Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রমজানের প্রাক প্রস্তুতির মাস রজব ও শাবান খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১৩ পিএম | আপডেট : ৫:৪৫ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

পবিত্র রজব মাস থেকেই রমজানের ক্ষণ গননা শুরু হয়। কারণ রজব ও পরবর্তী শাবান মাস হলো ইবাদতের বসন্তকাল পবিত্র রমজানের প্রাক প্রস্তুতির মাস। রজব মাস শুরু হলেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া খুব বেশি করে পড়তেন হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। আজ জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকেই বাইরে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রজব ও পরবর্তী শাবান মাস হলো ইবাদতের বসন্তকাল পবিত্র রমজানের প্রাক প্রস্তুতির মাস। শারীরিক, মানসিক এবং নেক আমল ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রজব মাস শুরু হলেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া খুব বেশি করে পড়তেন "আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়া বাল্লিগনা রমাজান।" অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। (মিশকাত, হাদীস নং-১৩৬৯)।
খতীব আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার প্রবনতা মহামারির রূপ ধারণ করেছে। আত্মহত্যা মহাপাপ এবং জঘন্যতম কবীরা গুনাহ। যারা ডিপ্রেশন, জেদ, নিঃসঙ্গতা ঘুচাতে কিংবা পার্থিব জীবনের দুঃখ দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বাঁচতে আত্মহননের মতো ভয়াবহ পথে পা বাড়ায়। তারা যদি বুঝতো এর ভয়াবহ শাস্তির কথা তাহলে কোনভাবেই এই পথে পা দিতো না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মহত্যাকারীর পরকালীন কঠোর আজাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী ও সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে খুব শিগগিরই অগ্নিতে দগ্ধ করবো। এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)। আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদীসেও কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসূল সা. বলেন, 'কোন ব্যক্তি যে জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, কেয়ামতের দিন তাকে সে জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে, সে দোজখেও সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ ( সুনান নাসাঈ)। অন্য আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. আত্মহত্যাকারীর প্রতি প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে তার জানাযার নামাজ পর্যন্ত পড়েননি। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা, সুন্নাহ মোতাবেক আমল এবং সবরের আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করেন, আমীন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেন, মহান রবের দয়া ও করুণা যে, তিনি মহামারি করোনার মাঝে মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রজব মাসে উপনীত করেছেন। রজব এটি নাম ও অর্থগতভাবেই প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস। এ মাসের মর্যাদা উপলব্দি করতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা অন্তরের) জমিন চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে মনের) জমিন আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি) রজব মাসটিকে মহান আল্লাহ তায়ালা যাবতীয় যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘আল্লাহ তায়ালার আসমান জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই বারো মাসে বৎসর হয়। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং চতুর্থটি হলো ‘রজব মুদার’, যা জমাদিউল আখিরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (মুসলিম) মর্যাদার এ মাসটি মুমিন মুসলমানের ইবাদতের মাস। বরকত লাভের মাস। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমড়ে কাপড় বেঁধে এ মাসের ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত হতেন। রোজা রাখতেন এবং বেশি বেশি বরকত পেতে দোয়া পড়তেন; তাঁর উম্মতকেও দোয়া পড়তে বলতেন। তিনি বলতেন ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান মাস আমাদের নসিব করুন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। মাসজুড়ে হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারামের খতীব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা আজ জুমার বয়ানে বলেন, ঈমান এমন একটি সম্পদ যা ছাড়া পরকালে কারো মুক্তি পাওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। কারণ ঈমানই হলো মূল ভিত্তি বা ফাউন্ডেশন। অথচ মুসলিম নামধারি কিছু লোক ছিটাফুটো কিছু ভাল কাজ করে পরকালে কামিয়াবির আশায় বসে থাকে। তারা প্রতিনিয়ত: ঈমান বিধ্বংষী কাজ করে আবার দাবি করে আমরাই ভাল মুসলমান। তারা তাদের মূল আক্বিদা ও বিশ্বাস ঠিক না করে নিজেদেরকে মুসলিম বলে। কিছু লোক এসে নবিজী (সা.) এর নিকট ঈমান এনেছে বলে দাবি করলে নবিজী (সা.) বললেন তোমরা বড়জোর মুসলিম হয়েছো এ কথা বলতে পার। আল্লাহ তায়ালা আমাকে জানিয়ছেন যে, তোমাদের এখনো ঈমান আনা হয়নি। কারণ ঈমান এতো হালকা বিষয় নয়। যে ঈমান এনেছে সেতো সম্পূণরুপে আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মসমর্পন করেছে। অত:পর তার দ্বারা আল্লাহ তায়ালার হুকুম বিরোধী তথা তাঁর বিধানাবলীর বিরুদ্বে এক চুল পরিমাণ বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত: যে বা যারা আল্লাহ তায়ালার বিধানের বিপরীতে নিজেদের ইচ্ছামত বিধান চালু করে থাকে তারা দু' একটি ভাল কাজ করে পরকালে মুক্তির আশা করা এক অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের চিন্তাতো দূরে থাক নিজেদের ইচ্ছা বা তাদের নেতাদের ইচ্ছা বা আকাঙ্খার বাস্তবায়ন নিয়ে জীবনটা বিলিয়ে দিচ্ছে তাকি একবারও তারা ভেবে দেখেছে। যাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজই ঈমান বিধ্বংষী তারা কোন দিন আলোর এবং মুক্তির পথ দেখবেনা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, " কেবল মাত্র মুমিনরাই সফলকাম (দুনিয়া ও আখিরাতে)। তাই ঈমান না থাকলে মুসলিম হওয়া যায়না। এজন্যই তেরটি বছর রাসূল (সা.) কে ঈমানের মেহনত করতে হয়েছে মক্কাতে। খতীব আরো বলেন,ঈমানের ফাউন্ডেশন তৈরীর পর ইসলামের বিধান দেয়া হয়েছে, তথা নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য বিধান। ইসলামের কিছু নমুনা দেখানোর পর ঈমানের দাবীদারদের বলে দেয়া হয়েছে তোমাদের এখনও ঈমান আনা হয়নি। সুতরাং ঈমানকে সঠিক করে অর্থাৎ আল্লাহর সমীপে পূর্ণ আত্মসমর্পন করে ইসলামের বিধান মানা হলে সেই হবে পূর্ণ মুমিন ও মুসলিম। ধর্মের দু' চারটি বিধান পালন করেই মুসলমান বলে যতই নিজেকে ভাল মুসলমানের দাবি করা হোক না কেন তার নাজাতের যে কোন সম্ভাবনাকে আল্লাহ তায়ালা নাকচ করে দিয়েছেন। সতরাং ঈমান সম্পর্কে আগে জানা এরপর মানা বা আমলের কাজ করা জরুরি। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন। দিনাজপুর গোর এ শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমা পূর্ব খুৎবার বয়ানে বলেন, উম্মতের একটি বড় দায়িত্ব ও সম্মান হলো অন্যদেরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া। আজ সমাজে মাদকের ছড়াছড়ি, প্রত্যেকেই যদি একটু করে মানুষকে মাদকের খারাবি সর্ম্পকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝানো যায় তা’হলে সমাজে অনেকটা পরিবর্তন আসবে। মহান আল্লাহ পাক বলেন,, হে মুমিনগণ। নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা, ও ভাগ্য নির্ণায়ক, শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য। অতএব তোমরা এগুলো পরিহার করো। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। অবশ্য শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। অতএব তোমরা কি নিভৃত হবে না? (আল কোরআন) হযরত আবু দারদা রা. বলেন, আমার হাবিব রাসূল (সা.) বলেছেন, মদ্যপান করো না, কেননা তা হচ্ছে সকল পাপের চাবি। আল্লাহ আমাদের সন্তানদের এবং আপনাদের প্রজন্মকে মাদক মুক্ত সমাজ দান করুক। আমীন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ