পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবে-অর্থনীতি। ‘আবেনোমিকস’ (আবে+ইকোনমিকস)। আবেতত্ত্ব। তিন বছর যাবত এ কথাটা জাপানীদের কাছে বহুল পরিচিত এমনকি নন্দিত। উন্নত সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র জাপান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় দূরদর্শী আর জাদুকরী নেতৃত্বদানে সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। শিনজো আবে এক ভিন্ন ধাঁচের অথচ বলিষ্ঠ অর্থনীতির পথ ধরে হাঁটছেন। সেটিই ‘আবে-অর্থনীতি’ (আবেনোমিকস বা আবেতত্ত্ব) হিসেবেই জাপানীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চমক দিয়েছে বিশ্বকেও। হঠাৎ ঝড়ের মতো গত ২২ অক্টোবর (রোববার) এক মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন আবে। আর সেই জনপ্রিয়তার উপর ভর করেই বলবান বিরোধী দলকে তিনি উড়িয়ে দিলেন। সমরশক্তির পেছনে ব্যয়বৃদ্ধি ও আরো কয়েকটি ইস্যুতে সমালোচকদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পেলেন। টানা তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ী হলো তার দল দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এরফলে শিনজো আবে জাপানে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী। জনগণের কাছে আস্থা জোরালো হয়েছে আবের উদারপন্থী নেতৃত্ব দেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। পররাষ্ট্রনীতি, বিনিয়োগ-শিল্পায়ন, বাজার অর্থনীতিসহ বহির্বিশ্বে শিনজো আবের অর্থনৈতিক নীতি-পদ্ধতি জাপানীদের মাঝে শুধুই নয়; উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহের কাছেও বিশেষ আকর্ষণ এবং ভূয়সী প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রদত্ত শিনজো আবের বহুমুখী ও বড়সড় অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে সূচনা হয়েছে। এখন নতুন উদ্যমে হিসাব-নিকাশের পালা শুরু হয়ে গেছে। যা শুভ বার্তা বহন করছে।
বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান-
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের জন্য শিনজো আবের তৃতীয় দফায় ধসনামানো বিজয় এক বিশাল প্রত্যাশা ও উজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। এর পেছনে দুইটি প্রধান প্রেক্ষাপট রয়েছে। এক. বাছাইকৃত উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শিনজো আবের কাছে বিনিয়োগ-শিল্পায়নে সহযোগিতায় গুরুত্বের শীর্ষে রয়েছে। তার বৈদেশিক বিনিয়োগ-নীতি উদারমুখী। দুই. প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালের সেই ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরকালে সুবিশাল অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, মেগাপ্রকল্প এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করে যান। এর আগে-পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে দ্বি-পাক্ষিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিগন্তগুলো গুরুত্বের সামনে চলে আসে। জাপানে আবের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার সুবাদে বাংলাদেশে খাতওয়ারি সেসব প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন প্রয়োজন এই অনুকূল সুযোগকে দূরদর্শী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সহকারে কাজে লাগানো। অন্যথায় সুযোগ-সম্ভাবনার ফসল বাংলাদেশের ঝুড়িতে তোলার আগে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ জাপানের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু। এ মুহূর্তে জাপানী সহযোগিতার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রটি হচ্ছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে নির্মাণাধীন এলএনজি-এসপিএম টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎমেগা প্রকল্পসহ ‘জ্বালানি হাব’, বহুমুখী সমুদ্র বন্দর এবং অর্থনৈতিক জোন, শিল্পাঞ্চল, উপশহর সমেত সুবিশাল অবকাঠামো উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। ‘দি বিগ-বি’ অর্থাৎ ‘দি বে অব বেঙ্গল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল বেল্ট’র আওতায় এই অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। ‘বিগ-বি’ হচ্ছে বাংলাদেশ এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগ-শিল্পায়নের লক্ষ্যে জাপান সরকারের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক বলয় (ব্লক) তৈরির পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এর নেপথ্যের মূল থিংক ট্যাঙ্ক। আর তা বাস্তবে রূপদান করতে যাচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জাইকা। মহেশখালী মাতারবাড়ী মেগাপ্রকল্প ও প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে সরেজমিনে ব্যাপক গবেষণা, প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জাইকা। আর এভাবেই ধারাবাহিক কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জাইকার প্রকৌশলী, গবেষক ও কর্মকর্তারা। দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো বিনির্মাণ অনেকগুলো খাতে জাইকার এ যাবত অংশগ্রহণমূলক সফল ভূমিকা রয়েছে। মাতারবাড়ী মেগাপ্রকল্প ও প্রকল্পবহরের সাথে যুক্ত আছেন বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাগণ। নিবিড় তদারকি করছে অর্থ, পরিকল্পনা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহ এবং বন্দর-সুবিধার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সম্পদ ও সম্ভাবনার আধার বঙ্গোপসাগরের কোলে পাহাড় আর সমতল নিয়ে কক্সবাজারের দ্বীপ জনপদ ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী জাপানী কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় পরিণত হতে চলেছে উন্নয়ন-অগ্রগতির ‘নিউক্লিয়াস’ বা কেন্দ্রবিন্দুতে। এর উপদ্বীপ মাতারবাড়ীকে ঘিরে গড়ে উঠছে মেগাপ্রকল্পের বহুমাত্রিক অবকাঠামো সুবিধাদি। যা বাংলাদেশকে মধ্যআয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ভবিষ্যতের এক মিনি সিঙ্গাপুরের মতোই সেখানে পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠবে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ও জ্বালানি তেল টার্মিনাল (এসএমপি), কয়লাভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির বিদ্যুৎপ্রকল্প এবং বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন গভীর সমুদ্র বন্দর। থাকবে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন জোনসহ একটি উপশহর। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ‘দি বিগ-বি মহাপরিকল্পনা এবং ‘বাংলাদেশ-জাপান কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ’ সমঝোতার ভিত্তিতে মাতারবাড়ীর মেগাপ্রকল্প অবকাঠামো বিনির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছে জাপান। আর জাপানী সংস্থা জাইকার রূপরেখা অনুসারেই সবকিছু এগিয়ে চলেছে। জ্বালানি হাব, বহুমুখী বন্দরসহ বড়সড় অবকাঠামো বিনির্মাণে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ অন্তত আড়াই লাখ কোটি টাকা। বিনিয়োগের উপযোগী অবকাঠামো তৈরি হলে জাপান ছাড়া চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। সেসব দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সাথে যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রকল্প-পরিকল্পনা সরকারের কাছে পেশ করছে একের পর এক। এতসব কিছুর মধ্যদিয়ে আশা করা হচ্ছে, আগামী ৫ বছর থেকে এক দশকের মধ্যে মহেশখালী মাতারবাড়ীর সাথেই বিশ্বে নতুন রূপে পরিচিতি লাভ করতে পর্যটন শহর কক্সবাজার। দেশের অর্থনীতি হবে সবল-সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ-জাপান : ‘ভাই-বোনের সম্পর্ক’
বিগত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ইং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরটি ছিল দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং প্রকৃত অর্থেই ‘ঐতিহাসিক’। সফরকালে তিনি সুস্পষ্ট আশ্বাস দিয়ে যান, বাংলাদেশে বিনিয়োগে জাপানী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবেন। আর ভূ-রাজনৈতিক কারণেও বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে জাপান। জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে একে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগ-বি’ অর্থাৎ ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ হিসেবে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বের দাবি রাখে। তখন দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠকে শিনজো আবে বলেছিলেন, ‘জাপানের নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশ। জাপানের মন্দামুখী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাই। আর সে কারণেই বাংলাদেশ সফর করছি।’ বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও উন্নত করার আহ্বান জানিয়ে আবে আশ্বস্ত করেন, জাপানী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক হচ্ছে দুই ভাই-বোনের সম্পর্ক। বাণিজ্যকে বেগবান করতে উভয়দেশের ব্যবসায়ীদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।’
এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মে মাসে জাপান সফর করেন। এ সফরকালে ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে ৬০০ কোটি ডলার জাপানের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। শেখ হাসিনার টোকিও সফরের চার মাসের মধ্যে শিনজো আবের উপরোক্ত সফরটি ছিল এক যুগেরও বেশি সময় পর জাপানের কোন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্বন্ধ দীর্ঘকালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। উন্নত দেশসমূহের মধ্যে জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। গোড়া থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে আছে জাপান। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাপানের অবদান অনস্বীকার্য। এই প্রেক্ষাপটে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যআয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য অর্জন করতে চায় সেক্ষেত্রে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে জাপান। আবের সেই সফরের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ও গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। তা হলো- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্যপদে জাপানের পক্ষে বাংলাদেশের প্রর্থিতা প্রত্যাহার। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২৬ মে ২০১৬ইং জাপানে আরেক দফায় চারদিনের সফরে যান। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরকালে সহযোগিতার আশ্বাস এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মে ’১৬-এর সফর ছিল গুরুত্ববহ। এরআগে ১৯৯৭ ও ২০১০ সালে তিনি জাপান সফর করেন। ধারাবাহিক সফর বিনিময়ের ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে তা সুদূরপ্রসারি সুফলের হাতছানি দেয়।
শিনজো আবের নেতৃত্বের চমক
৭৩ বছর বয়সী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশকে বিজ্ঞোচিত অর্থনৈতিক নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে একের পর এক চমক দেখিয়ে চলেছেন। বিশ্বে তাক লাগাতে সক্ষম হচ্ছেন। তার সাফল্যেও পালকে নতুন সংযোজন এবার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা লাভ। কেননা তার এলডিপি জোট ফের জয়ী হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনরত সরকারপ্রধান হলেন শিনজো আবে। ২০১২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর এ নিয়ে দুই দফায় আগাম নির্বাচন দিলেন তিনি। এরআগে ২০১৪ সালেও আগাম নির্বাচন ডাকেন। তখন জাপানে অর্থনৈতিক সংস্কারে তার পদক্ষেপ জনগণ সমর্থন করছে কিনা তা যাচাই করতে নির্বাচন দেন। গণরায়ে আবের পালা হয় ভারী। এবারও পার্লামেন্টের মেয়াদ পূরণের এক বছর আগে একই উদ্দেশে আগাম নির্বাচন ডাকেন তিনি। মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয় এলডিপি-ত্যাগী টোকিও সিটির প্রথম নারী গভর্নও ইউরিকো কোইক’র নেতৃত্বাধীন আলোচিত নয়া কিবো নো তো’র (পার্টি অব হোপ) সঙ্গে। আবের রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নীতিসহ নানাবিধ মতবিরোধে কোইক দল ছাড়েন। আর কাগজে-কলমে প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) নেতৃত্বাধীন জোটও ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয়। আবের সকল বিরোধী পক্ষ মিলে জনসমর্থন পায় তিন ভাগের এক ভাগেরও কম।
অথচ আবে বিরোধীরা হিসাব কষেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর ‘আবেনোমিকস’ (আবে+ইকোনমিকস) বা ‘আবে-অর্থনীতি’ দেশকে এগিয়ে দেবে বলে এলডিপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানো হলেও ভ্যাট ও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় এবার জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়ে পড়বে। এরমধ্যে উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা দুইটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে সাগরে পড়ে এবং সামরিক উত্তেজনা নিরসনে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন শিনজো আবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই তিনি নিজের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে আগাম নির্বাচন দেন। আর বিরোধীদের হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণিত করেই বিশাল জয় তার হাতে ধরা দিল ফের। বিশ্ব রাজনীতির বোদ্ধাদের ধারণা, চলতি বছরের শুরু থেকেই অর্থনীতিতে তার দৃঢ় সংস্কার ও উন্নয়নের পদক্ষেপ এবং উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তার জনসমর্থন আরও বেড়ে চলে। অবশেষে আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি পরীক্ষার চ্যালেঞ্জে নেমে, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৪৬৫টি আসনের মধ্যে শিনজো আবের ক্ষমতাসীন এলডিপিসহ শরিক বা মিত্র দলগুলো মিলে ৩২৩ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করেছে।
আর মাত্র এক মাস আগে নতুন দল (কিবো নো তো) গঠন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে ইরিকো কোইক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমরা ভাল করব, কিন্তু পারিনি। জনগণের কাছে যা প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলাম তার জন্য আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। আমি এ ভোটের রায় মেনে নিচ্ছি।’ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মাইহারাও জনগণের রায় মেনে নেন। শিনজো আবে ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো এলডিপির টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। এরআগে তিনি কোবে স্টিল কোম্পানির কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৬ সালে কয়েক মাসের জন্য এলডিপির হয়ে প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ২০১২ সালে তিনি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ‘আবেনোমিক্স’ বা ‘আবেতত্ত্ব’ দেশটির অর্থনীতিকে আরও বেশি চাঙ্গা করবে বলে অঙ্গীকার দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন। এরপর গত গত ২৮ সেপ্টেম্বর আবে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ইতিপূর্বে সাধারণ নির্বাচনের ভোটারদের ন্যূনতম বয়স ২০ বছর থাকলেও এবারই প্রথম জাপান সরকার তা ১৮ বছরে নির্ধারণ করে। যা নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করেছে। নির্বাচনে শিনজো আবে বয়স্কদের জন্য সুরক্ষা ও উত্তর কোরিয়াকে দমন করার প্রত্যয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান। বিজয় নিশ্চিত হলে শিনজো আবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই বিজয় আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। জাপানের জনগণের সুরক্ষায় আমরা একযোগে কাজ করবো।’
বিশিষ্ট শিল্পপতি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর্জা আবু মনসুর বাংলাদেশ-জাপান অধিকতর সম্পর্কোন্নয়ের ব্যাপারে গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে ইনকিলাবকে জানান, এর মধ্যদিয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ জাপানের বিশাল আকারের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, শিল্পায়ন দ্বারা আমরা অনেকভাবেই লাভবান হতে পারি। জাপানে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার ফলে শিনজো আবের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশে জাপানের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আবারও মহাসুযোগ এনে দিয়েছে। তা কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ীতে জাইকার গবেষণা, রূপরেখা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে শুধু কক্সবাজার কিংবা দক্ষিণ চট্টগ্রামেই নয়; বৃহত্তর চট্টগ্রামে জ্বালানির চাহিদা পরিপূরণ হবে। এরফলে জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়নে আকৃষ্ট হবে। এর সুফল পেতে আমাদের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া উচিৎ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।