Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘটনাস্থল পটুয়াখালীর গলাচিপা কাঠ পুড়িয়ে চলছে ইটভাটা

তিন ভাটার জমির মালিকানা ছাড়া নেই কোনো কাগজপত্র

জাহাঙ্গীর কবির, গলাচিপা (পটুয়াখালী) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিভিন্ন স্থানে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে তিনটি ইট ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইট ভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কারণে নির্গত ধোয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ধোয়ায় অতিষ্ঠ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ কয়েক হাজার মানুষ। প্রশাসন ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার এক সমপ্তাহ পর ফের চালু করেছে ইট ভাটাগুলোর মালিক পক্ষ। চর বিশ্বাস ইউনিয়নের সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসার পাশে সিকদার ব্রিকস, গেলাখালী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের সততা ব্রিকস ও একই ইউনিয়নের মায়ের দোয়া ব্রিকফিল্ডে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। সরেজমিনে জানা গেছে, এই ইটভাটা তিনটির জমির মালিকানা ছাড়া কোন কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেই। চর বিশ্বাস ইউনিয়নের সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসার পাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে ৮ বছর ধরে সিকদার ব্রিকস ফিল্ডে ড্রাম চিমনি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার আশপাশের গ্রামে প্রায় দুই হাজার লোক বসবাস করে। ইট পোড়ানো কাঠের ধোয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোয়ায় অতিষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ধোয়ায় চারপাশের অনেকে শাসকষ্টে ভুগছেন। এর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না সাধারণ মানুষ কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ২০১৯ সালের মে মাসে উপজেলা প্রশাসন সিকদার ব্রিকস ফিল্ডের ইটভাটার চিমনি ভেঙে দেয় এবং ইটভাটার মালিককে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে অদৃশ্য কারণে প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আবারো অবৈধভাবে সিকদার ব্রিকস ফিল্ডে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে দেয়। এলাকাবাসী গত ২১ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ইটভাটা বন্ধের আবেদন করেন।
সিকদার ব্রিকস ফিল্ডের ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, ইটভাটা চালানোর জন্য মোটামুটি কাগজপত্র আছে। তবে একশ’ ভাগ নাই। ভাটার মালিক বলতে পারবে কী কী কাগজ আছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নে সততা ব্রিকস ও মায়ের দোয়া ব্রিকসের ইটভাটার চিমনি ভেঙে দেয়া হয়। গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম গত ৩১ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুটি ভাটার চিমনি ভাঙাসহ ভাটার মালিকপক্ষকে মোট তিন লাখ নগদ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। কিন্তু এর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারো কাঠ দিয়ে ইট পোড়া শুরু করে দেয়।
গোলখালী মেসার্স সততা ব্রিকসের অংশিদার শহীদ মীর বলেন, আমরা এ বছরই নতুন শুরু করেছি। সত্য কথা বলতে আমাদের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। ইটভাটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে।
মায়ের দোয়া ব্রিকসের অংশীদার মো. মঞ্জু ঢালী বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা লোকসান দিয়ে আসছি। এ বছর পরিবেশ অধিদফতরে গেছিলাম। তারা ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর কথা বলেছেন। আমরা ঝিকঝাক পদ্ধতিতে যাওয়ার জন্য কিছু ইট পুড়ছি। প্রাইমারি স্কুলের পাশে ইট পোড়ালে শিশুদের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের চুল্লি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা অফিসের পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শেখ মেহেদী বলেন, চরবিশ্বাসের সিকদার ব্রিকস, গোলখালী ইউনিয়নের মায়ের দোয়া ব্রিকস ও সততা ব্রিকসের কোন অনুমতি পত্রই নেই। অবৈধভাবে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইট ভাটা তিনটির চিমনি ভেঙে দেয়া হয়।
গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ইট ভাটা তিনটি অবৈধভাবে চালিয়ে আসছিল। এদের জমির কাগজ ছাড়া অন্য কোন কাগপত্র নেই। খবর পেয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে তিনটি ইট ভাটার চিমনি ভেঙে দেই এবং নগদ অর্থদণ্ড করি। ভাটা তিনটি আবার ইট পোড়ানোর খবর পেয়েছি। আমরা আবারো কঠিন ব্যবস্থা নেবো।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাটা

১১ এপ্রিল, ২০২২
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ