মহত্যা করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন তার পরিবার। প্রীতমের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকটা সহজ-সরল ছিলেন তিনি। তাই বারংবার পা দিত নিষ্ঠুরের জালে। তাকে নিয়ে তার মায়ের অনেক প্রত্যাশা ছিল। ছিল বোন ও বন্ধু-বান্ধবদেরও। তারা তাকে ছোটবেলা থেকেই উৎসাহ দিত ঢাবিতে চান্স পাওয়ার। তাদের উৎসাহে সে হতে পেরেছে একজন ঢাবিয়ান। কিন্তু সেই স্বপ্নে চিড় ধরে যখন কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে প্রীতম।

প্রীতমের বোন জানান, দাদা অনেক সহজ সরল ছিল, মানুষকে বুঝতে পারত না। তার প্রেমিকা তাকে অনেক প্রেশার দিত যা সে নিতে পারত না। সে ছিল প্রচণ্ড ভীতু প্রকৃতির আর ইমোশনাল। জীবনের শেষ সময়ে প্রীতমও বুঝতে পেরেছে তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই তো ফেসবুকে ক্ষমা লিখে আত্মহত্যা করেন। প্রীতমকে হারিয়ে তার অভাব পূরণের দায়িত্ব কাঁধে নেন তার বোন।

এছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে চানখারপুলের স্বপ্ন সিঁড়িতে আত্মহত্যা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী অপুর স্বপ্ন ছিল ডিপার্টমেন্ট টপার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। কিন্তু সিস্টেম তাকে জয়ী হতে দেয়নি। কিছুদিন সাংবাদিকতা করেও সিস্টেমের কাছে হেরে যান প্রতিবাদী এই শিক্ষার্থী। চেয়েছিলেন ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হন অপু। শেষমেশ সরকারি চাকরির পেছনে ছুটেন হাল না ছাড়া অপু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানামুখী হতাশার কাছে হার মানেন অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাহাজালাল হলের সামনের এস আলম কটেজ থেকে অনিক চাকমা নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়। এর আগে গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইমরুল কায়েসের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি রাবির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একইদিন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান জামিলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার লাশের পাশ থেকে ‘বাবা-মা ক্ষমা করো, গুড বাই’ লেখা চিরকুট পাওয়া যায়।

একই বছরের ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট এলাকার একটি বাসা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মঘাতী ওই ছাত্রের নাম মোহাম্মদ মেহেবুল্লাহ তৌসিফ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে একই বছরের ১৫ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কেটে আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলে যখন মানুষ আর কোনো আশার আলো দেখতে পায় না, তখনই আত্মহত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনারারী প্রফেসর ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, যখন কোনো মানুষকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয় এবং সফলতার মাপকাঠি ঠিক করে দেওয়া হয়, তখন মানুষ তার ব্যক্তিত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। মানুষ তখন আত্মহত্যাকে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের উপায় হিসেবে মনে করে এবং সে ভাগ্য দ্বারা এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করে থাকে।

তিনি বলেন, যখন কোনো সমাজে সংহতি থাকে না, মানুষ নিজেকে সমাজের একজন হিসেবে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় এবং সে একাকীত্বে ভোগে তখন আত্মহত্যাকে তাদের একাকীত্ব বা অত্যধিক ব্যক্তিত্ব থেকে মুক্ত করার সমাধান হিসেবে বেছে নেয়। যেমন সম্প্রতি ফেইসবুক লাইভে এসে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা এটার চরম উদাহরণ।
আত্মহত্যার প্রতিকার কী এমন প্রশ্নে প্রফেসর মাহবুব বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক সংহতি বিস্তারের মাধ্যমে মানুষের একাকীত্ব দূর করে কিছুটা কমানো সম্ভব।

একই বিভাগের প্রফেসর সালমা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, সাধারণত পারিবারিক দুর্দশা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সম্পর্কের টানাপড়েন ও ক্যারিয়ার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করে থাকে। করোনার বন্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে সহপাঠী ও শিক্ষকদের একটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ছিল, যে কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিষণ্নতায় ভুগত এবং আত্মহত্যাকে এর থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় মনে করত। এছাড়াও মাদকাসক্তি আত্মহত্যার বড় একটা কারণ হিসেবে দেখা যায়।

প্রফেসর সালমা বলেন, আত্মহত্যার পূর্বে প্রতিটি মানুষই একটা বার্তা দিতে চায় যে, আমার ভালো লাগছে না, মরে গেলেই ভালো হয় ইত্যাদি। এসব যখনই কোনো মানুষের মধ্যে দেখা যাবে, তখনই তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে জীবনের মূল্য কত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দান দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর মেহজাবীন হক ইনকিলাবকে বলেন, হতাশা, ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা এবং বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। সময়মতো এই ব্যাধিগুলোর যত্ন নেয়া গেলে, আমরা সহজেই আত্মহত্যার সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি। তিনি বলেন, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে আত্মহত্যাবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, তুমি তোমার পরিবারের জন্য বেঁচে থাকবে, ছেলে-মেয়ে থাকলে তাদের জন্য বাঁচবে আর মা-বাবা থাকলে তাদের জন্য বাঁচবে।

ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, যারা আত্মহত্যা করে তারা কেউই মৃত্যু কামনা করে না। বরং তাদের সাথে হওয়া অবিচার থেকে বাঁচতে তারা এটাকে একটা উপায় হিসেবে মনে করে। এদের মাঝে অধিকাংশ মানুষই শেষ সময়ে এসেও বাঁচতে চায়; কিন্তু সেই সুযোগটা তারা আর পায় না। তাই তাদের জন্য একটা কল সেবা চালু করা দরকার যার মাধ্যমে মানুষ চরম হতাশার মধ্যে একটু বাঁচার খোরাক পাবে। যেখানে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট থাকবে যে তাদেরকে জীবনের মূল্য বোঝাতে সক্ষম।

এদিকে, আত্মহত্যার ৭৩টি ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের তদন্তে জানা গেছে, পুলিশ ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাগুলোকে আত্মহত্যা বলা হলেও, সেগুলো ছিল আসলে হত্যাকাণ্ড।



 

Show all comments
  • Emran Howlader ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৩ এএম says : 0
    এটা হল গার্জিয়ান দের সমস্যা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছে স্মার্ট ফোন তাই এই জন্যই এই সমস্যা গুলো হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Ershad Nabil Khan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৪ এএম says : 0
    মূলত আরবান শহুরে এলিট, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে এ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ❗আরেকটি কথা না বলে পারছিনা, আত্মকেন্দ্রিকতা খুবই খারাপ একটা গুণ মনেকরি আমি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamraggee Roksana ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৪ এএম says : 0
    আসলে আমাদের নিজেদের নিঃসংগ ভাবনাটা বন্ধ করা জানতে হবে। নিজের একাকিত্বকে এনজয় করা জানলে, নিজের সংগকে ভালোবাসলে, নিজেকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে শিখলে অনেক কস্ট এড়ানো সম্ভব। দান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেও অনেক ভালো হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmus Shams ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৫ এএম says : 0
    ভাই, ঘুম থেকে উঠি একটা যন্ত্রের শব্দ শুনে, ঘুমাতে যাই সেই যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে। আর সারাদিন এই যন্ত্রের পাশাপাশি ইট পাথরের নির্জীব অনুভূতি শূন্য বস্তুর সান্নিধ্যে কাটে আমাদের সময়। আমাদের অনুভূতি সব নির্জীব হবে এটাই স্বাভাবিক। বেচে থাকার জন্যে অবাক হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শহর আমাদের অবাক হওয়া কেড়ে নিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ah Chanchal ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৫ এএম says : 0
    একা থাকা শিখুন। নিজের সাথে নিজের সময়কে উপভোগ করুন। একা থাকা খুবি ক্রিয়েটিভ কাজ মনে হয় আমার কাছে। এমন তো নয় যে যারা লোকজন সহ রীতিমত জনসভা নিয়ে ঘুরে বেরান তাদের একাকীত্ব নাই বা দুঃখ নাই। বরং একা থাকা সময়টি নানা কারণেই অনেক বেশি প্রডাক্টিভ হইতে পারে আপনি যদি এটা উপভোগ করা শুরু করতে পারেন। ছবি আঁকা শুরু করতে পারেন যারা ৯০এর আগেই নানা কারণে রিটায়ার্ড করেছেন কাজ থেকে। বা নানা ক্রিয়েটিভ কাজে যোগ দিতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Kefaytullah ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৬ এএম says : 0
    আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। আত্মহত্যার নিত্যনতুন রূপ সামনে আসছে। কেন এই প্রবণতা বাড়ছে? এককথায় হয়তো বলা যায়, মানুষের মাঝে ডিপ্রেশন বাড়ছে। মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে। সবকিছু থেকেও যেন কিছু নেই- এই অবস্থা ব্যাপক হচ্ছে। কারো যখন কোন কিছু হারিয়ে যায়। তখন যেনো কাছের মানুষগুলোও হারিয়ে যায়...! আল্লাহর কাছে ফিরে আসা ছাড়া এর কোন সমাধান নেই। তাই চলুন না! ফিরে চলি সেই মহান রবের কাছে যার সাথে সম্পর্ক হলে সকল শূন্যতা শেষ হয়ে যায়... সকল অপূর্ণতার পূর্ণ হয়ে যায়...
    Total Reply(0) Reply
  • Abdur Razzaque Akanda ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:২৬ এএম says : 0
    জীবনের অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব , উচ্চআশা পূরনে অনিশ্চয়তা ও প্রেমে হতাশায় এসব ঘটছে মনে হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৩৫ এএম says : 0
    মা বাবা কষ্ট করে অথবা সুখে থেকে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করান,কিন্তু করনার কারনে বাবা মা কি বলছেন যে তোমরা আত্মহত্যা করো,মা বাবা কখনও এই কথা বলবে না,এবং কি মা বাবা করনার কারনে অথচ আপচুস করবেন,ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত্ নিয়ে,কিন্তু ছেলে মেয়েরা চিন্তা করতে হবে করনা একটি আল্লাপাকের দেওয়া একটি গজব,সেখানে ছেলে মেয়েরা কি করা উচিত নামাজ কালাম ও ইবাদত করবেন,তাতে আল্লা পাক অবশ্যই হেফাজত করবেন,ছেলে মেয়েরা যদি সেটি না করে হায় হুতাশ আহা কি করি কি করমু ইয়াবা খাই নিশা করি অথবা খাই খাই রাতা রাতি বড় লোক হয়ে যাই,সে খানে এই দরনের ঘটনা হবে,যাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস নেই তারাই এই পথ বেঁচে নিয়ে থাকেন,এই দরনের ছেলে মেয়েদের এবং খাই খাই লোক দুনিয়া এবং আখেরাত দুই দিকে দোজখে ভাগী,এদের জন্য আপসোস করে কি লাভ,যেই কিছুতে দরয্য দরতে হবে,সরকারি চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরি বর্তমানে করনার কারনে সমস্যা সব ক্ষেত্রেই সেখানে দরয্য না ধরে আমি আত্মহত্যা করমু সেটা কি উচিত,ভারতে উচ্চ শিক্ষিত অনেক লোক দেখেছি তাহারা পয়োজনে রাজ মিস্ত্রির কাজ এবং বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন,তাতে কি ইজ্জত চলে গেছে তাতে কি তার পড়া লেখার মান চলে গেছে অবশ্য তাহার জীবন আরো সুখি হয়েছে সে দরয্য শীল একদিন শিক্ষার ফল আসবেই,যারা আল্লা কে ভয় করেন না এবং দরয্য দরতে রাজী নয় ,এঁদের ক্ষেত্রে এই রকম হবে,আপসোস করার পয়োজন নেই,আর মা বাবার ও বুঝতে হবে আসমানী গজব যেহেতু দুনিয়া এসেছে,সেখানে দরয্য আর ইবাদত ছাড়া অন্য কিছু করার নেই,এই আসমানী গজব পুরা পৃথিবীতে একা বাংলাদেশে নয়,সবাই দরয্য দরুন এবং ইবাদত করতে থাকেন,সব কিছু সমাধান আল্লা পাক করবেন,আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে,যদি তাই না করেন মনে যেমনে চায় তাই করেন কিছুই করার নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৪০ এএম says : 0
    মা বাবা কষ্ট করে অথবা সুখে থেকে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করান,কিন্তু করনার কারনে বাবা মা কি বলছেন যে তোমরা আত্মহত্যা করো,মা বাবা কখনও এই কথা বলবে না,এবং কি মা বাবা করনার কারনে অথচ আপচুস করবেন,ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত্ নিয়ে,কিন্তু ছেলে মেয়েরা চিন্তা করতে হবে করনা একটি আল্লাপাকের দেওয়া একটি গজব,সেখানে ছেলে মেয়েরা কি করা উচিত নামাজ কালাম ও ইবাদত করবেন,তাতে আল্লা পাক অবশ্যই হেফাজত করবেন,ছেলে মেয়েরা যদি সেটি না করে হায় হুতাশ আহা কি করি কি করমু ইয়াবা খাই নিশা করি অথবা খাই খাই রাতা রাতি বড় লোক হয়ে যাই,সে খানে এই দরনের ঘটনা হবে,যাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস নেই তারাই এই পথ বেঁচে নিয়ে থাকেন,এই দরনের ছেলে মেয়েদের এবং খাই খাই লোক দুনিয়া এবং আখেরাত দুই দিকে দোজখে ভাগী,এদের জন্য আপসোস করে কি লাভ,যেই কিছুতে দরয্য দরতে হবে,সরকারি চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরি বর্তমানে করনার কারনে সমস্যা সব ক্ষেত্রেই সেখানে দরয্য না ধরে আমি আত্মহত্যা করমু সেটা কি উচিত,ভারতে উচ্চ শিক্ষিত অনেক লোক দেখেছি তাহারা পয়োজনে রাজ মিস্ত্রির কাজ এবং বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন,তাতে কি ইজ্জত চলে গেছে তাতে কি তার পড়া লেখার মান চলে গেছে অবশ্য তাহার জীবন আরো সুখি হয়েছে সে দরয্য শীল একদিন শিক্ষার ফল আসবেই,যারা আল্লা কে ভয় করেন না এবং দরয্য দরতে রাজী নয় ,এঁদের ক্ষেত্রে এই রকম হবে,আপসোস করার পয়োজন নেই,আর মা বাবার ও বুঝতে হবে আসমানী গজব যেহেতু দুনিয়া এসেছে,সেখানে দরয্য আর ইবাদত ছাড়া অন্য কিছু করার নেই,এই আসমানী গজব পুরা পৃথিবীতে একা বাংলাদেশে নয়,সবাই দরয্য দরুন এবং ইবাদত করতে থাকেন,সব কিছু সমাধান আল্লা পাক করবেন,আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে,যদি তাই না করেন মনে যেমনে চায় তাই করেন কিছুই করার নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ