পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আগামীর বন্দর’। এই অঙ্গীকার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ‘বে-টার্মিনাল মেগাপ্রকল্প’। দেশের প্রধান বন্দরের জন্য এটি অপরিহার্য। পোর্ট-শিপিং খাতে অপার সম্ভাবনাময়। অথচ বে-টার্মিনাল ‘পরী’ এবং ‘কল্পনা’র মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে না হতেই থমকে আছে। সরকারি মহলের সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি। অন্যদিকে বর্তমান অবকাঠামো নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
দৈনিক প্রায় ৫০ হাজার ইউনিট কন্টেইনার ধারণক্ষমতা, বার্ষিক প্রায় ৩১ লাখ কন্টেইনার ও সোয়া ১০ কোটি মেট্রিক টন খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিং এবং জোয়ার-ভাটা নির্ভর চ্যানেল দিয়ে কম ড্রাফটের জাহাজবহর আসা-যাওয়া করতে গিয়ে বন্দর হিমশিম অবস্থায় পড়ছে। আছে টার্মিনাল, ইয়ার্ডসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতা। পোর্ট-শিপিং খাতে বর্তমান সময়ের দাবি পূরণ কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে লাগোয়া পতেঙ্গা-হালিশহর উপক‚লে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে আগামী পঞ্চাশ এমনকি একশ’ বছরের চাহিদা সামাল দেয়ার উপযোগী সম্প্রসারিত নতুন সমুদ্রবন্দর অর্থাৎ বে-টার্মিনাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে ৯৩৯ একর ভূমি, চর ভরাট করে আড়াই হাজার একর জমিতে বে-টার্মিনালের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
সেখানে বর্তমান প্রাকৃতিক সুবিধা সম্পন্ন চ্যানেলের সাথে কৃত্রিম চ্যানেল সৃজনের জন্য ড্রেজিং এবং সাগরে ব্রেক ওয়াটার উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যমান বন্দরের তুলনায় গভীর এই বন্দরটি গড়ে তোলা হবে। এর প্রভ‚ত অর্থনৈতিক ও কারিগরি সুযোগ-সম্ভাবনা দেখেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণ বড় এলাকাজুড়ে সম্প্রসারিত বন্দর ‘বে-টার্মিনাল’ কার্যক্রম পরিচালনা এবং বৃহাদাকারের জাহাজ ভিড়ার সুযোগ রয়েছে। অনায়াসে ভিড়তে পারবে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। মেগা প্রকল্পটিতে প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু বে-টার্মিনাল কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার মূল রূপরেখা এখনও চ‚ড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। ঝুলছে সিদ্ধান্তহীনতায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ বিপাকে। অথচ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রকল্পে বিনিয়োগে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেমন- জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, সউদী আরব, ভারত, আরব আমিরাত।
গত ২০ ডিসেম্বর-২০২০ইং চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়া হবে। অন্যদিকে চিটাগাং চেম্বার, পোর্ট ইউজার্স ফোরামসহ বন্দর ব্যবহারকারীগণ দেশের সুষ্ঠু আমদানি-রফতানি প্রবাহ বজায় রাখা, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ জাতীয় স্বার্থেই আর কালবিলম্ব না করে বে-টার্মিনাল নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম ইনকিলাবকে জানান, বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরজন্য বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো যাচাই করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্দরের দক্ষতা-সক্ষমতা বাড়াতে নতুন যান্ত্রিক সরঞ্জামবহর সংগ্রহ, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)সহ ইয়ার্ড নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এগিয়ে চলছে।
প্রায় ৯শ’ কোটি টাকায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজনীয় ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে ৪টি কী গ্যানট্্ির ক্রেন, শত টনী ভারী মোবাইল ক্রেন, ১১টি আরটিজিসহ ১৮টি যান্ত্রিক সরঞ্জাম আগামী জুনের মধ্যে সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে। পিসিটি নির্মাণসহ বন্দর ইয়ার্ডের এরিয়া বাড়ানো হচ্ছে। অবকাঠামো সুবিধাসমূহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দরের জনবলের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরফলে দক্ষমতা আরও বাড়বে।
স্বপ্নের গভীর সমুদ্রবন্দর
বঙ্গোপসাগরের কোলে-কিনারে মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ভ‚-কৌশলগত অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ ও সুবিধাজনক। তা সত্তে¡ও একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের ‘অভাব’ রয়েই গেছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর তা পরিপূরণ করবে এমনটি আশাবাদী পোর্ট-শিপিং সার্কেল ও বন্দর ব্যবহারকারীগণ।
‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি) উদ্যোগে’র আওতায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার মাতারবাড়ী পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কেন্দ্র, অর্থনৈতিক জোন, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) গবেষণা ও সার্ভের মধ্যদিয়ে মাতারবাড়ী উপদ্বীপে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের উপযোগিতার দিকটি উদ্ভাবিত হয়। জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে নির্মিত হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দরটি। বিগত ১০ মার্চ-২০২০ইং প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর মেগাপ্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জাইকার ঋণ বাবদ আসছে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা, তদারক ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গভীর সমুদ্রবন্দরটি গড়ে উঠলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ হ্রাস, তুলনামূলক বৃহৎ আকারের ও গভীরতা সম্পন্ন (ড্রাফট) আধুনিক কন্টেইনার জাহাজ, খোলা সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ, জ্বালানি তেলবাহী ট্যাঙ্কারবহর জেটিতে ভিড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৩শ’ এবং ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দু’টি টার্মিনাল থাকবে। সেখানে ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউএস কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের চেয়ে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না।
তাছাড়া জোয়ার-ভাটার সময়ের ওপর নির্ভর করেই চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি-বার্থে জাহাজ আসা-যাওয়া করে। বৃহদাকারের জাহাজসমূহ (মাদার ভেসেল) চট্টগ্রাম বহির্নেঙরে মালামাল লাইটারিং পদ্ধতিতে খালাস, পরিবহন করতে গিয়ে খরচ ও সময় লাগে বেশি। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ১৬ মিটার গভীরতার (ড্রাফট) এবং একত্রে ৮ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রকল্প পরিচালক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম জানান, জাপানের অর্থায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ২৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের নিপ্পন কোয়ে কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে গত ২৩ সেপ্টেম্বর-২০২০ইং চুক্তি স্বাক্ষর হয়। গত ১৬ নভেম্বর তারা আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে। নিপ্পন কোয়ে ডিজাইন, সুপারভিশন, মনিটরিং ও টেন্ডার ডকুমেন্টে সহায়তা করবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর-২০২০ইং পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প’ প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ হিসেবে মাতারবাড়ী নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত নির্ধারিত জেটিতে ভিড়েছে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজটি। এর মধ্যদিয়ে স্বপ্নপূরণের পথে প্রাথমিক ধাপ এগিয়ে গেল মাতারবাড়ী।
যা বাংলাদেশের শুধুই নয়; দক্ষিণ এশিয়ায় এবং বিশ্ব পোর্ট-শিপিং মানচিত্রে ও ইতিহাসে স্থান করে নিয়ে মাতারবাড়ীর স্বপ্ন যাত্রা শুরু। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম বলেন, মাতারবাড়ীতে আরও চমক অপেক্ষা করছে। শিগগিরই সেখানে চ্যানেল দিয়ে ভিড়বে ১৬ মিটার ড্রাফটের বৃহৎ জাহাজ। জোয়ার-ভাটা নির্ভর ছাড়াই গভীর চ্যানেলে জাহাজ আসা-যাওয়া ও বার্থিং করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।