Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নৌবন্দর থেকে প্রথম নৌ পথে পণ্য রপ্তানী

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৩৮ এএম

কুড়িগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার পথে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দর। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এই নৌবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ভ্যাসেল (নৌযান)। দু’দেশের মধ্যে আমদানী-রপ্তানী শুরু হওয়ায় দারিদ্রপীড়িত এই অঞ্চলের মানুষ স্বপ্ন দেখছে ভাগ্য পরিবর্তনের।
সোমবার ৭ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টায় চিলমারী নৌবন্দরের রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল নৌ পয়েন্ট থেকে সান আবিদ-১নামে একটি বাংলাদেশি ভ্যাসেল(নৌযান) ঝুট পণ্য নিয়ে ভারতের ধুবড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ভারত থেকে নৌ পথে চিলমারী নৌ বন্দরে পণ্য পরিবহণ খরচ তুলনামূলক কম। প্রায় ৬/৭মাস থেকে ভারত হতে চিলমারী নৌবন্দর এবং রৌমারী নৌঘাটে পাথর আমদানী হতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর এই প্রথম চিলমারী নৌবন্দর থেকে বাংলাদেশি নৌ পথে পণ্য ভারতে রপ্তানী করা হলো। রপ্তানীর প্রথম চালান হিসেবে ২৭টন ঝুট পণ্য নিয়ে লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের শান আবিদ-১ নামের একটি নৌযান চিলমারী নৌ বন্দর থেকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি নৌ বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শেরপুর তুলার মিল নামক রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান নৌ পথে এই ঝুট পণ্য রফতানি করল। বাণিজ্য সুবিধা বহাল থাকলে আগামীতে আরও পণ্য রপ্তানি বাড়বে দু’রাষ্ট্রের সাথে। দেশের হারানো ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নৌবন্দর ফিরেয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে চিলমারী সফরে এসে এই নৌবন্দর চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর একই বছর চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালিন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। চিলমারী নৌবন্দরের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া। এরই ধারাবাহিকতায় গতবছর থেকে ভারতের ধুবড়ি ট্রানজিট ব্যবহার করে ভুটান থেকে ক্রাস্টন পাথর ভ্যাসেলে করে প্রায় ৬মাস পূর্ব হতে আমদানী করছে বাংলাদেশ। প্রতিমাসে গড়ে ৩০টি ভ্যাসেলে করে প্রায় সাড়ে চার হাজার ক্রাস্টন পাথর আমদানী করা হয়ে থাকে। এই বন্দর পূর্ণাঙ্গরূপ পেলে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত অরুণাচল প্রদেশ,আসাম,মেঘালয়,মণিপুর,মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যসহ ভুটান,নেপালের সাথে পণ্য আমদানী- রপ্তানী সুযোগ বাড়বে।এতে করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দর।
স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ মিয়া বলেন,এই বন্দর ফির চালু হওয়ায় খুশি হামরা। হামরা এলা নৌবন্দরে কাম করি খাবার পামো। হামার এলাকার মধ্যে আর অভাব থাকবার নয়।
মফিজল হক বলেন,চিলমারী বন্দরের ইতিহাস দেশ-বিদেশের মানুষও কবার পায়। দেশে ভাগের পর অবহেলায় চিলমারী বন্দরটি হারিয়ে যায়। স্বাধীনের পর এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে মাল পাঠানো হলো ভারতে। হামরা খুব খুশি। এমন করি মালামাল যাওয়া আসা করলে এলাকার ও দেশের উন্নয়ন হইবে।
নৌ শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন,আমদানী-রপ্তানী শুরু হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। তবে নদীতে পানি কম থাকায় সময় বেশি লাগছে। ধুবড়ি যেতে আমাদের ৭/৮ ঘন্টা লাগে। নদীর গভীরতার জন্য খনন করা গেলে আমার সময় ও অর্থ কম লাগবে।
চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী-বীরবিক্রম বলেন,আমি ঐতিহাসিক মুহুর্তের স্বাক্ষী হলাম। দেশ ভাগের পর ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ আমার জীবদ্দশায় আবারও আমদানী- রপ্তানী শুরু হওয়া ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন হলো আজ। এখন দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার চিলমারী নৌবন্দরের।
লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর মমিন বলেন,ভারত থেকে আমদানী পূর্বে শুরু হলেও প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি কার্যকম শুরু করতে পারায় খুশি আমরা। আসামের সাথে নৌ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন রপ্তানী উপযোগী পণ্য আমদানী-রপ্তানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি। কেননা আসাম একটি বড় বাজার। এই বাজারটি আমরা ধরতে পারলে খুব সহজেই পণ্য আনা নেয়া সম্ভব হবে।
রাজস্ব কর্মকর্তা তাপস কুমার সাহা বলেন, চিলমারী নৌ বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে আমদানী-রপ্তানী আরও বেগবান হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চিলমারী নৌ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রপ্তানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ