পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন আইন পাসের পর গতকাল নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের এ কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করবেন। গতকাল শনিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আইন ও সংবিধান অনুসারে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব। কমিটির অপর সদস্যদের নিয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসব।
৬ সদস্যের সার্চ কমিটি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সুন্দর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর বিএনপি থেকে বলা হয়েছে এ কমিটিতে আগ্রহ নেই, এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট অনুমোদন করার পর জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’-এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগদানের জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করা হলো। অনুসন্ধান কমিটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ মোতাবেক দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পন্ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, এর আগেই নতুন ইসি গঠন করা হবে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনীত করার পর প্রেসিডেন্ট তা চূড়ান্ত করেন। তবে এবার নতুন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হলো।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুমোদন দেয়া হয়। ১০ দিন পর ২৭ জানুয়ারি বিলটি জাতীয় সংসদে পাস এবং ২৯ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট আইনটিতে সম্মতি দেন। ৩০ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’- এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি (অনুসন্ধান কমিটি) গঠন করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। আইন অনুযায়ী, আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। ১০ জনের মধ্য থেকেই ৫ জনকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
দায়িত্ব পাওয়ার পর সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগের থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম বলে আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। যখন নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম, তখন বিষয়টা ঠিক ছিল। এখন আর আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই আমার নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। আমি যখন যে কাজ করেছি, বিবেকের কাছে পরিষ্কার থেকে, নিরপেক্ষতার সঙ্গে করেছি। কখনো কোনো কিছুতে পক্ষপাতদুষ্ট ছিলাম না। আমি সারাজীবন যেকোনো কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রেও তাই করব। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা মনে করি অনুসন্ধান কমিটি, নির্বাচন কমিশন সবই সরকারের অধীন। এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। নির্বাচন কমিশন নয়, জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। কারণ, এটা প্রমাণিত, এই সরকারের অধীন কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি, হবে না। তাই এই মুহূর্তে অনুসন্ধান কমিটি, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ইসি গঠন আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে সাংবিধানিক পদধারীদের এবং একজন নারীসহ সুশীলসমাজেরও দু’জনকে রাখা হয়েছে। তারা যে অত্যন্ত গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে অতীতে ভূমিকা রেখেছেন, তা সবাই স্বীকার করবেন। আমি মনে করি, সুন্দর একটি সার্চ কমিটি হয়েছে, তাদের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে বাংলাদেশে একটি সুন্দর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিটিতে চারজন সদস্যের নিয়োগ আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করেই দেয়া। আর দু’জন বাইরের। একজন কথাসাহিত্যিক অন্যজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার। আপাত দৃষ্টিতে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। এখন বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়; বিষয়টি হচ্ছে এমন। এরা যাদের অনুসন্ধান করে বের করবেন, তাদের নাম যেন প্রকাশ করা হয়। সরকারের বলে দেয়া নাম দিলে হবে না। একজন ব্যক্তির নাম প্রকাশ হলে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা মানুষই জানাবে। তাই নাম প্রকাশ করা খুব প্রয়োজনীয়।
সিপিবি’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, নতুন আইনি প্রক্রিয়ায় এবার যে ইসি গঠন করা হবে সেটিও অতীতের মতোই সরকার প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা ১৬ আনা রয়েছে। সার্চ কমিটি কী করবে? প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া প্রেসিডেন্ট কিছুই করতে পারবেন না। এটা প্রধানমন্ত্রীর হাতেই রয়ে গেছে। এই আইনটাই ত্রুটিপূর্ণ। অন্যান্যবার যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় ইসি হয়, এবারও সেটাই হতে যাচ্ছে। মাঝখানে জনগণকে দেখানো ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে, এখানে সরকারের কোনো হাত নেই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, প্রজ্ঞাপনটি দেখেছি। খুব ভালো হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রত্যাশা থাকবে একটি সুন্দর নির্বাচন কমিশন গঠনে তারা সৎ, যোগ্য লোককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে নামের তালিকা দেবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার নীলনকশা। নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি হোক আর যে কমিটিই হোক এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আমরা মনে করি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সার্চ কমিটি হোক আর যে নির্বাচন কমিশনই হোক, এ সরকার থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। সুতরাং সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির কোনো ইন্টারেস্ট নেই। তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও ভাবি না।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোটের নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। সেটা জাতির জন্য একাধারে দুঃখজনক ও হতাশাজনক। জাতির চাহিদা ও সংবিধানকে উপেক্ষা করে নিজস্ব চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে সরকার তড়িঘড়ি করে একটা আইনের অধীনে এই সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে আবারো আমাদের হতাশাগ্রস্ত করেছে। যেহেতু সরকার তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় সেজন্য এই সার্চ কমিটির ওপর জনগণের আস্থা নেই বললেই চলে। এখন যারা এই কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো জাতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।