Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের অজানা তথ্য

প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের পাশাপাশি মার্কিনীরাও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবে তা জানার জন্য। নির্বাচনের পরেই জানা যাবে বিশ্বের শক্তিশালী এই দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কে হচ্ছেন? ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন না কি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। উত্তেজনাময় এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলোও বসে নেই। প্রতিনিয়ত এই নির্বাচন নিয়ে খুঁটিনাটি বিভিন্ন তথ্য পাঠকদের সামনে হাজির করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যতিক্রমী কিছু অজানা তথ্য উল্লেখ করা হলো। এত দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ এবং পরিচ্ছন্ন নির্বাচন ছিল ১৭৮৯ সালের নির্বাচন। এটি দেশটির ইতিহাসের প্রথম নির্বাচন। এই নির্বাচনে যারা অংশ নিয়েছিলেন সবাই নির্দলীয় প্রার্থী ছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনিই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি শতভাগ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান। মার্কিন প্রেসিডেন্টরা অভিষেকের দিন কোনো বাইবেল অথবা বই ব্যবহার করবেন তা নিজেরাই বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দুটি বাইবেল বেছে নিয়েছিলেন। একটি সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের অপরটি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের। ১৮৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ইউলিসিস এস. গ্রান্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন একজন প্রাণহীন মানুষের সঙ্গে। অর্থাৎ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিউ লিবারেল রিপাবলিকান পার্টির হোরাস গ্রিলি নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই মারা যান। তবে নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে গ্রান্ট জয়ী হন। ১৮৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেসে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এতে আফ্রিকান-আমেরিকানসহ অশ্বেতাঙ্গ পুরুষদের ভোটের অধিকার দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি উত্তরের কয়েকটি রাজ্য ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটাধিকার প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৭২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ভোট দিতে যাওয়ার অপরাধে সুজান বি. এন্থনি নামে একজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময়ে সোজৌরনার ট্রুথ নামে সাবেক একজন ক্রীতদাসী এবং মানবাধিকার কর্মীও মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ভোটের দাবি জানান। অবশেষে ১৯২০ সালে মার্কিন নারীরা ভোট দেয়ার অধিকার অর্জন করেন। ১৯২৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস নেটিভ আমেরিকানদের (রেড ইন্ডিয়ান) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার দেয়। তবে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত কয়েকটি রাজ্যে তাদের ভোটাধিকার নিষিদ্ধ ছিল। মনে হতে পারে, হিলারি ক্লিনটনই বোধহয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একমাত্র নারী প্রার্থী যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করছেন। তবে বিষয়টি আসলে তা নয়। তার আগেও ২০১২ সালে অ্যামি এবং গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জয়ী অভিনেত্রী রোজেন বার গ্রিন টি পার্টির টিকিটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীরা কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেন। কিন্তু দেশটির ইতিহাসের প্রথম নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ওয়াশিংটনের নির্বাচনি প্রচারণার বাজেট ছিল ১৬০ গ্যালন মদ। তিনি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এই মদ ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের এখনকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে নভেম্বর মাসের প্রথম দিন মঙ্গলবার হলে কিন্তু চলবে না। তবে ১৮০০ সালের শুরুর দিকে মার্কিন নাগরিকরা এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট দিতে পারতেন। বর্তমানের ভোট দেয়ার দিনটি ১৮৪৫ সালের কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একাদশ প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের অভিষেক পার্টি এতোটাই বিশাল এবং উন্মত্ত ছিল যে, যুদ্ধজয়ী অকুতোভয় এই সেনানী হোয়াইট হাউজ থেকে পালিয়ে একটি হোটেলে গিয়ে সেই রাত কাটাতে বাধ্য হন। সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থী নরম্যান থমাস সবচেয়ে বেশিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ৬ বার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে একবারও নির্বাচিত হতে পারেননি। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প এবং হিলারি একে অপরকে ধরাশায়ী করার জন্য কতকিছুই না বলছেন। সর্বশেষ ট্রাম্প, হিলারিকে ন্যাস্টি ওম্যান বা জঘন্য মহিলা বলে উল্লেখ করে সমালোচিত হন। তবে ১৭৭৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থমাস জেফারসন তার প্রতিদ্বন্দ্বী জন অ্যাডামসকে কথার জোরে ঘায়েল করার জন্য গোপনে একজন লেখক নিযুক্ত করেন। জেমস ক্যালেন্ডার নামের ওই লেখক অ্যাডামসকে হার্মাফ্রোডিটিক্যাল ক্যারেকটার হিসেবে অভিহিত করেন। যার অর্থ হলো, জন অ্যাডামসের পুরুষদের মত ক্ষমতাও নেই, এমনকি নারীদের মত ন¤্রতাও নেই। আমরা হয়তো অনেকেই জানি, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতীক হচ্ছে গাধা। দলটির জন্য এই প্রতীক নির্বাচন করেন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডরু জ্যাকসন। তার সমালোচকরা তাকে গর্দভ হিসেবে অভিহিত করার পর, তিনি নির্বাচনি শ্লোগানের পাশাপাশি গাধার ছবি ব্যবহার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে এতোটাই অপছন্দ করতেন যে, তিনি প্রায়ই অভিযোগ করতেন, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য মনোনীত হয়েছেন জর্জ ওয়াশিংটন। কারণ কক্ষের মধ্যে তিনিই যে কারো চাইতে দীর্ঘদেহী ছিলেন। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনের উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত মার্চের ৪ তারিখের আগে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শপথ নিতে পারতেন না। ভোট গণনায় দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এই দেরি হতো। অবশ্য প্রযুক্তির উন্নতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ২০তম সংশোধনীর মাধ্যমে ২০ জানুয়ারি শপথ অনুষ্ঠান নির্ধারণ করা হয়।
১৯৬৮ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিচার্ড নিক্সন এমন একজনকে তার রানিংমেট হিসেবে চেয়েছিলেন, যিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে তিনি অপরিচিত একজন রাজনীতিবিদ স্পাইরো অ্যাগনিউকে রানিংমেট বেছে নেন। সাংবাদিকরা যখন অ্যাগনিউ’র নাম উল্লেখ করে তার ব্যাপারে মানুষজনের কাছে জানতে চান, তখন একজন ব্যক্তি সাংবাদিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এটা কি কোন রোগের নাম? আরেকজন ব্যক্তি মতামত দেন, এটি হয়তো এক ধরনের ডিম। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী স্টিফেন ডগলাস তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী আব্রাহাম লিংকনকে দুমুখো ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু লিংকন ক্ষিপ্ত না হয়ে বরং বেশ মজা করেই তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। কুৎসিত দেখতে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেছিলেন, আমার যদি আরেকটা চেহারা থাকতো, তাহলে আমি কি এই চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম? যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রথম ভোটিং মেশিন ব্যবহৃত হয় ১৮৯২ সালে। ১৯২০ সালের নির্বাচনে তৃতীয় একটি পার্টির প্রার্থী ইউজিন ভি. ডেবস কারাগার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করায় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। অবশ্য তিনি শতকরা তিন ভাগ পপুলার ভোট পান। অভিষেকে সবচেয়ে কম শব্দের বক্তৃতা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। বক্তৃতায় মাত্র ১৩৫টি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তিনি। অথচ অভিষেকে সবচেয়ে বড় বক্তৃতা দেয়ার খেসারত হিসেবে নিজের জীবন দিতে হয়েছিল দেশটির চতুর্দশ প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনকে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের অজানা তথ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ