Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাংবিধানিক পদধারীরা দুর্নীতি করলে ছাড় নেই

‘দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি’ হাজী সেলিম এমপির রায়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সাংবিধানিক পদধারী হলেও তাকে বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম এমপি’র বিরুদ্ধে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন। গত বুধবার প্রকাশিত ৬৬ পৃষ্ঠার এ রায়টি গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সুপ্রিম কোর্ট ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। রায়ে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ১০ বছর কারাদন্ডাদেশ বহাল রাখা হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট দুদকের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবিধানিক পদধারী বা নন পদধারী-তিনি যেই হোক না কেন, দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে তাকে বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।

আদালত বলেন, আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, এখন পর্যন্ত দুদক এ রকম হাজার দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর জন্য চেষ্টা থাকতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নির্ভর করে আছে।

রায়ে দুর্নীতিকে ‘মানসিক ব্যাধি’ আখ্যায়িত করে আদালত বলেন, এতে বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তি বিশেষ আসক্ত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে দুদক, বিচার বিভাগসহ সরকারি-বেসরকারি এবং আদালতের প্রধানরা সমন্বিতভাবে তাদের সতর্ক করে বার্তা দেবেন। যদিও এ কাজ কঠিন ও ঝুঁঁকিপূর্ণ। একজন সৎ ব্যক্তি একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু তারপরও দুর্নীতিমুক্ত জাতি ও সমাজ গঠনে এ কাজ শুরু করতে হবে।

প্রকাশিত রায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ১০ বছর কারাদন্ড বহাল রেখে তাকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১০ বছর কারাদন্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দন্ড থেকে খালাস পান তিনি। সেসময়ও রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। ওই দিন রায় ঘোষণার পর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ৩ বছরের কারাদন্ডদেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে তথ্য গোপনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, দুদক এ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু দুদক আইনের ২৭ (১) ধারা অনুসারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালত ১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগে তার সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশর রায় দেন আদালত।

এরপর বিচারিক আদালত যেদিন হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাবেন সেদিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলা হয়। একইসঙ্গে যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা দেয়া হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল রাখেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।



 

Show all comments
  • পারভেজ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৪২ এএম says : 0
    ‘দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি’ - হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণটি 100 ভাগ সত্যি
    Total Reply(0) Reply
  • MNI Khan ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:১১ এএম says : 0
    May Allah SWT keep your this spirit always. Others should follow this in all the courts of the country.
    Total Reply(0) Reply
  • Mulla Tashfin ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৪৮ এএম says : 0
    This is only in your moth, no reality our country
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ