Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নের গভীর সমুদ্রবন্দরে ৫৩ জাহাজের নোঙর

মিলিয়ন ডলার অর্থ ও সময় সাশ্রয় ‘মাতারবাড়ী হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার’

শফিউল আলম ও শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

অর্থনীতির গেটওয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে জ¦ালানি, বিদ্যুৎ, সমুদ্রবন্দর, শিল্প-কারখানা, অর্থনৈতিক জোনসহ বিভিন্ন খাতের মেগাপ্রকল্প ও নিয়মিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। কালামার ছড়া-সোনারপাড়ায় সিপিপি-চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরো বিপিসির আওতাধীন চট্টগ্রামের পতেঙ্গাস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারি লি.-এর (সিঙ্গেল পয়েন্ট ডবলমুরিং) এসপিএম এবং ডাবল পাইপলাইন নির্মাণ কাজ করছে। ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরজন্য বিশাল স্টোরেজ ট্যাংক, ১৮ ইঞ্চি ও ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে। আগে এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে চীন সরকারের ৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি।

হোয়ানক ধলঘাট পাড়ায় পেট্রোবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. (বিজিটিসিএল)-এর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) স্টেশন নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে মহেশখালী-পেকুয়া, চট্টগ্রামের আনোয়ারা হয়ে সরাসরি পাইপলাইনে সীতাকুণ্ডে জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে গ্যাস। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। শাপলাপুরে নির্মিত হবে আরেকটি এলএনজি স্টেশন। মহেশখালীতে গড়ে উঠছে জ্বালানির বড় হাব। এখানে ভাসমান ও স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল। থাকবে বড় এলপিজি টার্মিনাল। মহেশখালীর ধলঘাটে দুটি এলএনজি টার্মিনাল হবে। তাছাড়া ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হবে। তিনটি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হবে। বিপিসির মালিকানায় মাতারবাড়ীর ধলঘাটে এলপিজি টার্মিনাল নির্মিত হবে বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে।

মাতারবাড়ী, মহেশখালী মেগাপ্রকল্পের প্রয়োজনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলপথ। এ প্রকল্পে সাড়ে ৪শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে সরাসারি রেলপথে কন্টেইনার ঢাকা আইসিডি’তে পরিবহন করা যাবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে নকশা প্রণয়নের কাজও শেষ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত হবে এ রেলপথ। এর অর্থায়নের জন্য দাতা সংস্থা অন্বেষণের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

মহেশখালী দ্বীপের ঘটিভাঙা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭২ একর জমিতে বেজা’র উদ্যোগে ৭টি অর্থনৈতিক জোন নির্মিত হবে। এর সাথে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, সুপার ডাইকযুক্ত টেকসই বেড়িবাঁধসহ মহেশখালী হবে অন্যতম উন্নত অর্থনৈতিক এলাকা। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎপ্রকল্পের কাজ ৪২ ভাগ কাজ এগিয়েছে। এক তৃতীয়াংশ ব্যয়ও বেড়েছে। এছাড়া পিডিবির তত্ত্বাবধানে হোয়ানক ও কালারমারছরায় আরো ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী, ধলঘাট, সোনাদিয়াকে কেন্দ্র করে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মহেশখালীর রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সার্বিক উন্নয়নের পাশপাশি মহেশখালী একটি মেগাসিটিতে পরিণত হবে।

২০১০ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) জরিপ ও গবেষণায় মহেশখালী দ্বীপের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সঙ্গে জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে মাতারবাড়ীতে একটি বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাবনা উদ্ভাবিত হয়। বিগত ১০ মার্চ’২০২১ইং একনেক কর্তৃক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এখন পুরোদমে নির্মাণ কাজ চলছে। জাইকার ঋণ সহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার টাকাসহ মেগাপ্রকল্পে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিচ্ছে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোদমে চালু হবে ২০২৪-২৫ সালে। তবে এর আগেই মাতারবাড়ী বিদ্যুৎপ্রকল্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে জাহাজ আসা-যাওয়া ও ভিড়া শুরু হয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মেগাপ্রকল্প ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির গেইমে’র পরিণতিতে পরিত্যক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মাতারবাড়ীতে নতুন করে আশা জাগরুক করেছে।

বিগত ২৯ ডিসেম্বর’২০ইং পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প’ প্রথম নোঙর ফেলে। জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুৎপ্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে এসে এখানে খালাস করে। নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর জেটি-বার্থে গত এক বছরে ৫৩টি জাহাজ ভিড়েছে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে। প্রায় ৮২ হাজার মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন ও খালাস বাবদ ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে ৩৮ লাখ ডলার। লাইটার জাহাজ ভাড়া, শিপিং ডেমারেজ, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পরিবহন ভাড়া বাবদ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং সময় সাশ্রয় হয়েছে। এক বছরে ৫৩টি জাহাজ জেটি-বার্থে ভিড়ানো, ঘোরানো, নোঙর, আসা-যাওয়াকালে (ম্যানুভারিং) কোন ধরনের অঘটন কিংবা ব্যত্যয় হয়নি।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জেটি-বার্থে ভবিষ্যতে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনার বোঝাই এবং ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থে সর্বোচ্চ ১২শ’ কন্টেইনার নিয়ে ৯ মিটারেরও কম ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল ২৫০ মিটার প্রশস্ত, ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ মিটার গভীরতা (ড্রাফট) সম্পন্ন। সেই সঙ্গে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চ্যানেল চওড়াসহ গভীর সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম।

মাতারবাড়ী নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দর বিদেশি বিনিয়োগকারী, দাতাদেশ ও গোষ্ঠির কাছে গুরুত্বের শীর্ষে রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি উচ্চাশা ব্যক্ত করেছেন, ‘মাতারবাড়ী হবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার, অর্থাৎ যুগান্তকারী উন্নয়নের চাবিকাঠি’।



 

Show all comments
  • ash ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১২ এএম says : 0
    THANK YOU JAPAN !
    Total Reply(0) Reply
  • Saddat Mollik Shyamol ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
    Corruption bondho na hole jonogoner Kono lav e hobena.
    Total Reply(0) Reply
  • শামছুল হুদা ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 0
    আওয়ামী লীগ উন্নত করবে কিন্তু তা ভোগ করতে পারবে না। কারণ তখন হয়তো ক্ষমতায় থাকবে অন্য দল। আর জনগণকে বাঁশ দিয়ে যে উন্নয়ন হয় সেটা জনগণ কোনোদিন মনে রাখেনা। ইতিহাস সাক্ষী।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kalam Azad ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 0
    এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Anowar Hossain ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ এগিয়েযাবে বাংলাদেশ
    Total Reply(0) Reply
  • Fazlul Bari Chowdhury ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১০ এএম says : 0
    congratulations to japanease representatives to choice our Bangladesh to palaning for establishing factory in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply
  • Shafiqur Rahman ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১০ এএম says : 0
    We want most of development contribute of japanese
    Total Reply(0) Reply
  • Tufail Ahmed ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১০ এএম says : 0
    বদলে যাবে এটা ঠিক, কিন্তু পরিবর্তন টা ঠিক কি রকম হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট ভাবতে হবে , বর্তমান থেকে যা বোঝা যায়, বেচে থাকাটা কতটা কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Biplob Mahbub ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১০ এএম says : 0
    এটা অবশ্যই ইতিবাচক, যুগান্তকারী, সুদূরপ্রসারী মাইলফলক
    Total Reply(0) Reply
  • Md Zaynal Abedin Sikder ২৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১১ এএম says : 0
    জাপান আমাদের উন্নয়নের সত্যিকারের বন্ধু ও সহযোগী সেটা দীর্ঘকাল ধরে পরীক্ষিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ