মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : স্মার্টফোন জানিয়ে দেবে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা। এমনই একটি অ্যাপ উদ্ভাবন করেছেন ব্রেকলি’র ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এই এনড্রয়েড অ্যাপটি ফ্রি পাবেন স্মার্ট ফোনের গ্রাহকরা। ‘মাই শেক’ নামের এই অ্যাপটি স্মার্টফোন বাহকদের আগাম জানিয়ে দেবে কোথায় ভূমিকম্প বা মানবসৃষ্ট এ ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। গত শুক্রবার অ্যাপটি চালু করা হয়।
স্মার্টফোন অ্যাপ ভূমিকম্পস্থলে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তিকে ভূমিকম্প আঘাত হানার আগে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যেই ভূমিকম্পের সতর্ক সংকেত দিতে সক্ষম। অ্যাপ প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পের তীব্রতার চিত্রও তুলে ধরতে সক্ষম। ফলে এ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা অগ্রিম সতর্কতার মাধ্যমে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারবেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-কম্পন বিদ্যা বিভাগের প্রধান গবেষক কিংকাই কং জানান, অ্যাপে ব্যবহৃত প্রযুক্তির সাহায্যে ভূমিকম্পের পূর্ব সতর্কতা হিসেবে অগ্রিম বার্তা পাওয়া যাবে। এই স্মার্ট ফোনটি আসলে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা যে ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন, এ ক্ষেত্রে ঠিক সেরকমই কাজ করবে। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষ কিভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সে বিষয়ে অনেক আগে থেকেই ভাবছিলেন।
অ্যাপটির মাধ্যমে আগাম বার্তা পাওয়া গেলেও ব্রিটিশ ভূ-তত্ত্ব জরিপ বিভাগের ভূ-কম্পন বিশেষজ্ঞ রজার মাসুন বলেন, এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন মানুষ ভূমিকম্পস্থল থেকে অল্প দূরে ঝুঁকিতে থাকবে। তিনি বলেন, আপনি যখন ভূমিকম্পস্থল থেকে ৩শ কিলোমিটার দূরে থাকবেন, তখন দু’ মিনিটের মধ্যে আপনি আগাম সতর্ক বার্তা পেতে পারেন। যদি আপনি খুব কাছাকাছি থাকেন, তখন এটি আরও দ্রুত আপনাকে সতর্ক বার্তা দেবে। তবে প্রশ্ন জাগতে পারে, কয়েক সেকেন্ড আগের সতর্ক বার্তায় আপনি কি করতে পারবেন।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগ মুহূর্তে স্মার্টফোন যদি সংকেত দিতে পারে তাহলে বহু ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাপা ভ্যালি এলাকায় গত বছর রিখটার স্কেলে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এ সময় প্রযুক্তি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান জোবোনের তৈরি ফিটনেস ট্র্যাকারের সেন্সরগুলো (সংবেদী) বার্কলে, ওকল্যান্ড এবং সান হোসে এলাকার মানুষের শরীরে ভূকম্পনজনিত পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়। এতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের আগ মুহূর্তে সেখানকার মানুষের ঘুমের ধরনে সকালের দিকে আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্মার্টফোন ও ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্যে সংগৃহীত এসব তথ্য-উপাত্ত কি পূর্বাভাস দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ? মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) বিভাগের গবেষকেরা বলছেন, ‘হ্যাঁ’। স্মার্টফোনে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমস) প্রযুক্তির সংবেদী বা সেন্সর থাকে। সেগুলো কোনো একটি দিকে আকস্মিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। যদি হাজার হাজার স্মার্টফোন একসঙ্গে একই পরিবর্তন শনাক্ত করে, তাহলে সেটাই হবে ভূমিকম্পের আগাম সংকেত।
ইউএসজিএসের বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ব্রুকস বলেন, কল্পনা করা যেতে পারে যে পোর্টল্যান্ড এলাকার একটি ক্যাফেতে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সবার স্মার্টফোন টেবিলের ওপরে রাখা। তখনই সেগুলো বড় ভূমিকম্পের সংকেত দিল। এতে সারা শহর দুলে ওঠার আগেই লোকজন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ পাবে।
বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে পরীক্ষা করে দেখেছেন, ভূমিকম্পের সময় এবং আগে ও পরে স্মার্টফোনের তথ্য-উপাত্ত ঠিক কেমন হয়। ওই কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে সান ফ্রান্সিসকোর হেওয়ার্ড ফল্ট জোনে সাত মাত্রার কল্পিত ভূমিকম্প ঘটানো এবং জাপানে ২০১১ সালে সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রকৃত তথ্য-উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, অন্তত পাঁচ হাজার স্মার্টফোন ব্যবহারকারী প্রস্তুত থাকলে বড় কোনো ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময়টা আগে থেকে জানার সুযোগ রয়েছে। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয় বিপর্যয় শুরু হওয়ার আগে পাঁচ সেকেন্ডের একটি সতর্কসংকেত দেয়া যাবে। তবে পাঁচ সেকেন্ড সময় খুব সামান্য মনে হলেও গবেষকেরা বলেন, সংকেত বাজানো, গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং দমকল বাহিনীর গ্যারেজের দরজা খুলে দেয়ার জন্য পাঁচ সেকেন্ডই যথেষ্ট।
গবেষকেরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ওপর ক্রমশ বেশি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ভূমিকম্পের পর ঘটনাস্থলে পৌঁছানো, তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার তথ্য বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়ে পূর্বাভাসের ব্যাপারে নানা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আর সর্বশেষ গবেষণায় ওই কাজে স্মার্টফোনের উপযোগিতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রুকস বলেন, ভূমিকম্প আসন্ন এমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা এড়ানোর জন্য কয়েক সেকেন্ডের সতর্কসংকেতই খুব ফলপ্রসূ হতে পারে। অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় ফায়ার স্টেশনগুলোর দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে, গ্যাস লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হবে এবং শহরের বাসিন্দারা আশপাশের কোনো ডেস্কের নিচে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারবেন। সূত্র : আল জাজিরা, নিউ সায়েন্টিস্ট, ইউপিআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।