Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুশফিকের বিষাদময় হার

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগের দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে তামিম ইকবাল বলেছিলেন, এখানে ২২০ রানের লক্ষ্যও তাড়া করে জেতা সম্ভব। দিনের প্রথম ম্যাচে রানটা একটু কমই হয়। তবু ১৪১ রানের লক্ষ্য কঠিন হওয়ার কথা নয় খুব বেশি। কিন্তু সেটাই খুলনার ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায় বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ও রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমানের বোলিংয়ে। ওপেনিংয়ে ফিরে ক্রিস গেইলের ঝলকের পরও লক্ষ্যটা নাগালেই রাখতে পেরেছিলেন থিসারা পেরেরা, মেহেদি হাসানরা। তবে বোলিংয়ে তাদেরও যেন ছাড়িয়ে গেলেন মুজিব-রানারা। তাদের নৈপুণ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্সকে হারাল ফরচুন বরিশাল। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে জিতেছে সাকিব আল হাসানের বরিশাল।
ইনিংসের প্রথম ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে খুলনাকে নাড়িয়ে দেন মুজিব। ১৯তম ওভারে তিন উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে ১২৪ রানে থামিয়ে দেন রানা। ওই ওভারের আগ পর্যন্ত ম্যাচ ছিল দোদুল্যমান। শেষ দুই ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ২১ রান, উইকেট ছিল ৩টি। তখনও ক্রিজে মুশফিকুর রহিম। কিন্তু এক ওভারে স্রেফ ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে বরিশালকে জিতিয়ে দেন রানা। শেষ উইকেটটি ছিল খুলনার শেষ ভরসা মুশফিকেরই। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা মেহেদি রানা। গত বিপিএলে বড় চমক ছিল তার বোলিং। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে শুরুতে জায়গা না পেলেও পরে নেমেই দারুণ বোলিং করে ১০ ম্যাচে নেন ১৮ উইকেট। সেবারও চট্টগ্রামে নিজের প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৩ রানে ৪ উইকেট, এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত যা ছিল তার সেরা বোলিং।
অথচ ম্যাচটা নাগালেই চলে এসেছিল খুলনার। শর্ট ফাইন লেগে কোমরে হাত দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন গেইল। মেহেদী রানার ১৯তম ওভারের শেষ বলে সেই গেইলের মাথার ওপর দিয়ে চার মারতে চেয়েছিলেন খুলনা দলপতি মুশফিকু। কিন্তু স্কুপ শটটি ব্যাটে-বলে না হওয়ায় ব্যাট ছুঁয়ে বল গেল উইকেটকিপার নুরুল হাসানের গ্লাভসে। মুশফিকের আউটটি ছিল খুলনার ইনিংসের সর্বশেষ উইকেট। তখনো খুলনার ইনিংসের এক ওভার বাকি। কিন্তু এক ওভার বাকি থাকতেই ১৭ রানে হারতে হলো খুলনাকে। মুশফিক আউট না হলে শেষ ওভারে বরিশালের ছুড়ে দেওয়া ১৪২ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার চেষ্টা করতে পারত খুলনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মুশফিকের স্কুপ শটের প্রয়োগটা যে ঠিকমতো হলো না। খেলা শেষে মুশফিক অনেকটা হতাশামাখা কণ্ঠেই বলছিলেন, ‘এই উইকেটে এমন রান তাড়া করা যেত। আমার মনে হয়েছে, ওরা ১৬০ রান করবে। কিন্তু আমরা ওদের ১৪০ রানে থামাতে পেরেছি। সে জন্য আমাদের বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হয়। কিন্তু আমরা রান তাড়া করতে পারিনি জুটি গড়তে না পারার কারণে।’
বরিশালের বোলিংয়ের বিপক্ষে খুলনার ব্যাটসম্যানদের বেশ কিছু সিদ্ধান্তও মুশফিককে অবাক করেছে। এদিনই এবারের বিপিএলে বরিশালের জার্সিতে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেছেন আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব। ইনিংসের শুরুতেই প্রতিপক্ষ দলের সেরা বোলারকে খুলনার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচার মারতে গিয়ে আউট হন। বাঁহাতি সৌম্য সরকারও ব্যাকফুট থেকে মুজিবকে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লুর শিকার হন। মুশফিককে এ দুজনের আউট নিয়ে একটু হতাশই শোনাল, ‘আমি বুঝতে পারিনি ওদের পরিকল্পনাটা কী ছিল। মুজিব ওদের সেরা বোলার। তাঁকে আক্রমণ করার কারণটা বুঝতে পারিনি।’
মুজিবকে নিয়ে প্রতিপক্ষ সাবধানী হলেও ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া বোলিং করেছেন তরুণ বাঁহাতি পেসার মেহেদী। নিজের শেষ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে মুশফিকদের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন এই পেসার। ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। আরেক তরুণ বাঁহাতি শফিকুল ইসলামও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে থিসারা পেরেরার উইকেট নিয়ে বরিশালের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ান। ম্যাচ শেষে সাকিবও তাই পেসারদের প্রশংসা করলেন, ‘আমাদের দুই পেসারই দারুণ বোলিং করেছে। এই উইকেটে পেসারদের জন্য ভালো করা সহজ নয়। তবে পরিকল্পনা যা ছিল, ওরা সেটির সঠিক বাস্তবায়ন করেছে।’
এদিন খুলনার আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে বরিশাল। সেটিও এসেছে উদ্বোধনে নামা গেইলের ৩৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসের সৌজন্যে। বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যস্ত ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। খুলনার থিসারা পেরেরা ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২টি উইকেট। মেহেদী হাসানের অফ স্পিন থেকে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান নিয়েছে বরিশাল, মেহেদীর শিকার ১টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফরচুন বরিশাল : ২০ ওভারে ১৪১/৯ (গেইল ৪৫, নাজমুল ১৯, হৃদয় ২৩; কামরুল ২/৩০, মেহেদী ১/১৮, শরিফউল্লাহ ১/২৭, থিসারা ২/১৮, প্রসন্ন ১/২৮, ফরহাদ ২/১৮)। খুলনা টাইগার্স : ১৯ ওভারে ১২৪ (মেহেদী ১৭, মুশফিক ৪০, ইয়াসির ২৩, থিসারা ১৯; মুজিব ২/২২, সাকিব ১/২৪, লিন্টট ২/১৯, মেহেদী রানা ৪/১৭)। ফল : বরিশাল ১৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : মেহেদী হাসান রানা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুশফিকের বিষাদময় হার

৩০ জানুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ